ডানলপে ডাকাতির পরে চব্বিশ ঘণ্টা কেটে গেলেও এখনও অধরা দুষ্কৃতীরা। তবে তদন্তকারীদের অনুমান, এই ঘটনার সঙ্গে যুক্ত রয়েছে আন্তঃরাজ্য দুষ্কৃতী দল। তারা এতটাই পেশাদার যে পুলিশ কিংবা গোয়েন্দারা কোন পথে তদন্ত এগিয়ে নিয়ে যেতে পারেন, সে সম্পর্কেও যথেষ্ট ওয়াকিবহাল। আর সে জন্যই ঘটনাস্থলে কোনও সূত্র রেখে যায়নি ডাকাতেরা। সব মিলিয়ে ঋণ-প্রদানকারী এক সংস্থা থেকে ৩০ কেজি সোনা লুঠের ঘটনার তদন্তে নেমে বিশ বাঁও জলে সিআইডি ও পুলিশ আধিকারিকেরা।
পুলিশ সূত্রের খবর, ডানলপে গয়না বন্ধক রেখে ঋণ দেওয়ার ওই সংস্থার অফিসে থাকা সিসি ক্যামেরা থেকে যে চার দুষ্কৃতীর ছবি পাওয়া গিয়েছে তা রাজ্যের অন্য থানাতেও পাঠানো হয়েছে। পাশাপাশি হুগলি, হাওড়া, উত্তর শহরতলি-সহ কলকাতার কয়েকটি জায়গাতেও তল্লাশি শুরু করা হয়েছে।
গোয়েন্দা সূত্রের খবর, সিন্দুক থেকে যে দুষ্কৃতী গয়না বের করেছিল তার মুখ হেলমেটে ডাকা ছিল, দু’টি হাতেই কব্জির উপর পর্যন্ত চামড়ার দস্তানা ছিল। তদন্তকারীদের দাবি, ২০১২ সালে দুর্গাপুরে অন্য একটি ঋণ-প্রদানকারী সংস্থায় ডাকাতির ঘটনাতেও এমন হেলমেট ও দস্তানা পরে ছিল দুষ্কৃতীরা। পরে ঝাড়খণ্ড থেকে সেই দলটিকে ধরা হয়। তদন্তকারীদের দাবি, ডানলপের ক্ষেত্রে ডাকাতেরা তিনটি বড় ব্যাগ এনেছিল। দু’টিতে গয়না ভরার পরে ‘দেরি হয়ে গিয়েছে, তাড়াতাড়ি বাইরে বেরোও!’’ বলে চম্পট দেয়। সাধারণত খালি ব্যাগটি ফেলে রেখে যাওয়াই স্বাভাবিক। কিন্তু এ ক্ষেত্রে তা হয়নি। এছাড়াও যে কোনও ডাকাতির ঘটনাতেই কম করে পাঁচ-ছয় জনের একটি দল আসে। কেন না, অন্তত দু’জন বাইরে নজরদারি চালায়।
কিন্তু রাস্তার সিসিটিভি ফুটেজ থেকে এটা স্পষ্ট যে, দু’টি নম্বর প্লেট ছাড়া মোটরবাইকে চেপে চার জনই ডানলপে এসেছিল। যা আন্তঃরাজ্যের অত্যন্ত পেশাদার দলের পক্ষেই সম্ভব। এমনকী, এলাকার ভৌগোলিক অবস্থানও তাদের নখদর্পণে। তাই এলাকার একেবারে ভিতরের রাস্তা ব্যবহার করে তারা বেলঘরিয়া এক্সপ্রেসওয়ের একমুখী রাস্তায় গিয়ে উঠেছে। যদিও ওই এক্সপ্রেসওয়েতে কোনও সিসিটিভি না থাকায় মোটরবাইক দু’টি কোন দিকে গিয়েছে, তা জানা সম্ভব হচ্ছে না।
তদন্তকারীদের দাবি, শুক্রবারের আগে ওই ডাকাত দল বেশ কয়েক বার এলাকা ও সংস্থায় এসেছে। সংস্থার বয়স্ক নিরাপত্তা রক্ষী, বিপদ ঘণ্টি না থাকা, সবই তারা জানত। পাশাপাশি অন্য ডাকাতির মতো বাইরে কোনও পাহারা না রেখে স্রেফ সময় হিসাব করে তারা গয়না লুঠ করেছে। পরে বাইরে এসে মোটরবাইকে চেপে দু’দিকের রাস্তা ধরে চলে গিয়েছে। ওই রাতেই হুগলির একটি সোনার দোকানেও লুঠপাট হয়েছে। দু’টি ঘটনায় একই দল জড়িত কি না, তাও খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা। অন্য দিকে, শনিবার সকালেও গ্রাহকেরা ডানলপের ওই সংস্থায় গিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। অভিযোগ, নতুন গয়না বানিয়ে নেওয়ার জন্য সংস্থার তরফে গ্রাহকদের অনেক কম হারে মজুরি দেওয়া হচ্ছে। এক গ্রাহক বলেন, ‘‘এটা মানবো না। আমাদের পুরো টাকা দিতে হবে। না হলে আইনের পথে যাব।’’