ফণীর ছায়া সরতেই ফিরে এল প্লাস্টিকের ছাউনি

গড়িয়াহাট থেকে নিউ মার্কেট, বড়বাজার থেকে শ্যামবাজার— ফণী না আসায় হকারদের স্টলের উপরে প্লাস্টিকের ছাউনি ফিরেছে সর্বত্র।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৪ মে ২০১৯ ০১:০০
Share:

স্বমহিমায়: গড়িয়াহাট চত্বরে ফুটপাতের দোকানে প্লাস্টিকের ছাউনি। নিজস্ব চিত্র

শত বার নির্দেশ দেওয়া সত্ত্বেও পুরসভার কথা কানেই তোলেননি কলকাতার সিংহভাগ হকার। তাই দোকানের উপরে প্লাস্টিকের ছাউনি খোলেননি তাঁদের অনেকেই। অভিযোগ এমনই। গড়িয়াহাটের বস্ত্র বিপণিতে আগুন লাগার পরে প্লাস্টিকের ছাউনির মাধ্যমেই তা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে হকারদের স্টলে। কিন্তু পরিস্থিতির পরিবর্তন হয়নি তার পরেও। কিন্তু ঘূর্ণিঝড় ফণীর আগমন বার্তা পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রায় সমস্ত হকারই খুলে ফেলেছিলেন তাঁদের প্লাস্টিকের ছাউনি। কিন্তু ফণী না আসায় দু’-এক দিনের মধ্যেই ফিরে এসেছে সে সব ছাউনি। যা দেখে শহরবাসীর প্রশ্ন ‘‘ফণী পারে, প্রশাসন কেন পারে না?’’

Advertisement

গড়িয়াহাট থেকে নিউ মার্কেট, বড়বাজার থেকে শ্যামবাজার— ফণী না আসায় হকারদের স্টলের উপরে প্লাস্টিকের ছাউনি ফিরেছে সর্বত্র। জানুয়ারিতে গড়িয়াহাটের একটি বস্ত্র বিপণিতে আগুন লাগে। দমকল জানিয়েছিল, সেই আগুন দ্রুত হকারদের বিভিন্ন স্টলে ছড়িয়ে পড়ে। কারণ স্টলের ছাউনি প্লাস্টিক দিয়ে তৈরি ছিল। এই ঘটনা ছাড়াও অতীতে প্লাস্টিক থেকে একাধিকবার আগুন ছড়িয়েছে। পুরকর্তাদের দাবি, প্লাস্টিক বন্ধ করতে তাঁরা বদ্ধপরিকর। কিন্তু বাস্তবের চিত্রটা অন্য রকম।

ঘূর্ণিঝড় ফণীর সতর্ক বার্তা পেয়ে নিজেই প্লাস্টিকের ছাউনি খুলে ফেলেছিলেন গড়িয়াহাটের হকার বাপ্পা রায়। তিনি ফের সেই প্লাস্টিকের ছাউনি লাগিয়ে দিয়েছেন। শুধু বাপ্পাবাবুই নন, গড়িয়াহাট ঘুরে দেখা গেল, ফণীর ভয়ে যাঁরা প্লাস্টিকের ছাউনি খুলে ফেলেছিলেন, তাঁরা প্রায় সকলেই ফের প্লাস্টিক লাগিয়ে ফেলেছেন।

Advertisement

উত্তর কলকাতার ফুটপাথের এক ব্যবসায়ী অনুপ হাজরা বলেন, ‘‘আর তো উপায় ছিল না। গরমে ছাউনি ছাড়া কী ভাবে থাকব? সামনেই বর্ষাকাল। বৃষ্টিতে সব ভিজে যাবে। পুরসভা তো বিকল্প কিছু করতে পারল না।’’

প্লাস্টিকের ছাউনি যে বিপজ্জনক তা স্বীকার করে গড়িয়াহাট ইন্দিরা হকার্স ইউনিয়নের সম্পাদক দেবরাজ ঘোষ বলেন, ‘‘আমরা প্লাস্টিকের পরিবর্তে আগুন প্রতিরোধক তার্পোলিন ব্যবহার করার কথা ভেবেছিলাম। কিন্তু পুরসভা থেকে চাকা লাগানো কিয়স্ক দেওয়ার কথা বলেছে। দেখা যাক কত দিনে তা পাই।’’ গড়িয়াহাট এলাকার হকারদের অভিযোগ, পুরসভার তরফেই সদিচ্ছার অভাব রয়েছে। পুরসভা প্লাস্টিকের ছাউনি সরিয়ে নিতে বললেও বিকল্প ব্যবস্থা করছে না।

অন্য দিকে হাতিবাগান, শ্যামবাজারে অবশ্য প্লাস্টিকের ছাউনির পাশাপাশি হকারদের মাথার উপরে টিনের ছাউনি দেখা গেল। হাতিবাগান ফুটপাথের এক হকার কমল দাস বলেন, ‘‘ফণীর জন্য প্লাস্টিকের ছাউনি তুলে ফেলেছিলাম। এখন ফের ছাউনি লাগিয়ে নিয়েছি। ভাবছি আমিও টিনের ছাউনি লাগিয়ে নেব। তাতে আগুন লাগার ভয় কম।’’ তবে পুরসভার তরফে চাকা লাগানো কিয়স্ক দেওয়ার কথা থাকলেও কবে দেওয়া হবে, তা নিয়ে অবশ্য অন্ধকারেই হকারেরা।

কলকাতা পুরসভার মেয়র পারিষদ স্বপন সমাদ্দার বলেন, ‘‘ মেয়র ফিরহাদ হাকিমের তত্ত্বাবধানে নানা রঙের সুন্দর চাকা লাগানো কিয়স্ক তৈরির কাজ ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে। এ ছাড়া বেশ কিছু ছাতাও দেওয়া হবে। আশা করা যায় ভোটপর্ব শেষ হলেই এই কিয়স্ক দেওয়ার কাজ শুরু হবে।’’

কিয়স্ক তৈরির কাজ করছে একটি বেসরকারি সংস্থা। ওই সংস্থা দু’টি কিয়স্ক ইতিমধ্যে তৈরি করেছে। ওই সংস্থার ডিরেক্টর অবিন চৌধুরী বলেন, ‘‘সিমেন্টের বোর্ড দিয়ে তৈরি এই কিয়স্কে আগুন লাগার কোনও ভয় নেই। চার ফুট ও তিন ফুট এই দুই মাপের কিয়স্ক তৈরি হচ্ছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন