সাট্টা-চক্রের খোঁজ, পুলিশের জালে ৪

বড়বাজারের বিভিন্ন এলাকায় কয়েক জন ব্যক্তি নিজেদের মধ্যে মোটা টাকা লেনদেন করছেন। অথচ তাঁরা এলাকার পরিচিত ব্যবসায়ী নন। মাসখানেক আগে সোর্স মারফত খবরটি জানতে পেরেছিলেন অফিসারেরা।

Advertisement

শিবাজী দে সরকার

শেষ আপডেট: ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০২:০৯
Share:

বড়বাজারের বিভিন্ন এলাকায় কয়েক জন ব্যক্তি নিজেদের মধ্যে মোটা টাকা লেনদেন করছেন। অথচ তাঁরা এলাকার পরিচিত ব্যবসায়ী নন। মাসখানেক আগে সোর্স মারফত খবরটি জানতে পেরেছিলেন অফিসারেরা।

Advertisement

পুলিশের দাবি, সেই সূত্র ধরে তদন্ত চালিয়ে খোঁজ মিলেছে আন্তঃরাজ্য সাট্টা চক্রের। মঙ্গলবার থেকে বুধবার পর্যন্ত হাওড়া এবং কলকাতার বিভিন্ন জায়গায় তল্লাশি চালিয়ে বড়বাজার থানার তদন্তকারীরা সারা দেশে ছড়ানো ওই সাট্টা-চক্রের চার মাথাকে গ্রেফতার করেছেন। উদ্ধার হয়েছে প্রায় ছ’লক্ষ টাকা, ১১টি মোবাইল ও সাট্টার প্যাড। তবে পুলিশের দাবি, বড়বাজার বা কলকাতায় খেলা হত না ওই সাট্টা। মূলত এখানে টাকা লেনদেন চলত।

পুলিশ জানায়, ধৃতদের নাম অলোক বসু, সন্তোষ শর্মা, হরিশ ধন্ডনিয়া এবং অজয় উপাধ্যায়। ধৃতদের বুধবার ব্যাঙ্কশাল আদালতে সাত দিনের পুলিশি হেফাজত হয়। পুলিশের দাবি, হরিশ সাট্টা চক্রের পাণ্ডা। তাকে সাহায্য করত সন্তোষ। দু’জনে বেলুড়ের অফিস থেকে চক্রটি চালাত। হাওড়া-সহ বিভিন্ন জায়গায় সাট্টায় আগ্রহীদের থেকে প্রথমে টাকা নিয়ে পৌঁছে দেওয়া হতো অজয়ের কাছে। এর পরে ওই টাকা অলোকের হাত ঘুরে চলে যেত বেলুড়ের অফিসে। এ ছাড়া, ভিন্‌ রাজ্যের টাকা সংগ্রহেরও দায়িত্ব ছিল অলোকের হাতে।

Advertisement

পুলিশ আরও জেনেছে, অলোক ছিল ‘কেরিয়ার’। বড়বাজারের বিভিন্ন লোকের থেকে টাকা নিয়ে কমিশনের বিনিময়ে ‘বুকি’দের কাছে পৌঁছে দিত সে। কোন নম্বরে খেলা হবে, তা ঠিক করত হরিশ। ধৃতেরা জানিয়েছে, যে নম্বর বেশি বুক হতো, তা ইচ্ছে করে পাল্টে দিত সন্তোষ ও হরিশ। সব কিছু হয়ে গেলে অনলাইনে একটি নিদিষ্ট ওয়েবসাইটে ওই খেলার ফল জানা যেত। ওয়েবসাইটে এই সাট্টা-চক্রটিকে ভূতনাথ দে বলে অভিহিত করা হয়েছে বলে জানায় পুলিশ। ভূতনাথের মাধ্যমেই ওই সাট্টা চক্র বিভিন্ন রাজ্যের বুকিদের নিয়ন্ত্রণ করত।

কী ভাবে ধরা পড়ল চক্রটি? পুলিশ জানায়, অলোক মাঝেমধ্যেই কটন স্ট্রিটে মোটা টাকা লেনদেন করছে, এই খবর ছিল তাঁদের কাছে। সেই মতো বড়বাজার থানার ওসি চার অফিসারকে নিয়ে একটি দল গঠন করেন। সেই দলই মঙ্গলবার অলোকের খোঁজ পায়। তাকে গ্রেফতার করে উদ্ধার হয় ৫ লক্ষ টাকা। অলোককে জেরা করে বাকিদের খোঁজ মেলে। লালবাজারের দাবি, ধৃতেরা হিমশৈলের চূড়া মাত্র। পুলিশ জানায়, বেলুড়ের রাজকৃষ্ণ কুমার স্ট্রিটের অফিস থেকে দিল্লি, মুম্বই, কল্যাণ, গাজিয়াবাদ, লখনউ, মণিপুর, ফরিদাবাদ, ঝাড়সুগুদা-সহ বিভিন্ন জায়গার সাট্টা চক্রকে নিয়ন্ত্রণ করা হতো। বেলুড়ের অফিসটি সিল করে দেওয়া হয়েছে।

পুলিশ জানিয়েছে, নয়ের দশকের শুরু থেকেই এই শহরকে ঘিরে বিভিন্ন সাট্টা চক্র গড়ে উঠেছিল। যার মূল মাথা ছিল বৌবাজার বিস্ফোরণের মূল অভিযুক্ত রশিদ খান। তবে চলতি শতকের প্রথম দিক থেকে কিছু নির্দিষ্ট অঞ্চলে সাট্টা চললেও পুলিশের কড়া নজরদারিতে বেশির ভাগ জায়গায় তা বন্ধ হয়ে যায়। ফলে কলকাতা শহরে সাট্টা না খেলা হলেও বড়বাজারে ওই চক্রের টাকা লেনদেনের প্রমাণ পাওয়ায় উদ্বিগ্ন লালবাজারের কর্তারা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন