পাচারকারীর খোঁজই করল না পুলিশ

যদিও পুলিশের দাবি, কমলা মার্কেট থানার সহায়তায় জি বি রোডে তল্লাশি চালানোর সময়ে ওই নাবালিকা নিজেই বেরিয়ে আসে এবং তার পরে‌ই তাকে নিজেদের হেফাজতে নেন তদন্তকারীরা। কোনও ম্যানেজার বা মালিকের খোঁজ তাঁরা পাননি।

Advertisement

দীক্ষা ভুঁইয়া

শেষ আপডেট: ০৮ মার্চ ২০১৮ ০৩:০২
Share:

দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার পুলিশ পেরেছিল। কিন্তু কলকাতা পুলিশ পারল না।

Advertisement

পাচার হয়ে যাওয়া এক নাবালিকাকে দিল্লির যৌনপল্লি থেকে উদ্ধার করতে গিয়ে এক অপরাধীকে হাতের কাছে পেয়েও ছেড়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠল কলকাতা পুলিশের সার্ভে পার্ক থানার বিরুদ্ধে। অভিযোগ, কলকাতার ওই থানা এলাকা থেকে মাস তিনেক আগে পাচার হয়ে যায় বছর ১৬-র এক নাবালিকা। তাকেই উদ্ধার করতে গত সপ্তাহে দিল্লির জি বি রোডের যৌনপল্লিতে পৌঁছয় সার্ভে পার্ক থানার একটি তদন্তকারী দল। কিন্তু অভিযোগ উঠেছে, সেখানে পৌঁছে শুধুমাত্র ওই নাবালিকাকে নিয়ে ফিরে চলে আসে দলটি। যৌনপল্লির সাব-ম্যানেজার থাকলেও তার কোনও খোঁজই করেনি পুলিশ।

যদিও পুলিশের দাবি, কমলা মার্কেট থানার সহায়তায় জি বি রোডে তল্লাশি চালানোর সময়ে ওই নাবালিকা নিজেই বেরিয়ে আসে এবং তার পরে‌ই তাকে নিজেদের হেফাজতে নেন তদন্তকারীরা। কোনও ম্যানেজার বা মালিকের খোঁজ তাঁরা পাননি।

Advertisement

অথচ মাস চারেক আগেই ডায়মন্ড হারবার থানার পুলিশ এক নাবালিকাকে উদ্ধার করার পরে একের পর এক সব পাচারকারীকে গ্রেফতার করে আনে। দক্ষিণ ২৪ পরগনা পুলিশের কথায়, এই প্রথম কোনও পাচার-কাণ্ডে পুলিশ নাবালিকাকে উদ্ধার করার সময়েই পাচারে যুক্ত সকলকে গ্রেফতার করতে মরিয়া ছিল। সেই কাজে সফলও হয়েছিল পুলিশ।

কিন্তু সার্ভে পার্ক থানা হাতের নাগালে এক অপরাধীকে পেয়েও খালি হাতে ফিরে আসায় হতবাক দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার পুলিশকর্তাদের একাংশই। এক কর্তার কথায়, ‘‘এই একটা অপরাধ, যেখানে অপরাধীকে এক বার ছেড়ে দেওয়া মানে হাতের বাইরে সব অপরাধী বেরিয়ে যাওয়া!’’ যদিও কলকাতা পুলিশ সার্ভে পার্কের ঘটনায় এ তত্ত্ব মানতে নারাজ। পুলিশের দাবি, কলকাতা থেকে যে মহিলা ওই নাবালিকাকে পাচার করেছিল, তার খোঁজ করলেই সকলকে ফের হাতের মুঠোয় পাওয়া যাবে!

যদিও কলকাতা পুলিশের এই বক্তব্য মানতে নারাজ দিল্লির এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। ওই সংস্থার তরফে জানানো হয়েছে, জি বি রোডের যৌনপল্লিতে মালিক থাকে না ঠিকই, কিন্তু নাবালিকা মেয়েদের দায়িত্ব দেওয়া থাকে প্রাক্তন এক যৌনকর্মীকে। তাকে ‘নায়িকা’ বলা হয়। পাচার হওয়া মেয়ের দায়িত্ব তাদের হাতেই দিয়ে রাখে যৌনপল্লির মালিকেরা। শুধু তা-ই নয়, যৌন ব্যবসায় কার কত রোজগার হচ্ছে এবং সেই বাবদ মালিকের বরাদ্দ কত, তা দিতে হয় এই ‘নায়িকার’ হাতে।

ওই সংস্থার দাবি, নায়িকাকে গ্রেফতার না করায় উদ্ধার হওয়া নাবালিকাই ফের বিপদে পড়তে পারে। সংস্থার তরফে ঋষিকান্ত বুধবার জানান, সংগঠিত এই অপরাধে যুক্ত প্রতিটি ব্যাক্তিকে গ্রেফতার করার নির্দেশ আছে। কিন্তু পুলিশ শুধুমাত্র পাচার হওয়া মেয়েটিকে নিয়ে এসেই দায়িত্ব শেষ বলে মনে করে। দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলাও আগে তা করত। গত কয়েক বছর ধরে নাবালিকা উদ্ধারের পাশাপাশি তারা সব অভিযুক্তকে গ্রেফতার করছে। না হলে অনেক ক্ষেত্রে উদ্ধার হওয়া নাবালিকাকে ফের পাচারকারীর হুমকির মুখে পড়তে হয়। কলকাতা পুলিশ কেন জেলা পুলিশের মতো একই কাজ করতে পারল না? পুলিশের এক শীর্ষ কর্তা বলেন, ‘‘কেন আমরা একই পদক্ষেপ করলাম না, তদন্তের স্বার্থে সে কথা আপাতত গোপন রাখতে হচ্ছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন