Mitra institution

প্রশ্ন ফাঁসের পিছনে কি মিলিত ষড়যন্ত্র, উত্তর খুঁজছে স্কুল

স্কুলের প্রধান শিক্ষক রাজা দে বলেন, ‘‘সাইবার ক্রাইম বিভাগ তদন্ত করে দেখছে। আমরাও খোঁজখবর চালাচ্ছি। আমার নামে ভুয়ো হোয়াটসঅ্যাপ নম্বর তৈরি করা এক জন ছাত্রের পক্ষে আদৌ কি সম্ভব?

Advertisement

আর্যভট্ট খান

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ অগস্ট ২০২৩ ০৬:৫৭
Share:

—প্রতীকী চিত্র।

কলকাতার মিত্র ইনস্টিটিউশন স্কুলের ভবানীপুর শাখার প্রধান শিক্ষকের নামে ভুয়ো হোয়াটসঅ্যাপ অ্যাকাউন্ট খুলে এবং তাঁর গলা নকল করে ‘ভয়েস মেসেজ’-এর মাধ্যমে প্রশ্ন ফাঁসের চেষ্টায় এলাকার টিউটোরিয়াল হোমের জড়িত থাকার আশঙ্কা করছেন স্কুল কর্তৃপক্ষ এবং তদন্তকারী দল। স্কুল কর্তৃপক্ষের প্রশ্ন, এক বা কয়েক জন ছাত্রের পক্ষে এ ভাবে ভুয়ো হোয়াটসঅ্যাপ তৈরি করে বা কৃত্রিম মেধার মাধ্যমে প্রধান শিক্ষকের গলা নকল করা কি সম্ভব? এটি একটা সম্মিলিত চক্রান্ত বলেই মনে করছেন ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক রাজা দে। যে ভাবে প্রযুক্তি ব্যবহার করে প্রশ্ন ফাঁসের চেষ্টা হয়েছে, তাতে শঙ্কিত শিক্ষক মহল। কৃত্রিম মেধার সাহায্য নিয়ে প্রধান শিক্ষকের গলা নকল করে প্রশ্ন চাওয়ায় বিস্মিত শিক্ষকেরাও।

Advertisement

রাজা বলেন, ‘‘সাইবার ক্রাইম বিভাগ তদন্ত করে দেখছে। আমরাও খোঁজখবর চালাচ্ছি। আমার নামে ভুয়ো হোয়াটসঅ্যাপ নম্বর তৈরি করা এক জন ছাত্রের পক্ষে আদৌ কি সম্ভব? কৃত্রিম মেধা প্রয়োগে করে আমার গলা নকল করার মতো দক্ষতা এখনও স্কুলপড়ুয়াদের আসেনি। এই প্রযুক্তি নিয়ে কিছু স্কুলে পড়ানো শুরু হলেও তা প্রথম পর্যায়ের পাঠ। ওই টুকু পড়ে কৃত্রিম মেধার সাহায্যে আমার গলা নকল করা অসম্ভব।’’

তিনি জানাচ্ছেন, দশম শ্রেণির দ্বিতীয় পর্যায়ক্রমিক মূল্যায়নের পরীক্ষার সব বিষয়ের প্রশ্ন চাওয়া হয়েছে ওই ভয়েস মেসেজে। এক জন ছাত্র যদি এই কাজ করত, তা হলে হয়তো সে যে বিষয়ে দুর্বল, সেই বিষয়েরই প্রশ্ন জানার চেষ্টা করত। তাই এক জনের পক্ষে এটা করা সম্ভব নয় বলেই মনে হচ্ছে। সেই সঙ্গে স্কুলের আশপাশের টিউটোরিয়াল হোমগুলি সম্পর্কেও খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে।

Advertisement

যোধপুর পার্ক বয়েজ স্কুলের প্রধান শিক্ষক অমিত সেন মজুমদার বলেন, ‘‘করোনার সময়ে আমাদের স্কুলেও শিক্ষকদের ভুয়ো হোয়াটসঅ্যাপ তৈরি করে প্রশ্ন চাওয়া হয়েছিল। মিত্র ইনস্টিটিউশনে যা ঘটেছে, তাতে এক বা কয়েক জন ছাত্র মিলে এটা করা সম্ভব নয় বলেই মনে হয়।’’

বেলগাছিয়া মনোহর অ্যাকাডেমির শিক্ষিকা সুমনা সেনগুপ্ত বলেন, ‘‘অনেক সময়ে এক ক্লাসের অনেক পড়ুয়া একটি টিউটোরিয়াল হোমে পড়ে। তাদের থেকে হোম কর্তৃপক্ষ স্কুল সম্পর্কে তথ্য জানতে পারেন। ফলে স্কুলের প্রধান শিক্ষকের নাম, ছবি বা অন্য শিক্ষকদের নাম জোগাড় করাও অসম্ভব নয়।’’ সুমনার মতে, দশমের দ্বিতীয় পর্যায়ক্রমিক মূল্যায়নের মতো পরীক্ষায় যদি জানা প্রশ্ন পড়ুয়াদের দিতে পারে কোনও টিউটোরিয়াল হোম, তবে তাদের গুরুত্ব বাড়বে মনে করেই এমন কাজ হয়ে থাকতে পারে।

সর্বভারতীয় গৃহশিক্ষক সংগঠনের সভাপতি উজ্জ্বল দত্তের দাবি, ‘‘স্থানীয় টিউটোরিয়াল হোম যদি এই ঘটনায় যুক্ত থাকে, তা হলে তাদের সঙ্গে স্কুলের কোনও শিক্ষকের যোগ থাকার আশঙ্কাও প্রবল। মনে রাখতে হবে, অনেক স্কুলশিক্ষক টিউটোরিয়াল হোমে পড়ান। তাঁদের মাধ্যমে এই প্রশ্ন ফাঁস হচ্ছে কি না, সেটাও তদন্তে আসা দরকার। দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করছি।’’ কলকাতা পুলিশের সাইবার ক্রাইম বিভাগের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, প্রধান শিক্ষকের নামে যে ভুয়ো নম্বরটি তৈরি করা হয়েছে, সেই নম্বর কী ভাবে তৈরি হল, কারা তৈরি করল— সবই তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন