প্রাচীর: মিটিং-মিছিল আর নয়। কলেজ স্কোয়ারে জমায়েত ঠেকাতে পুলিশ বাহিনীর ব্যারিকেড। সোমবার দুপুরে। ছবি: সুমন বল্লভ
গুটিকয়েক তরুণ-তরুণী। আর প্রধানত, পাকা চুল-দাড়ির ভিড়। কিন্তু তাঁদের সামলাতেই গোটা বিধান সরণি এবং কলেজ স্ট্রিট সাদা উর্দিধারী পুলিশে ছয়লাপ।
গার্ডরেলের পিছনে ব্যারিকেড করে দাঁড়িয়ে কলকাতা পুলিশের নর্থ ও সেন্ট্রাল ডিভিশনের বেশির ভাগ থানার অফিসারকুল। যানজটে থমকে বাস-ট্যাক্সির ভিড়। সোমবার, সপ্তাহের প্রথম কাজের দিনের দুপুরে কলেজ স্কোয়ারের ছবি বলতে এটাই।
পড়ুয়াদের অসুবিধার কথা ভেবে প্রেসিডেন্সি ও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঠিক সামনে কলেজ স্কোয়ারে রাজনৈতিক আন্দোলন নিষিদ্ধ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই নির্দেশ পালন করতে তটস্থ পুলিশের ব্যস্ততা কিন্তু বলে দিল, উত্তেজনার আঁচ থেকে আগামী দিনেও খুব সহজে রেহাই পাবে না রাজ্য-রাজনীতির বহু আন্দোলনের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা কলেজ স্কোয়ার চত্বর।
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি এমএ প্রথম বর্ষের ছাত্রী পল্লবী মাইতির আশঙ্কাতেও দুশ্চিন্তার মেঘ ছিল। এ দিন ক্লাস ছিল না তাঁর। নইলে ক্লাসঘরে বসেও হয়তো স্লোগানের শব্দ পেতেন, যেমন পেয়ে থাকেন। পল্লবীর কথায়, ‘‘মিটিং-মিছিল নিয়ে বিশেষ কিছু বলার নেই। কিন্তু মিটিং-মিছিল থাকলে প্রায়ই ক্লাস সেরে টিউশন পড়তে যেতে যানজটে আটকে দেরি হয়।’’ মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে মিটিং-মিছিল বন্ধ হলেও মানুষের ভোগান্তি থেকে যে রেহাই মিলবে, এ দিন কলেজ স্কোয়ারে সেই ইঙ্গিত ছিল না।
আরও পড়ুন: সরকারি ডাক্তারও জাল!
বরং এত পুলিশ সচরাচর কমই দেখা যায় এ তল্লাটে। কলকাতা পুলিশের নর্থ ও সেন্ট্রাল ডিভিশনের দু’জন ডিসি-র সঙ্গে মজুত প্রায় সব ক’টি থানার ওসি-ও। রীতিমতো সাজো-সাজো পরিবেশ। বিকেল চারটেয় আসার কথা ছিল সিপিআই (এমএল)-এর। পুলিশ প্রস্তুত বেলা একটা থেকেই। লাঠি হাতে হেলমেট-ঢাল পরে প্রাণান্তকর গরমেও যুদ্ধসাজ।
তবে গর্জালেও বর্ষানোর দরকার পড়েনি। সিপিআই (এমএল) বা এপিডিআর— কারও মিছিল থেকেই উটকো ইট ছুটে আসার মতো ঘটনা ঘটেনি। ব্যারিকেড ভাঙতে সামান্য ঠেলাঠেলিই সার। এর বেশি জল গড়ায়নি। পুলিশ সূত্রের খবর, বাম এবং বিজেপি-র অভিযানে যে ভাবে পুলিশকর্মীরা লাঠিচার্জ করেছিলেন, তাতে ক্ষুব্ধ ছিলেন স্বয়ং পুলিশ কমিশনার। তাই এ দিনের বিক্ষোভ কর্মসূচির জন্য বিরাট পুলিশি আয়োজন থাকলেও, বাহিনীকে সংযত থাকার নির্দেশ দিয়েছিল লালবাজার। সেই মতো পুলিশকর্মী এবং অফিসারদের লাঠি চালানোর ব্যাপারে সর্তক করে দেন পুলিশকর্তারা।
ঠিক কী ঘটল, এ দিন কলেজ স্কোয়ার চত্বরে?
পুলিশ জানায়, সিপিআই (এমএল)-এর দলটি গ্রেফতার বরণ করে পুলিশের কাছে। মৌলালি থেকে মিছিল করে বিকেল সাড়ে চারটেয় তারা কলেজ স্ট্রিট এবং সূর্য সেন স্ট্রিটের সংযোগে আসার আগেই রুখে দেয় বিরাট পুলিশবাহিনী। মানবাধিকার সংগঠন এপিডিআর-এর একটি মিছিল বিকেল সাড়ে পাঁচটার পরে মহাজাতি সদন থেকে এসে পৌছয় কলেজ স্ট্রিট মার্কেটের সামনে। পুলিশের বাধা পেলে সেখানেই তাঁরা বসে পড়েন। সরকারি ফতোয়ার বিরুদ্ধে মিছিলে হাঁটেন মিরাতুন নাহার, বোলান গঙ্গোপাধ্যায়। আধ ঘণ্ঠা ধরে বিধান সরণি অবরোধ করে রাখার পরে তাঁরা উঠে যান।
বড়সড় গোলমাল না ঘটলেও মিটিং-মিছিলের জেরে যানজট থেকে রেহাই পায়নি কলেজ স্ট্রিট। এপিডিআর-এর প্রবীণ কর্মী শুনিয়ে গেলেন, ‘আবার শীঘ্রই আসব কিন্তু!’ পুলিশ মহলের একাংশের মতে, মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশের পরেও পুলিশের ঝক্কি কিন্তু কমছে না। উল্টে এখন ছোটখাটো মিটিং-মিছিলকেও আমল দিতে হবে। ১৪৪ ধারা চিহ্নিত কিছু গুরুত্বপূর্ণ জায়গার মতো কলেজ স্ট্রিটেও স্থায়ী পুলিশ পিকেট রাখার বিষয়ে এখন আলোচনা করছে পুলিশ।