দোহাই নিয়মের, বেআব্রু পুলিশের অমানবিক মুখ

একেই বোধ হয় বলে ‘চলো নিয়ম মতে’! ধর্মতলার মোড়ে বাস দুর্ঘটনায় আহত এক ব্যক্তি রক্তাক্ত অবস্থায় রাস্তায় দাঁড়ানো পুলিশ ভ্যানে হেলান দিয়ে বসে। কিন্তু সেই পুলিশের গাড়ি তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যায়নি। কেন?

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০১:৩৩
Share:

পথেই বসে বাসের চাকায় আহত। শনিবার, ধর্মতলায় ছবিটি তুলেছেন রণজিৎ নন্দী।

একেই বোধ হয় বলে ‘চলো নিয়ম মতে’!

Advertisement

ধর্মতলার মোড়ে বাস দুর্ঘটনায় আহত এক ব্যক্তি রক্তাক্ত অবস্থায় রাস্তায় দাঁড়ানো পুলিশ ভ্যানে হেলান দিয়ে বসে। কিন্তু সেই পুলিশের গাড়ি তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যায়নি। কেন? কলকাতা পুলিশের পদস্থ কর্তাদের যুক্তি, তাঁদের অ্যাম্বুল্যান্সে প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যবস্থা থাকে। তাই পুলিশের গাড়ির বদলে অ্যাম্বুল্যান্সে নিয়ে যাওয়াটাই নিয়ম।

লালবাজারের খবর, ওই পুলিশের গাড়ি কন্ট্রোল রুম মারফত অ্যাম্বুল্যান্সকে খবর দিয়েছিল। ঘটনাস্থল থেকে মেরেকেটে মাত্র ৭৫০ মিটার দূরে রাজভবনের দক্ষিণ গেটে দাঁড়ানো অ্যাম্বুল্যান্স এসে
ওই ব্যক্তিকে হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিল। তবে অভিযোগ, ওই সামান্য পথটুকু পেরোতে ২৪ মিনিট সময় লেগেছে তাদের।

Advertisement

শনিবার বিকেলের এই ঘটনার পরেই পুলিশের ভূমিকা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ধর্মতলার মোড়ে দাঁড়ানো মানুষজন। বলেছেন, পথ দুর্ঘটনা নিয়ে লালবাজার হাজার উপদেশ শোনালেও এ দিনের ভূমিকায় তাঁদের অমানবিক মুখটাই ফুটে উঠেছে। যদিও লালবাজার দাবি করেছে, দেরি অতটাও হয়নি। বড়জোর ১০ মিনিট বেশি গিয়েছে।

কী হয়েছিল এ দিন?

পুলিশ সূত্রের খবর, এ দিন বিকেল ৪টে ২০ মিনিট নাগাদ ধর্মতলার মোড়ে বাসে চাপতে গিয়ে পড়ে যান হাওড়ার বাসিন্দা শেখ রাইহান। বাসের পিছনের চাকায় তাঁর ডান পায়ে আঘাত লাগে। রাস্তাতেই পড়ে যান তিনি। ঝরঝর করে রক্ত পড়তে থাকে। আশপাশে দাঁড়ানো লোকজন ছুটে আসেন। ঘটনাস্থলের কাছেই দাঁড়িয়েছিল কলকাতা পুলিশের মোবাইল ভ্যান। সেখান থেকেও পুলিশকর্মীরা ছুটে আসেন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানাচ্ছেন, ধর্মতলার মোড়ে দাঁড়ানো লোকজন এবং পুলিশকর্মীরাই রাইহানকে রাস্তা থেকে তোলেন। পুলিশের মোবাইল ভ্যানের গায়ে ঠেস দিয়ে বসানো হয় তাঁকে। ওই ভ্যানে কর্তব্যরত পুলিশকর্মীরাই কন্ট্রোল রুমে দুর্ঘটনার খবর দেন। রাইহানকে হাসপাতালে নিয়ে
যাওয়ার জন্য আশপাশের বাসিন্দারা মোবাইল ভ্যানটিকেই অনুরোধ
করেন। কিন্তু তাতে লাভ হয়নি। যে বাসটিতে রাইহান আহত হয়েছিলেন, সেই বাসেই ছিলেন মুকেশ যাদব। চাঁদনি চকের এই বাসিন্দা দুর্ঘটনা হয়েছে দেখেই বাস থেকে নেমে পড়েছিলেন। তিনি বলেন, ‘‘বার বার পুলিশকে অনুরোধ করলাম। কিন্তু ওরা কথায় কান দেয়নি।’’

এ সব শুনে অবশ্য বিরক্ত হয়েছেন ডিসি (সেন্ট্রাল) অখিলেশ চতুর্বেদী। ঘটনাস্থল তাঁর আওতাতেই পড়ে। তিনি বলেন, ‘‘বিষয়টি খতিয়ে দেখব। গাফিলতি থাকলে শাস্তিও দেওয়া হবে।’’

এ দিন অনেকেই বলছেন, নিয়ম মেনে না হয় পুলিশের গাড়ির বদলে অ্যাম্বুল্যান্সে আহত ব্যক্তিকে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। কিন্তু অ্যাম্বুল্যান্স আসতেও
এত সময় নিল কেন? কলকাতা পুলিশের এক শীর্ষকর্তার ব্যাখ্যা, ওই সময়ে পথে যানজট ছিল। তার ফলেই সামান্য দেরি হয়েছে। কিন্তু অ্যাম্বুল্যান্সের মতো জরুরি পরিষেবা দেওয়ার গাড়ি কেন যানজটে আটকে দেরিতে পৌঁছবে, তার অবশ্য সদুত্তর মেলেনি।

কলকাতা পুলিশের একাংশের বক্তব্য, ধর্মতলার মোড়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় নিত্যদিন একটি ট্রমা কেয়ার অ্যাম্বুল্যান্স দাঁড় করানো থাকে। এ দিনের ঘটনাস্থল থেকে ওয়াই চ্যানেলে দাঁড়ানো সেই গাড়ির দূরত্ব মেরেকেটে দেড়শো মিটার হতো। সেই গাড়ি পৌঁছল না কেন? লালবাজারের খবর, ওয়াই চ্যানেলের গাড়িটিকেই অন্য জায়গায় পাঠানো হয়েছিল। তাই দুর্ঘটনার পরে রাজভবনের দক্ষিণ গেটের কাছে দাঁড়িয়ে থাকা অ্যাম্বুল্যান্স নিয়ে আসা হয়েছিল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন