সত্তর বছরের অবসরপ্রাপ্ত সরকারি আধিকারিক বিমা করিয়েছিলেন এক এজেন্টের মাধ্যমে। কয়েক বছর পরে সেই এজেন্ট চাকরি ছেড়ে দেন। তত দিনে বিমার মেয়াদ শেষ হয়ে গিয়েছে। কিন্তু বিমা অফিসে দিনের পর দিন হত্যে দিয়েও সেই টাকা ফেরত পাননি ওই বৃদ্ধ।
সম্প্রতি বার্ধক্যজনিত অসুস্থতার কারণে হাঁটাচলাও প্রায় বন্ধ হয়ে যায় তাঁর। ফলে বিমার টাকা ফেরত পাওয়ার আশা কার্যত ত্যাগ করেন ওই বৃদ্ধ। এমন সময়ে হঠাৎ এক দিন তাঁর বাড়িতে এসে এক ব্যক্তি বিমা করানোর প্রস্তাব দেন। বৃদ্ধ প্রথমেই সেই প্রস্তাব খারিজ করে দেন। কিন্তু সেই ব্যক্তি তাঁকে আশ্বস্ত করে বলেন যে, নতুন এই বিমা করালে পুরনো বিমার টাকাও তিনি ফেরত পাইয়ে দেবেন। বৃদ্ধ রাজি হন। নতুন বিমা করাতে টাকা দেন। আবার পুরনো বিমার কাগজপত্র তুলে দেন সেই ব্যক্তির হাতে। কিন্তু তার পর থেকেই সেই নতুন এজেন্টের কোনও হদিস নেই। বাধ্য হয়ে পুলিশের দ্বারস্থ হন বৃদ্ধ। তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে, প্রতারকের খপ্পরে পড়েছিলেন ওই বৃদ্ধ। খুইয়েছেন কয়েক লক্ষ টাকা।
বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের ঠকিয়ে টাকা হাতানোর এমন ঘটনা এখন আর নতুন কিছু নয়। কখনও বিমা করাতে গিয়ে, কখনও বা বাড়িতে বসেই ব্যাঙ্কে অ্যাকাউন্ট খোলাতে গিয়ে প্রায়ই সর্বস্বান্ত হচ্ছেন অনেকে। সল্টলেক ও সংলগ্ন এলাকায় এই ধরনের অপরাধ নিয়ন্ত্রণে বিশেষ পরিকল্পনা করেছে বিধাননগর পুলিশ। বিভিন্ন এলাকায় এ নিয়ে প্রচারে নামতে চলেছে তারা। এপ্রিল থেকে শুরু হবে বিধাননগর কমিশনারেটের এই কর্মসূচি। এক শীর্ষ কর্তার কথায়, ‘‘অপরাধ সংঘঠিত হওয়ার আগেই তা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। তাই সচেতনতায় বিশেষ জোর দিচ্ছি আমরা।’’
পুলিশের বক্তব্য, যে সমস্ত বৃদ্ধ-বৃদ্ধার লোকবল কম, একা থাকেন, তাঁরাই আজকাল দুষ্কৃতীদের প্রধান লক্ষ্য। পুলিশের দাবি, চুরি-ছিনতাই-ডাকাতির মতো ঘটনা কিছুটা কমলেও তার বদলে ভুয়ো কাগজ দেখিয়ে বা ফোনে ভুয়ো পরিচয় দিয়ে প্রতারণার মতো ঘটনা দিনদিন বাড়ছে।
পুলিশ জানিয়েছে, প্রতারণার বিভিন্ন ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে প্রাথমিক ভাবে সেই সংক্রান্ত সব রকমের তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। কী কী কৌশলে বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের ঠকানো হচ্ছে, কী ভাবে তাঁদের আস্থা অর্জন করা হচ্ছে, জানা হচ্ছে সেই সব খুঁটিনাটি। এর পাশাপাশি, কী ভাবে প্রতারকদের পাতা এই ধরনের ফাঁদ এড়াতে হবে, তার পরামর্শ দিয়ে অডিও এবং ভিডিও ক্লিপিং তৈরি করছে পুলিশ। সেই সমস্ত ক্লিপিং-এর সাহায্যেই সচেতনতার কাজ চালানো হবে। এপ্রিল থেকে কয়েক মাস ধরে পরীক্ষামূলক ভাবে এই প্রচার চলবে। তার জন্য পোর্টেবল টিভি-সহ অন্যান্য যন্ত্রপাতিও কেনা হচ্ছে বলে পুলিশ সূত্রের খবর।
বাসিন্দাদের বক্তব্য, প্রবীণ নাগরিকেরা অনেক ক্ষেত্রেই প্রতারিত হলেও অভিযোগ জানাতে সাহস পান না। আইনি ঝক্কি-ঝামেলা পোহানোর ভয়ে তাঁরা পুলিশের কাছে যান না। সেই দিকটিও পুলিশ-প্রশাসনকে ভাবতে হবে।
বাসিন্দাদের একটি সংগঠনের কর্মকর্তা কুমারশঙ্কর সাধু বলেন, ‘‘সল্টলেকে বয়স্কদের খুবই সমস্যা। নানা ভাবে প্রতারিত করা হয় তাঁদের। পুলিশ এমন কাজ করলে তাঁদের আত্মবিশ্বাস ও সাহস বাড়বে। পুলিশেরও জনসংযোগ বাড়বে।’’