মানসিকতা বদলালেই কমবে দুর্ঘটনা: পুলিশ

সব সময়ে দুর্ঘটনা চালকের দোষে হয় না। কিন্তু এটা ঠিক, আমাদের বাসে বাচ্চা ছেলেমেয়েরা থাকে, দুর্ঘটনা হলে টেনশন হয় খুব— বলছিলেন স্কুলবাস চালক প্রভাস দাস। এমন ঘটনায় পড়তে হয়েছে তাঁকেও।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৬ অগস্ট ২০১৬ ০০:১৬
Share:

সব সময়ে দুর্ঘটনা চালকের দোষে হয় না। কিন্তু এটা ঠিক, আমাদের বাসে বাচ্চা ছেলেমেয়েরা থাকে, দুর্ঘটনা হলে টেনশন হয় খুব— বলছিলেন স্কুলবাস চালক প্রভাস দাস। এমন ঘটনায় পড়তে হয়েছে তাঁকেও। প্রভাসবাবুর কথায়, ‘‘এই তো বছরখানেক আগে এক দিন আমার সামনের গাড়িটা হঠাৎ দাঁড়িয়ে পড়ায় আমি কোনও রকমে ব্রেক কষে গাড়ি দাঁড় করিয়েছিলাম। কিন্তু তাতেও দুর্ঘটনা থেকে বাঁচতে পারলাম কই? পিছনে একটা সরকারি বাস এসে ধাক্কা মারল। বেশ কয়েক জন বাচ্চা জখম হল। তাদের নিয়ে তখন কী করব, কোথায় যাব— কিছুই বুঝতে পারছিলাম না।’’

Advertisement

গত কয়েক মাসে কলকাতায় দফায় দফায় স্কুলবাস এবং স্কুলগাড়ির দুর্ঘটনা ঘটায় নড়েচড়ে বসেছে সরকার। শুরু হয়েছে নিয়মিত নজরদারি। কিন্তু শুধু নজরদারি বা কড়াকড়িতেই হবে না, দুর্ঘটনা এড়াতে প্রয়োজন চালকদের সচেতনতা বৃদ্ধিও। সে কারণেই বৃহস্পতিবার রবীন্দ্র সদনে স্কুলবাস মালিকদের সংগঠন ওয়েস্ট বেঙ্গল কন্ট্র্যাক্ট ক্যারেজ ওনার্স অ্যান্ড অপারেটর্স অ্যাসোসিয়েশন-এর উদ্যোগে স্কুলবাস এবং গাড়ির চালকদের নিয়ে হয়ে গেল এক প্রশিক্ষণ।

প্রভাসবাবুদের মতো অনেক চালকই মনে করেন, এ দিনের প্রশিক্ষণের ফলে তাঁরা আদতে উপকৃতই হবেন। আবার ভিন্ন মতও রয়েছে। দিলীপকুমার প্রধানের মতো চালকদের বক্তব্য, ‘‘আমাদের শুধু প্রশিক্ষণ দিলেই কি সমস্যার সমাধান হবে? প্রয়োজন আরও অনেক কিছু বদলের। যেমন, চালকদের সময় বেঁধে দেওয়া হয়। দেরি হলে চাকরি যাওয়ার ভয় থাকে। আমাদের চাকরিতে বিমা, পিএফ— কিছুই নেই। বাড়িতে কেউ অসুস্থ হলে টাকা চাইতে গেলে মালিক বলেন, এত পারব না। চাকরি ছেড়ে দে, অনেকে লাইনে আছে। অথচ দুর্ঘটনা ঘটলে সব দোষ চালকের।’’ দিলীপবাবুর আরও অভিযোগ, ‘‘চালক বাছাইয়ের ক্ষেত্রেও নিয়ম মানা হয় না। গাড়ি চালানোয় অভিজ্ঞ চালককে স্কুলবাসের স্টিয়ারিং ধরিয়ে দেওয়া হয়। যাঁরা ধরান, তাঁরা দুর্ঘটনার
দায়ও নেন না।’’

Advertisement

মঞ্চে কলকাতা পুলিশের ট্রাফিক স্কুলের প্রশিক্ষক প্রসেনজিৎ চক্রবর্তী অবশ্য ‘ক্লাস’ নিতে গিয়ে বললেন, চালকেরা নিজেদের ভাবনার বদল করলেই অনেক দুর্ঘটনা এড়ানো যায়। তাঁর কথায়, ‘‘আপনাদের আলাদা করে কিছু বলব না। আপনারা সব কিছুই জানেন। শুধু বলব, গাড়িটাকে ভালবাসুন। তা হলে গাড়িও আপনার সঙ্গে বেইমানি করবে না। আর গাড়ি চালানোর সময়ে মনে রাখবেন, যারা গাড়িতে রয়েছে, তাদের মতো আপনারও ছেলে বা মেয়ে আছে।’’

এ দিনের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন পরিবহণমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী, মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় এবং রাজ্য ও কলকাতা পুলিশের পদস্থ কর্তারা। পরিবহণমন্ত্রী সাফ বলে দেন, ‘‘স্কুলবাস চালকেরা যদি নিয়ম না মানেন, তা হলে গাড়ি চালাবেন না। তাঁদের বিকল্প কাজের ব্যবস্থা করবে সরকার।’’ স্কুলবাসের ফিটনেস নিয়ে যে নজরদারি চলছে, তা-ও চলবে বলে জানিয়ে দেন মন্ত্রী। পাশাপাশি, স্কুলগাড়ি এবং বাসে জিপিএস ও প্যানিক বাটনও বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে বলে ঘোষণা করেন তিনি।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement