প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। —নিজস্ব চিত্র।
দুর্নীতি বিরোধী বিলের প্রসঙ্গও মোদীর ভাষণে। নিশানা করলেন অরবিন্দ কেজরীওয়ালকে। নিশানা করলেন প্রাক্তন মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় এবং জ্যোতিপ্রিয় মল্লিককে। বললেন, ‘‘শিক্ষক নিয়োগ মামলায় গ্রেফতারির পরেও পদ ছাড়তে চাননি। তৃণমূলের আরও এক মন্ত্রী রেশন দুর্নীতিতে গ্রেফতার হয়েছেন। তিনিও মন্ত্রিত্ব ছাড়তে চাননি। মানুষের ভাবনা নেই এঁদের। এঁরা জনতাকে ধোঁকা দিয়েছেন। এঁদের সরকারি পদে থাকার অধিকার আছে?’’ এর পর তিনি বলেন, ‘‘এটাও দেখলাম, দুর্নীতি করে জেলে গিয়েও মুখ্যমন্ত্রীর কাজ করছেন! সংবিধানের এই অপমান মোদী মানবেন না। দুর্নীতি করলে প্রধানমন্ত্রীর কুর্সিও থাকবে না। কিন্তু তৃণমূল এই আইনের বিরোধিতা করছে। সংসদে বিলের বিরোধিতা করছে।’’
মোদী বলেন, ‘‘এখান থেকে অনুপ্রবেশকারীদের তাড়াতে হবে কি না? কে তাড়াবে? বিজেপি তাড়াবে।বিজেপিকে জেতান। বিজেপিকে ভোট দিন। অনুপ্রবেশকারীরা বাংলা ছেড়ে পালাবে। ভারতের কাছে সম্পদ কম। যুব সমাজকে উপার্জন দিতে হবে, নাগরিকদের সুবিধা দিতে হবে। অনুপ্রবেশকারীরা রোজগার কেড়ে নিচ্ছে। নাগরিকদের অধিকারে ভাগ বসাচ্ছে। মা-বোনেদের সম্মানে হাত দিচ্ছে। তৃণমূল অনুপ্রবেশকারীদের প্রশ্রয় দিচ্ছে। ভোটব্যাঙ্কের জন্য প্রশ্রয় দিচ্ছে। জমি কেলেঙ্কারি হচ্ছে। কৃষকের জমি কেড়ে নেওয়া হচ্ছে, আদিবাসীদের জমি দখল করা হচ্ছে।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘আমি লালকেল্লার প্রাচীর থেকেও বলেছি, অনুপ্রবেশকারীদের যেতেই হবে। যারা নকল কাগজপত্র নিয়ে এখানে আছে, তাদের এখান থেকে যেতেই হবে। এই ভাবে তৃণমূল সরকারকেও এখান থেকে বিদায় নিতে হবে।’’
‘‘বিজেপি সরকার সগর্বে বাংলা ভাষা আর বাংলা সংস্কৃতিকে শক্তিশালী করার লক্ষ্যে কাজ করছে। আমরাই বাংলা ভাষাকে ধ্রুপদী ভাষার মর্যাদা দিয়েছি।’’
মোদী বলেন, ‘‘বাংলায় বিজেপির সরকার বানান। আমরা শ্যামপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের স্বপ্নের বাংলা বানিয়ে দেব। বিকশিত বাংলা, মোদীর গ্যারান্টি। বাংলার উন্নয়নের জন্য বিজেপির কাছে রোডম্যাপ আছে। কিন্তু তৃণমূলের নেই। তৃণমূল উন্নয়নের শত্রু। তার সাক্ষী এই দমদমের মানুষও। স্মার্ট সিটি মিশনে এখানকার অনেক উন্নতি হতে পারত। কিন্তু তৃণমূলের সরকার সেই প্রকল্পে যুক্ত হল না। তৃণমূলের কাজ হল, যে কোনও উপায়ে পশ্চিমবঙ্গে কেন্দ্রীয় প্রকল্পের রূপায়ণ আটকানো। তাই আপনারা এখানেও বিজেপিকে একবার সুযোগ দিয়ে দেখুন।’’
মোদীর ভাষণে এল ‘অপারেশন সিঁদুর’ প্রসঙ্গ।‘‘আমাদের সেনারা আতঙ্কবাদীদের এমন শিক্ষা দিয়েছে যে, পাকিস্তানের ঘুম উড়ে গিয়েছে। দেশের তৈরি অস্ত্র ব্যবহার হয়েছে। বাংলার সেনাদের শ্রদ্ধা।’’
‘‘বাংলার গৌরবের অতীত আবার ফিরিয়ে আনতে হবে। তাই একসঙ্গে বলতে হবে, তৃণমূলকে সরাও। বাংলাকে বাঁচাও।’’
‘‘পরিবর্তন, যা মেয়েদের সুরক্ষা দেবে, যা দোকান আর ঘর জ্বলা বন্ধ করবে, গরিবের অধিকার গরিবকে পাইয়ে দেবে, কৃষকের উন্নতি হবে,’’ বললেন মোদী। স্লোগান দিলেন, ‘বাঁচতে চাই, তাই বিজেপি চাই!’
কেন্দ্রের সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্পগুলির কথা পর পর বলেন মোদী। তার পর বলেন, ‘‘প্রথমে কংগ্রেস, তার পর বামেদের শাসন দেখেছে বাংলা। ১৫ বছর আগে আপনারা মা-মাটি-মানুষে বিশ্বাস করে পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। কিন্তু তাতে আগের চেয়ে পরিস্থিতি আরও খারাপ হল। ‘ক্রাইম’ এবং ‘কোরাপশন’ টিএমসি সরকারের পরিচিতি। এটা পাকা যে, যত দিন বাংলায় তৃণমূলের সরকার থাকবে, তত দিন বাংলায় উন্নয়ন থমকে থাকবে। তৃণমূল গেলে তবেই আসল পরিবর্তন আসবে। টিএমসি যাবে, তবেই আসল পরিবর্তন আসবে।’’
‘‘বাংলার জন্য যে টাকা আমরা সরাসরি রাজ্য সরকারকে পাঠাই, তার বেশির ভাগ লুট হয়ে যায়। আপনাদের জন্য খরচ হয় না। টিএমসি ক্যাডারের জন্য খরচ হয়। এই জন্য জনকল্যাণে পিছিয়ে পড়ছে পশ্চিমবঙ্গ। আগে ত্রিপুরা, অসমে এই হাল ছিল। যবে থেকে বিজেপি সরকার এসেছে গরিব কল্যাণ যোজনার লাভ ওই দুই রাজ্য পাচ্ছে।’’
‘ভারত মাতাকি জয়’ বলে বক্তৃতা শুরু করলেন প্রধানমন্ত্রী। তার পরে বাংলায় বললেন, ‘‘বড়রা আমার প্রণাম নেবেন। ছোটরা ভালবাসা। দক্ষিণেশ্বর, কালীঘাট, করুণাময়ী কালী মন্দির, দমদম বালাজি মন্দিরের সহ স্থানীয় বেশ কিছু মন্দিরের নাম বলে প্রণাম জানালেন। আমি এমন সময়ে কলকাতা এলাম যখন দুর্গাপুজোর প্রস্তুতি শুরু হয়ে গিয়েছে। কুমোরটুলিতে প্রতিমা গড়া চলছে। এর সঙ্গে যখন উন্নয়ন জুড়ে যায়, খুশি তখন দ্বিগুণ হয়ে যায়।’’
‘‘প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ করব, এই রাজ্যের সরকার বর্ডারে ৫৪০ কিলোমিটার অবৈধ বাংলাদেশি এবং অনুপ্রবেশকারীদের ঢুকিয়ে পশ্চিমবঙ্গ তথা ভারতকে বরবাদ করেছেন। আপনাকে এই অনুপ্রবেশকারী মুক্ত বাংলা করতে হবে।’’ শুভেন্দুর আবেদন, ‘‘ডক্টর শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জির বাঙালি ‘হিন্দু হোমল্যান্ড’ আপনাকেই বাঁচাতে হবে। আপনিই পারবেন। আমরা বাঙালিরা বাঁচতে চাই।’’
শুভেন্দু বলেন, ‘‘বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ নেতা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। পশ্চিমবঙ্গের বিজেপি বিধায়কদের তরফে আমি প্রণাম জানাচ্ছি। রাজ্য সভাপতি শমীক ভট্টাচার্য উপস্থিত রয়েছেন। মঞ্চে উপস্থিত তিন জন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। তাঁদের সকলকে আমার শ্রদ্ধা জানাচ্ছি। বিহারে প্রধানমন্ত্রী একাধিক প্রকল্পের সূচনা করে বাংলায় এসেছেন। তাঁকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।’’
প্রধানমন্ত্রীকে বরণ করলেন রাজ্য বিজেপির সভাপতি শমীক ভট্টাচার্য। হাতে তুলে দিলেন শিল্পীর আঁকা সত্যজিৎ রায়ের ছবি। মোদীর হাতে উপহার তুলে দিলেন শুভেন্দু।
দমদমে সভাস্থলে পৌঁছে গিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
‘যথারীতি’ এ বারও ‘মোদী আসছেন’ বলে ঘোষণা করলেন বিজেপি নেতা রাহুল সিন্হা।
“অভিষেক কি নেতাজি? না কি গান্ধীজি? সাড়ে সাত লক্ষ ভোটে জিতছে! শ্রদ্ধার সঙ্গে জানাচ্ছি, নেতাজি বা গান্ধীজিও সাড়ে সাত লক্ষ ভোটে জিততে পারতেন না। ওর পিসি কখনও সাড়ে সাত লক্ষ ভোটে জিতেছে? লজ্জা করে না!” তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক তথা ডায়মন্ড হারবারের সাংসদকে আক্রমণ বিজেপি নেতা তাপস রায়ের।
যশোর রোড মেট্রো স্টেশন থেকে বেরিয়ে পড়ল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কনভয়। এ বার তাঁর গন্তব্য দমদমের সেন্ট্রাল জেলের ময়দান।
প্রধানমন্ত্রীর সভায় একে একে ভাষণ দিচ্ছেন রাজ্য বিজেপির নেতারা। সজল ঘোষের পর বক্তৃতা করলেন রুদ্রনীল ঘোষ।
এই প্রথম প্রধানমন্ত্রীর সভামঞ্চে সজল ঘোষ ডাক পেয়েছেন। সজল ভাষণ শেষ করে বললেন, ‘জয় হিন্দ, বন্দে মাতরম।’ বিজেপি নেতা বললেন, “সবাই জয় মা কালী বলছেন। সামনে দুর্গাপূজা। সবাই বলুন, ‘জয় মা দুর্গা।’’’
দমদমে মুষলধারে বৃষ্টি নেমেছে। ছোট মাঠ, অনেক ক্ষণ আগেই ভরে গিয়েছে কর্মী ও সমর্থকদের ভিড়ে। এখন যে সব বিজেপি কর্মী-সমর্থকেরা মাঠের দিকে আসার চেষ্টা করছেন, তাঁদের মাঠের কিছুটা দূরেই আটকে দেওয়া হচ্ছে। সবাইকে মাঠের দিকে আসতে দিলে তাঁরাও মাঠে ঢোকার চেষ্টা করবেন। তাতে বিশৃঙ্খলা হতে পারে। তাই পুলিশ কিছুটা আগেই ভিড় আটকে দিচ্ছে