পুলিশ নিগ্রহে ধৃতদের হয়ে থানায় কর্তা

পুলিশ সূত্রের খবর, রাত দেড়টা নাগাদ সাদা পোশাকে থানায় হাজির হয়ে কেন ওই দু’জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের হয়েছে, তা জানতে চান ‘ক্রুদ্ধ’ পদস্থ কর্তা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৯ জুলাই ২০১৮ ০২:১৪
Share:

আহত পুলিশকর্মী শিবচরণ মণ্ডল। নিজস্ব চিত্র।

ফাঁড়ির মধ্যে ঢুকে এক পুলিশ আধিকারিককে মারধর করলেন অভিযুক্তেরা। আর সেই ঘটনায় অভিযুক্তদের ছাড়াতে মধ্যরাতে দমদম থানায় হাজির হওয়ার অভিযোগ উঠল ব্যারাকপুর সিটি পুলিশের এক পদস্থ কর্তার বিরুদ্ধে! বুধবার যে ঘটনা ঘিরে তোলপাড় শুরু হয়ে যায় ব্যারাকপুর কমিশনারেটের অন্দরে। পুলিশ সূত্রের খবর অভিযুক্ত দু’জনই ওই পুলিশকর্তার পরিচিত।

Advertisement

মাস চারেক আগে শূরের মাঠের এক বেসরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে প্রথম বর্ষের এক দল ছাত্রের সঙ্গে গন্ডগোল বাধে চতুর্থ বর্ষের এক দল ছাত্রের। ওই কলেজটি দমদম থানার ঘুঘুডাঙা ফাঁড়ির অন্তর্গত। পুলিশ সূত্রের খবর, গন্ডগোলের ঘটনায় দু’পক্ষই পরস্পরের বিরুদ্ধে মামলা রুজু করে। সেই ঘটনার জেরে পুলিশের নোটিস পেয়ে মঙ্গলবার রাতে ফাঁড়ির অফিসার ইন-চার্জ শিবচরণ মণ্ডলের সঙ্গে দেখা করতে আসেন সংঘর্ষের ঘটনায় অন্যতম অভিযুক্ত, প্রথম বর্ষের ছাত্র সাদাব হোসেন।তাঁর সঙ্গে ছিলেন দাদা ওয়াসিম আখতার। ব্যারাকপুর সিটি পুলিশ সূত্রের খবর, ছাত্রদের মধ্যে গোষ্ঠী সংঘর্ষের ঘটনায় চার্জশিট পেশ করে তদন্ত গুটিয়ে আনতে চেয়েছিলেন ফাঁড়ির অফিসার ইন-চার্জ। পুলিশের দাবি, তার জন্য হাওড়ার শিবপুরে সাদাবের বাড়ির ঠিকানায় নোটিস পাঠানো হয়েছিল।

পুলিশ জানায়, আক্রান্ত সাব-ইনস্পেক্টর তাঁর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগে জানিয়েছেন, নোটিসের প্রেক্ষিতে মঙ্গলবার রাত পৌনে ন’টা নাগাদ সাদাব দাদাকে নিয়ে ফাঁড়িতে আসেন। কথা চলাকালীন পুলিশ কর্তার সন্দেহ হয়, অভিযুক্তেরা ফোনে কথোপকথনের ভিডিও করছেন। দুই ভাইয়ের কাছে তা জানতে চাওয়া হলে ওয়াসিম আচমকা কর্তব্যরত পুলিশ অফিসারের ডান দিকের চোখে সজোর ঘুষি মারেন বলে অভিযোগ। সাদাবের বিরুদ্ধেও ওই অফিসারকে মারধরের অভিযোগ রয়েছে। এর পরে দুই ভাই পালানোর চেষ্টা করতেই স্থানীয়েরা তাঁদের ধরে ফেলেন। তাঁরা সাদাব ও ওয়াসিমকে পাল্টা মারধর করেন বলেও স্থানীয় সূত্রে খবর। এর পরে দু’জনকে দমদম থানায় এনে অভিযোগ দায়েরের প্রক্রিয়া শেষে তাঁদের গ্রেফতার করা হয়। বুধবার আদালতে তোলা হলে দুই অভিযুক্তই জামিন পেয়ে যান, যার জেরে বিতর্কের মাত্রা আরও বাড়ে। পুলিশ পেটানোয় জামিন-অযোগ্য ধারায় অভিযুক্ত হয়েও তাঁরা কী ভাবে জামিন পেলেন, উঠেছে সেই প্রশ্ন।

Advertisement

সাদাব হোসেন (বাঁ দিকে )ও ওয়াসিম আখতার (ডান দিকে)। নিজস্ব চিত্র

এই ঘটনাক্রমে গভীর রাতে ব্যারাকপুর কমিশনারেটের অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার পদমর্যাদার এক আধিকারিকের আবির্ভাব হয় বলে অভিযোগ! পুলিশ সূত্রের খবর, রাত দেড়টা নাগাদ সাদা পোশাকে থানায় হাজির হয়ে কেন ওই দু’জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের হয়েছে, তা জানতে চান ‘ক্রুদ্ধ’ পদস্থ কর্তা। ওয়াসিম ও সাদাবের বিরুদ্ধে একাধিক জামিন-অযোগ্য ধারায় মামলা রুজু হয়েছে। তা জানার পরে সাহেবের ‘রাগ’ আরও চড়তে থাকে বলে দাবি ব্যারাকপুর কমিশনারেটের এক আধিকারিকের। কমিশনারেটের এক আধিকারিক দাবি করেন, মেজাজ হারিয়ে এক সময়ে লক-আপ খুলে অভিযুক্তদের মেডিক্যাল পরীক্ষা করানোর কথা বলেন ওই কর্তা। একই সঙ্গে সেই মেডিক্যাল রিপোর্টের ভিত্তিতে পাল্টা মামলা রুজুর জন্য চাপ দেন তিনি। কমিশনারেট সূত্রের খবর, তাতে কোনও ভাবেই রাজি হয়নি থানা। পুলিশ সূত্রের খবর, গভীর রাতে থানার সঙ্গে পদস্থ ওই কর্তার এমন টানাপড়েনের সুযোগে অভিযুক্তেরা যাতে কোনও ভাবেই লক-আপের বাইরে বেরোতে না পারে, তা নিশ্চিত করতে প্রধান ফটকে গাড়ি দাঁড় করানো হয়। পুলিশ সূত্রের খবর, এর পরেই থানা ছাড়েন ওই পদস্থ কর্তা।

বুধবার সকাল থেকে দমদম থানায় রাতের ওই ঘটনাক্রম নিয়ে কমিশনারেটের অন্দরে প্রবল চাপান-উতোর শুরু হয়। কমিশনারেটের একাধিক পুলিশকর্মীর বক্তব্য, ‘‘ফাঁড়িতে ঢুকে অফিসার ইন-চার্জকে মারা হল। আর সাহেব আসামিদেরই ছাড়াতে থানায় চলে গেলেন? ওই অফিসার কেমন আছেন, তা-ও জানতে চাননি তিনি!’’ কমিশনারেট সূত্রের খবর, এ দিন দুপুরে ওই অফিসারের সঙ্গে দেখা করে তাঁরা শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে খোঁজ নেন ওই পদস্থ কর্তা। ঘটনাচক্রে, আজ, বৃহস্পতিবার সেরা থানার দৌড়ে থাকা দমদম থানার পরিদর্শন রয়েছে। তার আগে অফিসার নিগ্রহের অভিযোগ ঘিরে যা হল, তা মোটেই ভাল বিজ্ঞাপন নয় বলে মত পুলিশ মহলের।

অভিযোগ প্রসঙ্গে এ দিন ওই পদস্থ কর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি ঘটনার কথা অস্বীকার করেননি। তাঁর বক্তব্য, ‘‘সংবাদমাধ্যমকে যা বলার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বলবেন।’’ বিষয়টি অস্বীকার না করলেও মন্তব্য করতে চাননি ডিসি (জোন টু) আনন্দ রায় ও পুলিশ কমিশনার রাজেশ সিংহ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন