কঙ্কাল-কাণ্ড

পুলিশি নজর পার্থর মামার বাড়ির তথ্যেও

রবিনসন স্ট্রিটের অরবিন্দ দে ক্যানসার আক্রান্ত স্ত্রী আরতিদেবীর চিকিৎসা করাচ্ছিলেন হোমিওপ্যাথ চিকিৎসককে দিয়ে। কেন বড় হাসপাতালে তাঁর চিকিৎসা হচ্ছে না— এ নিয়ে অরবিন্দবাবুর সঙ্গে কথা কাটাকাটি হয়েছিল আরতিদেবীর ছোট বোন অঞ্জলি দেসিংহের। এমন তথ্য পুলিশকে জানিয়েছেন অঞ্জলিদেবীই। অঞ্জলিদেবীর সঙ্গে কথা বলে তদন্তকারীরা জেনেছেন, ১৯৮৯ সালে বেঙ্গালুরু থেকে কলকাতায় আসার পরেও আরতিদেবী ভাই-বোনেদের সঙ্গে খুব একটা সম্পর্ক রাখতেন না।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৫ জুন ২০১৫ ০৪:২৪
Share:

রবিনসন স্ট্রিটের সেই বাড়ি। — নিজস্ব চিত্র

রবিনসন স্ট্রিটের অরবিন্দ দে ক্যানসার আক্রান্ত স্ত্রী আরতিদেবীর চিকিৎসা করাচ্ছিলেন হোমিওপ্যাথ চিকিৎসককে দিয়ে। কেন বড় হাসপাতালে তাঁর চিকিৎসা হচ্ছে না— এ নিয়ে অরবিন্দবাবুর সঙ্গে কথা কাটাকাটি হয়েছিল আরতিদেবীর ছোট বোন অঞ্জলি দেসিংহের। এমন তথ্য পুলিশকে জানিয়েছেন অঞ্জলিদেবীই।

Advertisement

অঞ্জলিদেবীর সঙ্গে কথা বলে তদন্তকারীরা জেনেছেন, ১৯৮৯ সালে বেঙ্গালুরু থেকে কলকাতায় আসার পরেও আরতিদেবী ভাই-বোনেদের সঙ্গে খুব একটা সম্পর্ক রাখতেন না। ফলে যাতায়াত ক্রমশ কমতে থাকে। অঞ্জলিদেবী পুলিশকে জানান, দিদির মৃত্যুর দু’মাস আগে তাঁকে দেখতে তিনি রবিনসন স্ট্রিটের বাড়িতে যান। আরতিদেবীর হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা চলছে শুনে তিনি অসন্তুষ্ট হয়ে বড় হাসপাতালে বা ক্যানসার বিশেষজ্ঞের কাছে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শও দেন। এতে অরবিন্দবাবু ও পার্থ রেগে গিয়ে তাঁদের পারিবারিক বিষয়ে অঞ্জলিদেবীকে নাক না গলানোর পরামর্শ দেন তাঁরা। ক্ষুব্ধ অঞ্জলিদেবীও ওই বাড়িতে যাওয়া বন্ধ করে দেন।

রবিনসন স্ট্রিটের ঘটনার তদন্তে নেমে ওই পরিবারের ইতিহাস ঘাঁটতে শুরু করেছে পুলিশ। মনে করা হচ্ছে, এমন এক জটিল ঘটনার রহস্যভেদে সেই সব তথ্য যে কোনও সময়ে কাজে লাগতে পারে। তাই পার্থর কাকা অরুণ দে ছাড়াও পার্থর মামাবাড়ির দিকের আত্মীয়দের সঙ্গেও কথা বলছে পুলিশ। এক পুলিশকর্তার কথায়, ‘‘তদন্তের জন্য পারিবারিক ইতিহাস জানাটা প্রয়োজন। পার্থ এখনও মানসিক হাসপাতালে ভর্তি। তিনি সুস্থ হলে অনেক কিছু জানা যাবে। তার আগে আত্মীয়-বন্ধুদের থেকে যতটা সম্ভব তথ্য জানার চেষ্টা চলছে।’’ মনোবিদদেরও ধারণা, পার্থর এই মানসিক অবস্থা আচমকা হয়নি, এর পূর্ব ইতিহাস রয়েছে।

Advertisement

আরতিদেবী সম্পর্কে কী জেনেছেন তদন্তকারীরা? জানা গিয়েছে, এলগিন রোডের বাড়িতে বড় হলেও পরে আরতিদেবীরা চলে আসেন গুরুসদয় দত্ত রোডে। সচ্ছল পরিবারের সন্তান আরতিদেবীর বড় দাদা বিদেশে থাকতেন। সেখানেই তিনি মারা যান। অবিবাহিত মেজ দাদা মারা গিয়েছেন। ছোট দাদা ধ্রুবআলো দে অসুস্থ। তিনি গুরুসদয় দত্ত রোডের বাড়িতে একা থাকেন। আরতিদেবী বোনেদের মধ্যে দ্বিতীয়। বড়দি থাকেন শ্রীলঙ্কায়। বোন অঞ্জলিদেবীর পরিবার পুণেতে থাকলেও ছোট দাদার দেখাশোনার জন্য তিনি বেশির ভাগ সময়ে কলকাতায় থাকেন। অঞ্জলিদেবীরও ওপেন হার্ট সার্জারি হয়ে গিয়েছে। তাঁর মেয়ে আত্রেয়ী থাকেন বেলগাঁওতে। মাঝে মধ্যে তিনিও আসেন কলকাতায়।

পুলিশকে অঞ্জলিদেবী জানান, আরতিদেবীর মৃত্যুর পরে ১০ বছর তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেননি অরবিন্দবাবু ও পার্থ। আচমকাই আবার যোগাযোগ শুরু করেন তাঁরা। পার্থ অঞ্জলিদেবীকে শেষ ফোন করেন ৭ জুন, রবিবার। আর বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় এক আত্মীয় তাঁকে ফোন করে টিভিতে খবর দেখতে বলেন। অঞ্জলিদেবী এ দিন বলেন, ‘‘যা ঘটেছে তা দুর্ভাগ্যজনক। সকলকে উত্তর দিতে-দিতে আমরা ক্লান্ত। যা বলার পুলিশকে বলেছি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন