বিকল ট্রলি।—নিজস্ব চিত্র
ভিন্ রাজ্য থেকে এসে যাত্রী দেখছেন, ট্রলি নেই। কারও কপালে ট্রলি জুটলেও তা ঠেললে এগোচ্ছে না। আটকে যাচ্ছে চাকা। কোনওটায় ক্যাঁচ-কোঁচ আওয়াজ হচ্ছে। কিছু ট্রলিতে মালপত্র তুলে ঠেলতে গেলে সে স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে বাঁ দিকের জায়গায় ডান দিকে, আর ডান দিকের জায়গায় বাঁ দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। দূর থেকে ঝাঁ চকচকে ট্রলি দেখে যাত্রী কাছে গিয়ে খেয়াল করছেন, সব কিছু ঠিক থাকলেও হ্যান্ডেলটাই উধাও।
গত শনিবার গুয়াহাটি থেকে এসে এক যাত্রী তিন বারের চেষ্টাতেও ভাল ট্রলি পাননি। শেষে দু’টি ট্রলি ব্যাগ দু’হাতে টানতে টানতে বেরিয়ে আসেন বাইরে। অভিজিৎ ঘোষ নামে ওই যাত্রী বলেন, ‘‘কোনও ট্রলির চাকা ভাঙা, তো কোনওটার হ্যান্ডেল নেই। আমি গড়ে মাসে চার-পাঁচ বার যাতায়াত করি। গত কয়েক মাসে একটিও ভাল ট্রলি পেয়েছি কি না সন্দেহ।’’
ব্যবসায়ী সৈকত বসু গত মাসে দিল্লি যাওয়ার সময়ে দেখেন বেশির ভাগ ট্রলির চাকা চলছে না। কয়েকটি ভাঙা। সৈকতের কথায়, ‘‘যেটাই বার করছি, সেটাই ভাঙা। দেশের অন্য বিমানবন্দরে ট্রলির অবস্থা এত খারাপ নয়।’’ যাত্রীদের একাংশের অভিযোগ, বিমানবন্দরের ভিতরে কিছু ‘পোর্টার’ থাকেন। ট্রলি খারাপ থাকলে অনেক যাত্রীর মাল নিয়ে যেতে হয়। সে ক্ষেত্রে পোর্টারেরা সাহায্যের বদলে টাকা নেন। ট্রলি খারাপ থাকলে তাঁদেরই সুবিধা বলে মত যাত্রীদের একাংশের।
কলকাতা বিমানবন্দরে এই ট্রলি যন্ত্রণায় জেরবার যাত্রীরা হাতের সামনে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের যে কর্মী-অফিসারদের পাচ্ছেন, তাঁদেরই তুলোধোনা করছেন। কোনও যাত্রী সটান ঢুকে পড়ছেন টার্মিনাল ম্যানেজারের ঘরে। ম্যানেজারকেই শোনাচ্ছেন চার কথা। কোনও কোনও যাত্রী ট্রলির হাল দেখে লিখিত অভিযোগও করছেন।
কিন্তু হুঁশ নেই কর্তৃপক্ষের। বিমানবন্দর সূত্রে খবর, দিনে গড়ে ২৯ হাজার যাত্রী যাতায়াত করেন। সে হিসেবে ৬০০০ ট্রলি থাকলে যাত্রীদের ট্রলি পেতে সমস্যা হওয়ার কথা নয়। বছর চারেক আগে নতুন টার্মিনাল হওয়ার সময়ে নতুন ৩০০০ ট্রলি এসেছিল। তা কমে এখন সংখ্যা দেড় হাজার। অভিযোগ, তার মধ্যে প্রায় হাজার ট্রলিই খারাপ। সেগুলি কিছু মাস ধরে এমন অবস্থাতেই পড়ে।
বিমানবন্দরের কর্মীদের অভিযোগ, যাত্রীদের গালাগালের মুখে তাঁদের পড়তে হচ্ছে। বারবার উচ্চপদস্থদের বলেও কাজ হয়নি।
কলকাতা বিমানবন্দরের অধিকর্তা অতুল দীক্ষিতকে ফোনে করে পাওয়া যায়নি। মোবাইলে পাঠানো বার্তারও জবাব আসেনি।