জেলেই জাল নোট ও অস্ত্র ব্যবসার পরিকল্পনা

তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন, বছর কয়েক আগে দু’টি আলাদা মামলায় একই জেলে ঢুকেছিল মালদহের শুকু শেখ এবং বিহারের কাশিমবাজারের মহম্মদ আব্দুল্লা। সেখানে বসেই জাল নোট আমদানি ও পিস্তল রফতানির ব্যবসা শুরু করার কথা ঠিক করে দু’জনে। এক গোয়েন্দাকর্তা জানান, শুকু জাল নোটের ব্যবসা সম্পর্কে ওয়াকিবহাল। আব্দুল্লা বেআইনি অস্ত্র কারবারের সঙ্গে জড়িত। দু’জনের যুগলবন্দির শুরু সেখান থেকেই।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০২ অগস্ট ২০১৮ ০২:৪১
Share:

কাঁকিনাড়া অস্ত্র কারখানা থেকে উদ্ধার হওয়া যন্ত্রাংশ। ফাইল চিত্র

ধুলো দিতে হবে পুলিশের চোখে। তাই এক জায়গায় অস্ত্রের সব যন্ত্রাংশ তৈরি করত না কাঁকিনাড়া থেকে গ্রেফতার হওয়া অস্ত্র কারবারিরা। গোয়েন্দাদের দাবি, রাজ্যের পাঁচ জায়গায় অস্ত্র তৈরির কারখানা তৈরি করেছিল তারা। কোথাও বানানো হত ট্রিগার। কোথাও বা কার্তুজের প্রকোষ্ঠ। পরে সেগুলি পৃথক পৃথক ভাবে নিয়ে যাওয়া হত মালদহের কালিয়াচকের একটি কারখানায়। সেখানেই বিভিন্ন যন্ত্রাংশ জুড়ে তৈরি হত গোটা অস্ত্র। যে অস্ত্র পাচার করা হত বাংলাদেশে। গোয়েন্দারা জানিয়েছেন, কাঁকিনাড়ার ওই কারখানায় পাঁচটি লেদ মেশিনের সন্ধান মিলেছে। ধৃতেরা তদন্তকারীদের জানিয়েছে, এক একটি লেদে দিনে ছ’টি যন্ত্রাংশ তৈরি হত। গ্রেফতারের আগে পর্যন্ত ধৃতেরা ১৫০০-র বেশি অস্ত্র পাঠিয়েছে বাংলাদেশে।

Advertisement

তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন, বছর কয়েক আগে দু’টি আলাদা মামলায় একই জেলে ঢুকেছিল মালদহের শুকু শেখ এবং বিহারের কাশিমবাজারের মহম্মদ আব্দুল্লা। সেখানে বসেই জাল নোট আমদানি ও পিস্তল রফতানির ব্যবসা শুরু করার কথা ঠিক করে দু’জনে। এক গোয়েন্দাকর্তা জানান, শুকু জাল নোটের ব্যবসা সম্পর্কে ওয়াকিবহাল। আব্দুল্লা বেআইনি অস্ত্র কারবারের সঙ্গে জড়িত। দু’জনের যুগলবন্দির শুরু সেখান থেকেই।

লালবাজারের স্পেশ্যাল টাস্ক ফোর্স (এসটিএফ) সূত্রের খবর, এই দু’জন ছা়ড়াও এই ব্যবসার চাঁই আরও দু’জন। তাদের এক জন মণীশ সিংহ, যে কারখানা খোলার জন্য বাড়ি ভাড়া নিয়েছিল। বাকি দু’জনের খোঁজে তল্লাশি শুরু হয়েছে। সম্প্রতি ইছাপুর রাইফেল ফ্যাক্টরি থেকে অস্ত্রের ‘বাতিল’ যন্ত্রাংশ পাচারের ঘটনা সামনে এসেছিল। গ্রেফতারও হয়েছিল পাচারকারীরা। সেই চক্রের সঙ্গে জগদ্দলের চক্রের যোগ রয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হবে বলে সূত্রের দাবি।

Advertisement

জেরায় এ-ও জানা গিয়েছে, এক-একটি ‘আনফিনিশড’ দেশি পিস্তল ৩ থেকে ৫ হাজার টাকায় বিক্রি করা হত। পাঁচশোরও বেশি এমন পিস্তল বাংলাদেশে পাচার হয়েছে। দেশের মধ্যেও এই পিস্তল বিক্রি করা হত কি না, তা খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা। ধৃতদের এক জন জেরায় জানিয়েছে, মালদহ সীমান্তের কাছে আরও একটি কারখানা ছিল। সেখানে পিস্তলে ‘ফিনিশিং টাচ’ দেওয়া হত। সেই কারখানা ভারতে না বাংলাদেশে, সে ব্যাপারেও খোঁজ শুরু হয়েছে।

সম্প্রতি এসপ্লানেড এলাকা থেকে তিন জন জাল নোটের কারবারিকে ধরেছিল এসটিএফ। তাদের কাছ থেকে ৪০টি ‘আনফিনিশড’ পিস্তল মেলে। তাদের জেরা করেই জগদ্দলের অস্ত্র কারখানার হদিস মেলে। সোমবার বিকেলে সেই কারখানায় হানা দিয়ে ছ’জন অস্ত্র কারবারি এবং ২০টি ‘আনফিনিশ়ড’ পিস্তল, লেদ মেশিন-সহ নানা যন্ত্রপাতি বাজেয়াপ্ত করা হয়। কলকাতার কাছেই এমন অস্ত্র কারখানার হদিস স্বাভাবিক ভাবেই তাজ্জব করেছে পুলিশেরও অনেককে। গোয়েন্দারা জানান, এই চক্রের চাঁইয়েরা বাংলাদেশের জঙ্গি ও অপরাধীদের সঙ্গে থেকে জাল নোটের আমদানি ও অস্ত্র রফতানির ব্যবসা করত।

প্রশ্ন উঠেছে, জগদ্দলে এই ধরনের কারখানা থাকলেও তার হদিস কেন পুলিশ পেল না? সে ক্ষেত্রে কি এটি ব্যারাকপুর কমিশনারেটের গোয়েন্দাদের ‘ব্যর্থতা’ নয়? এ কথা মানতে নারাজ ব্যারাকপুরের পুলিশকর্তারা। এক পুলিশকর্তার মন্তব্য, ‘‘কলকাতা পুলিশ আগে খবর পেয়েছে। ওরা এসে গ্রেফতার করেছে। এখানে ব্যর্থতার কোনও প্রসঙ্গ নেই।’’ তাঁর যুক্তি, অনেক সময়ই জঙ্গিনেতারা কোনও না কোনও এলাকা থেকে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের হাতে গ্রেফতার হয়েছে। সেই ঘটনাকে ওই এলাকার পুলিশের ব্যর্থতা বলা যায় না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন