Garden Reach Building Collapse

গার্ডেনরিচে উদ্ধারে নেমেছে তুরস্কে প্রাণ বাঁচানো দুই সারমেয়

রবিবার গভীর রাতে গার্ডেনরিচে ভেঙে পড়ে নির্মীয়মাণ পাঁচতলা বাড়ি। ধ্বংসস্তূপের নীচে আটকে পড়েন একাধিক মানুষ। বুধবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ১০ জনের দেহ উদ্ধার হয়েছে ঘটনাস্থল থেকে।

Advertisement

চন্দন বিশ্বাস

কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ মার্চ ২০২৪ ০৭:০৮
Share:

ত্রাতা যুগল: গার্ডেনরিচে উদ্ধারকাজে রোমিও এবং জুলি। বুধবার। —নিজস্ব চিত্র।

এক বছর আগে ভূমিকম্পে বিধ্বস্ত তুরস্কে গিয়ে ১৫ জনের প্রাণ বাঁচিয়েছিল ওরা। কলকাতা থেকে সেখানে উড়ে গিয়ে প্রাণের খোঁজে টানা ন’দিন এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্তে ঘুরতে হয়েছিল। সেই দুই সারমেয়, রোমিও এবং জুলি প্রাণের খোঁজে গত তিন দিন ধরে কাজ করছে গার্ডেনরিচের ধ্বংসস্তূপে। তিন দিনে একাধিক প্রাণের হদিসও দিয়েছে জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর ওই দুই কুকুর।

Advertisement

রবিবার গভীর রাতে গার্ডেনরিচে ভেঙে পড়ে নির্মীয়মাণ পাঁচতলা বাড়ি। ধ্বংসস্তূপের নীচে আটকে পড়েন একাধিক মানুষ। বুধবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ১০ জনের দেহ উদ্ধার হয়েছে ঘটনাস্থল থেকে। গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে একাধিক জনকে। ঘটনার পরেই সেখানে যায় কলকাতা পুলিশের বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী। পৌঁছে যান জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর কর্মীরাও। জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর সঙ্গেই আনা হয় রোমিও ও জুলিকে। মূলত, ধ্বংসস্তূপের নীচে কেউ আটকে আছেন কি না, তা খুঁজতে সাহায্য করছে এই দুই সারমেয়।

আট বছর ধরে জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর (এনডিআরএফ) সেকেন্ড কমান্ডের সদস্য ল্যাব্রাডর প্রজাতির রোমিও ও জুলি। প্রাণের খোঁজ পেতে পারদর্শী দু’জনেই। সে ভাবেই তাদের বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। সারা বছর ধরে চলে সেই প্রশিক্ষণ। গার্ডেনরিচে কাজ করা এনডিআরএফের এক কর্মীর কথায়, ‘‘ধ্বংসস্তূপের ভিতরে কোনও প্রাণের খোঁজ পেলে সেখানে গিয়েই সামনের পা দিয়ে আঁচড়াতে থাকে ওরা। পাশে
কোনও ফাঁকফোঁকর থাকলে সেখান দিয়ে ভিতরে ঢুকতে চায়। তা দেখেই আমরা অনুমান করি, নীচে কিছু একটা রয়েছে।’’ এ ভাবে ওদের সাহায্য নিয়ে গার্ডেনরিচের ধ্বংসস্তূপ থেকে একাধিক মানুষকে প্রাণে বাঁচানো গিয়েছে বলে জানালেন ওই কর্মী।

Advertisement

জানা গেল, এনডিআরএফের সেকেন্ড কমান্ড বাহিনীর মূল কার্যালয় হরিণঘাটায়।
সেখানেই আরও প্রশিক্ষিত কুকুরদের সঙ্গে রাখা হয় রোমিও ও জুলিকে। তবে গত তিন দিন ধরে গার্ডেনরিচে কাজের জন্য কৈখালির কার্যালয়ে তাদের রাখা হচ্ছে। সকালে বাকি কর্মীদের সঙ্গেই ওই দুই কুকুরকে আনা হচ্ছে। রাতে আবার দু’জনকে ফিরিয়ে নিয়ে
যাওয়া হচ্ছে বাহিনীর কৈখালির কার্যালয়ে। টানা কয়েক ঘণ্টা কাজের পরে দু’জনকেই কিছু সময়ের জন্য বিশ্রাম দেওয়া হচ্ছে। সারমেয়দের সামলানো এক কর্মীর কথায়, ‘‘টানা কাজ করলে ওদেরও অসুবিধা হয়। তাই কিছুটা সময় বিশ্রাম দিয়ে আবার ওখানে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।’’

গত বছর ফেব্রুয়ারি মাসে তুরস্কে যখন ভূমিকম্প হয়, তখন সে দেশে ভারত থেকে দু’টি
দলকে পাঠানো হয়েছিল বলে জানালেন এনডিআরএফের কর্মীরা। দিল্লি এবং কলকাতা থেকে সেই দু’টি দল যায়। কলকাতার দলের সঙ্গেই গিয়েছিল রোমিও ও জুলি। সেখানে গিয়ে উদ্ধারকাজে টানা ন’দিন থাকতে হয়েছিল। এনডিআরএফের সেকেন্ড কমান্ডের কমান্ডান্ট গুরমিন্দর সিংহ বলেন, ‘‘টানা কয়েক ঘণ্টা ধরে সেখানে কাজ করেছিল ওরা। আমাদের মতো ওরাও দম ফেলার সময় পায়নি। তুরস্কে ওদের দেখানো পথে অনেককেই আমরা জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছিলাম। এখানেও আমাদের মতো ওরা দিন-রাত এক করে লড়াই করে চলেছে। প্রাণ খুঁজতে ওদের জুড়ি মেলা ভার।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন