চল্লিশ মিনিটের রহস্য ভাঙতে চাইছে পুলিশ

সোনিকার মৃত্যুর ঘটনায় গ্রেফতার হয়েছেন অভিনেতা বিক্রম চট্টোপাধ্যায়। আগামী ১১ জুলাই পর্যন্ত তিনি পুলিশের হেফাজতে। রবিবার এক পুলিশকর্তা জানান, দু’দিন ধরে দফায় দফায় জেরা করা হয়েছে বিক্রমকে। তবু ওই চল্লিশ মিনিট কেন গাড়ি দাঁড়িয়ে ছিল, সেই রহস্য এখনও কাটছে না।

Advertisement

শিবাজী দে সরকার

শেষ আপডেট: ১০ জুলাই ২০১৭ ০১:৩৮
Share:

গ্রেফতার অভিনেতা বিক্রম চট্টোপাধ্যায় (বাঁ দিক থেকে দ্বিতীয় জন)। নিজস্ব চিত্র।

রহস্য সেই চল্লিশ মিনিট নিয়ে!

Advertisement

দক্ষিণ কলকাতার এক হোটেল থেকে বেরিয়ে গাড়িতে তাঁরা গিয়েছিলেন কসবার সুইনহো লেনে। চালকের আসনে অভিনেতা, পাশের সিটে মডেল। প্রায় চল্লিশ মিনিট গাড়ি থামিয়ে, ভিতরে ছিলেন তাঁরা।

তার পরেই হঠাৎ গাড়ির গতি বাড়তে থাকে। তিন-চারটি সিগন্যাল ভেঙে বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চলে। এর পরে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে অভিনেতা বিক্রম চট্টোপাধ্যায়ের গাড়ি। মারা যান বিক্রমের সহযাত্রী, মডেল সোনিকা সিংহ চৌহান।

Advertisement

সোনিকার মৃত্যুর ঘটনায় গ্রেফতার হয়েছেন অভিনেতা বিক্রম চট্টোপাধ্যায়। আগামী ১১ জুলাই পর্যন্ত তিনি পুলিশের হেফাজতে।

রবিবার এক পুলিশকর্তা জানান, দু’দিন ধরে দফায় দফায় জেরা করা হয়েছে বিক্রমকে। তবু ওই চল্লিশ মিনিট কেন গাড়ি দাঁড়িয়ে ছিল, সেই রহস্য এখনও কাটছে না।

পুলিশ সূত্রের খবর, ২৯ এপ্রিল রাতে ভবানীপুরের ওই পানশালা থেকে বেরিয়ে কসবায় গাড়ি দাঁড় করিয়ে দু’জনে গল্প করছিলেন বলেই বারবার দাবি করছেন অভিনেতা। তাঁর দাবি, কসবায় কিছুক্ষণ দু’জনে গল্প করে সোনিকাকে বাড়ি পৌঁছে দিতে যাচ্ছিলেন তিনি। কিন্তু দুর্ঘটনার পরের দিন সকালে সোনিকার মুম্বই যাওয়ার কথা ছিল। তা হলে কেন অত রাত পর্যন্ত তাঁরা গল্প করছিলেন, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন তদন্তকারীরা। গাড়ির ভিতরে বসে কী বিষয় নিয়ে কথা হয়েছিল? এ সব প্রশ্নের কোনও উত্তর দেননি অভিনেতা।

লালবাজারের এক কর্তা জানান, ভবানীপুরের হোটেল থেকে বেরিয়ে কসবা এবং সেখান থেকে দুর্ঘটনাস্থল পর্যন্ত যে সব রাস্তা দিয়ে অভিনেতা গাড়ি চালিয়েছেন বলে দাবি করেছেন, সেই সব জায়গার সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখা হয়েছে। ওই পুলিশকর্তার কথায়, ‘‘বিক্রম যে সব রাস্তা দিয়ে গাড়ি চালানোর দাবি করেছেন, সেগুলি সব ঠিক। সিসিটিভি ফুটেজ দেখে তার প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে।’’

কিন্তু বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানোর কথা মানতে নারাজ অভিনেতা। এক পুলিশকর্তা জানান, কসবায় গাড়ি চল্লিশ মিনিট দাঁড়িয়ে থাকার পরে বেপরোয়া গতিতে চলতে শুরু করে। কসবা থেকে লেক মার্কেট আসার আগে প্রায় চারটি সিগন্যাল অমান্য করে গাড়ি চালান অভিনেতা। সিসিটিভি ফুটেজে সে ছবি ধরা পড়েছে। কেন বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানো শুরু করলেন? এর উত্তরে অভিনেতা বারবার জানিয়েছেন, তিনি গাড়ি নিয়ম মেনেই চালিয়েছিলেন।

গত বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে বারোটা নাগাদ কসবার একটি শপিং মলের সামনে থেকে পুলিশ বিক্রমকে গ্রেফতার করে। শুক্রবার আদালত অভিনেতার পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দেয়। আজ, সোমবার ফের তাঁকে আদালতে হাজির করা হবে। লালবাজারে এক শীর্ষকর্তা জানান, ফের তাঁকে পুলিশ হেফাজতে রাখার আবেদন করা হবে। কারণ অভিনেতা এবং মডেল ওই রাতে গাড়িটি কেন চল্লিশ মিনিট দাঁড় করিয়ে রেখেছিলেন, সেই ধোঁয়াশা না কাটলে ঘটনার তদন্ত সম্পূর্ণ হবে না।

পুলিশ সূত্রে খবর, অভিনেতার লকআপে যাওয়ার অনুমতি কর্তব্যরত পুলিশকর্মী ও তদন্তকারী কর্তা ছাড়া আর কারও নেই। সে দিকে বিশেষ নজরও রাখা হয়েছে। অভিনেতাকে দফায় দফায় জেরা করে কী কী তথ্য পাচ্ছেন তদন্তকারীরা, সে দিকেও নজর রাখছেন লালবাজারের শীর্ষকর্তারা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন