রক্ষীর হাতে বেআইনি বন্দুক, প্রশ্নে নিরাপত্তা

হাতে থাকা আগ্নেয়াস্ত্র থেকে শুরু করে তার নথি এবং অস্ত্রধারীর লাইসেন্স, সবই বেআইনি। অথচ সেই রক্ষীর উপরেই রয়েছে বেসরকারি ব্যাঙ্কের এক শাখার নিরাপত্তার দায়িত্ব।

Advertisement

সুরবেক বিশ্বাস

শেষ আপডেট: ২১ ডিসেম্বর ২০১৬ ০০:৪৯
Share:

হাতে থাকা আগ্নেয়াস্ত্র থেকে শুরু করে তার নথি এবং অস্ত্রধারীর লাইসেন্স, সবই বেআইনি। অথচ সেই রক্ষীর উপরেই রয়েছে বেসরকারি ব্যাঙ্কের এক শাখার নিরাপত্তার দায়িত্ব।

Advertisement

মঙ্গলবার বেআইনি অস্ত্র রাখার অভিযোগে একটি বেসরকারি ব্যাঙ্কের এলগিন রোড শাখার পাহারায় থাকা ওই নিরাপত্তারক্ষীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পুলিশ জানায়, ধৃতের নাম রামেশ্বর সিংহ। তাঁর একনলা বন্দুকটি বাজেয়াপ্ত করেছে পুলিশ। তাঁর কাছ থেকে ভুয়ো লাইসেন্সও উদ্ধার করা হয়েছে।

ব্যাঙ্ক, ক্যাশ-ভ্যান, এটিএম, সোনার দোকান কিংবা কিছু বেসরকারি সংস্থা ও কারখানা— এই সব জায়গায় বেসরকারি সংস্থার বন্দুকধারী রক্ষীরা মোতায়েন রয়েছেন। এই রক্ষীরা নিজেরাই আগ্নেয়াস্ত্র জোগাড় করে থাকেন। সংস্থা থেকে তা দেওয়া হয় না। বিপুল পরিমাণ নগদ নিয়ে নাড়াচাড়া হয় বলে নোট বাতিলের জেরে নগদের আকালে ওই সব জায়গায় নিরাপত্তার ঝুঁকিও বেড়ে গিয়েছে অনেকটাই। সেখানে মোতায়েন রক্ষীদের বিশ্বাসযোগ্যতা কতটা, তা নিয়ে সম্প্রতি চিন্তাভাবনা শুরু হয় লালবাজারের তরফে। তখনই একটি বিশেষ সূত্রে লালবাজারের আর্মস অ্যাক্ট বিভাগ রামেশ্বরের খবর পায়।

Advertisement

তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে, রামেশ্বর একা নন। শহর ও আশপাশের ব্যাঙ্ক, এটিএমে মোতায়েন অনেক রক্ষীরই বন্দুক বেআইনি। ওই সব আগ্নেয়াস্ত্রের একাংশ চোরাই মাল। সেগুলি কেনা হয়েছে মুঙ্গের, মুর্শিদাবাদ কিংবা দক্ষিণ ২৪ পরগনার বেআইনি অস্ত্র কারখানা থেকে। এবং সেই আগ্নেয়াস্ত্র যে লাইসেন্সের জোরে তাঁরা কিনেছেন বলে দেখাচ্ছেন, সেই কাগজও ভুয়ো! কাজেই, যে কোনও সময় রক্ষকই অবতীর্ণ হতে পারেন শমনের ভূমিকায়।

শুধু লালবাজারের হিসেব বলছে, বন্দুকধারী বেসরকারি নিরাপত্তারক্ষী সরবরাহ করে, কলকাতায় এমন সংস্থা রয়েছে প্রায় ৮০টি। লালবাজার তাদের প্রত্যেককে চিঠি দিতে চলেছে। চিঠিতে ওই সব সংস্থায় কাজ করা সশস্ত্র রক্ষীদের প্রত্যেকের বন্দুকের লাইসেন্স চেয়ে পাঠাবে কলকাতা পুলিশ। কর্তাদের বক্তব্য, কোথায়, কারা চোরাই বন্দুক ও ভুয়ো লাইসেন্স নিয়ে পাহারা দিচ্ছে, তার হিসেব এ বার পরিষ্কার হতে পারে।

রামেশ্বর যে সংস্থার হয়ে ব্যাঙ্কের সুরক্ষায় নিযুক্ত ছিল, সেই সংস্থাটির সদর দফতর দিল্লিতে বলে প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের দাবি। কিন্তু সংস্থাটি কবে কলকাতায় অফিস খুলে কাজ শুরু করল, তা পুলিশ জানে না।

লালবাজার সূত্রের খবর, রামেশ্বর তাঁর বন্দুকের দু’টি লাইসেন্স দেখায়। দু’টিই বিহারের। একটি নওয়াদা এবং অন্যটি সিওয়ানের। পুলিশের বক্তব্য, একটি বন্দুকের দু’টি লাইসেন্স হতে পারে না। তার উপর বন্দুক কেনার প্রমাণ হিসেবে একটি লাইসেন্সের উপর বিবাদী বাগের এক দোকানের ছাপ মারা ছিল। অথচ তদন্তকারীরা খোঁজ নিয়ে দেখেন, ওই দোকানটি এমন কোনও বন্দুক কাউকে বেচেনি। অর্থাৎ, লাইসেন্সের উপর মারা দোকানের ছাপটিও জাল!

পুলিশ জানায়, ভবানীপুর থানায় ধৃতের বিরুদ্ধে বেআইনি ভাবে অস্ত্র রাখা এবং জালিয়াতির অভিযোগে মামলা রুজু করা হয়েছে।

লালবাজারের এক কর্তার কথায়, ‘‘কেউ কেউ হয়তো চাকরি পেতেই জালিয়াতির আশ্রয় নিয়েছেন। কোনও ভাবে চোরাই অস্ত্র কিনেছেন। কিন্তু যারা এই অসাধু কাজ করছে, তাদের থেকে আরও বড় বিপদ হতে কতক্ষণ!’’ ওই কর্তার বক্তব্য, ‘‘বন্দুক-সহ ওই সব লোককে রক্ষী হিসেবে নিয়োগের আগে বেসরকারি সংস্থাগুলি কেন সব কিছু যাচাই করে দেখছে না, সেটাও প্রশ্ন। ভুয়ো লাইসেন্স ও বেআইনি অস্ত্র কী পদ্ধতিতে ধরা যাবে, সেটা দেখতে হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন