Kolkata ATM Fraud

মাত্র ৫০ সেকেন্ডেই এটিএমে স্কিমিং! মাস্টারমাইন্ডরা বসে নেপালে, অনুমান পুলিশের

হায়দরাবাদ পুলিশের এক আধিকারিক বলেন, “বোগদান-মারিয়ান এই চক্রের নিউক্লিয়াস। কারণ তারাই এটিএমে নিখুঁতভাবে স্কিমিং মেশিন লাগানোর ব্যাপারে দক্ষ”

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৫ অগস্ট ২০১৮ ১৯:০২
Share:

কসবার এই দুই হোটেলই ছিল ধৃত রোমানীয়দের আস্তানা। নিজস্ব চিত্র।

এ বছরের এপ্রিলেই কি দেশ ছেড়ে পালিয়েছিল ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে এটিএম প্রতারণার মূল দুই পাণ্ডা? সেই সম্ভাবনাই জোরাল হচ্ছে।

Advertisement

কলকাতার এটিএম স্কিমিংয়ের ঘটনায় গ্রেফতার দুই রোমানীয় নাগরিককে জেরা করে এবং দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ধরা পড়া অন্য রোমানীয় ব্যাঙ্ক লুটেরাদের সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে এমনই তথ্য পাচ্ছেন গোয়েন্দারা।

তদন্তে জানা গিয়েছে, স্কিমিং করে ব্যাঙ্কের গ্রাহকদের তথ্য চুরির কারবার ভারতে দীর্ঘদিন ধরে চালাচ্ছিল এই রোমানীয় গ্যাং। কিন্তু কখনও তারা পুলিশের হাতে ধরা পড়েনি। কারণ, সরাসরি তারা গ্রাহকের অ্যাকাউন্টের টাকা সরাতো না। ব্যাঙ্ক গ্রাহকদের চুরি করা তথ্য তারা আগে রীতিমতো নিলাম করে বেচে দিত নাইজেরীয় বা অন্য দুষ্কৃতিদের কাছে। তাই ধরা পড়লে তারাই পড়ত। রোমানীয় গ্যাং চিরকালই আড়ালে থেকে যেত। দিল্লি পুলিশের সাইবার সেলের এক আধিকারিক বলেন, “এর আগে নাইজেরীয় জালিয়াতদের জেরা করে জানা গিয়েছিল, তারা এই ব্যাঙ্ক গ্রাহকদের তথ্য কেনে। কিন্তু কার কাছ থেকে তারা কিনছে, সেই তথ্য জানা যায়নি। কারণ এই রোমানীয়রা অত্যন্ত গোপনীয়তা বজায় রাখত নিলামের সময়, যাতে তাদের পরিচয় ক্রেতা জানতে না পারে।”

Advertisement

অতি সম্প্রতি এই রোমানীয় ব্যাঙ্ক লুটেরারা সরাসরি টাকা তোলা শুরু করে গ্রাহকদের অ্যাকাউন্ট থেকে। মুম্বই, পুণে, জয়পুর, হায়দরাবাদে ২০১৭ সালের শেষ দিক থেকে একাধিক স্কিমিংয়ের ঘটনায় গ্রেফতার হয় সব মিলিয়ে প্রায় দশ জন রোমানীয় দুষ্কৃতী। এই ধৃতদের মধ্যেই দু’জন ভাসিলি গাব্রিয়েল রাজভান এবং বরিস আলেক্সান্দ্রু মিহাই। এ বছর মে মাসে তেলঙ্গানার সাইবারাবাদ এলাকায় একাধিক এটিএমে স্কিমিংয়ের ঘটনায় মুম্বই থেকে গ্রেফতার হয় এই দু’জন।

আরও পড়ুন: জেলবন্দি কর্নেলই কি এটিএম জালিয়াতির উপরওয়ালা

সেই দু’জনকে জেরা করেই জানা গিয়েছিল টিকু বোগদান কস্টিনেল এবং পুইসা ইউজিন মারিয়ানের নাম। হায়দরাবাদ-সহ ভারতের একাধিক শহরে স্কিমিংয়ের মাস্টারমাইন্ড এই দু’জন। এক তদন্তকারী বলেন, “এই দু’জন প্রথমে রীতিমতো গবেষণা করে দেশের কোন শহরে এটিএম কার্ডের কী রকম ব্যবহার এবং কত টাকা লেনদেন হয়। সেই অনুসারে শহর বাছাই করে। শুধু শহর বাছাই নয়, বাছাই করা হয় শহরের নির্দিষ্ট এলাকা।”

এই প্রাথমিক গবেষণার পর বোগদান-মারিয়ান জুটি তাদের শাগরেদদের পাঠিয়ে দেয় সেই শহরে প্রাথমিক রেইকি করতে। রেইকি করে টার্গেট এটিএম চিহ্নিত হলেই সেখানে পৌঁছত বোগদান-মারিয়ানের কোনও একজন। হায়দরাবাদ পুলিশের এক আধিকারিক বলেন, “বোগদান-মারিয়ান এই চক্রের নিউক্লিয়াস। কারণ তারাই এটিএমে নিখুঁতভাবে স্কিমিং মেশিন লাগানোর ব্যাপারে দক্ষ”। হায়দরাবাদ পুলিশের দাবি, এরা ৫০-৯০ সেকন্ডের মধ্যে নিখুঁত ভাবে স্কিমিং ডিভাইস লাগাতে পারে যে কোনও এটিএমে। সেই কারণে, লুটের টাকার ১৫-২০ শতাংশ পায় যারা এটিএমে গিয়ে টাকা তোলে। বেশি টাকাটাই পায় যারা স্কিমিং ডিভাইস লাগায়।

এই শহরেও ঠিক একই ভাবে রেইকি করেছে ধৃত দুই রোমানীয়। এ বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে ভারতে এসেই ১৯ ফেব্রুয়ারি কলকাতায় আসে ওভিডিউ সিমিয়ন। পরে এই জুলাই মাসের ১১ তারিখ কলকাতায় এসেছিল দুমিত্রু কালিন। প্রাথমিক তদন্তের পর গোয়েন্দারা নিশ্চিত, কলকাতায় এই চক্র স্কিমার লাগিয়েছিল ৪ এপ্রিল। হোটেল ও এটিএম কিয়স্কের সিসি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা গিয়েছে, ধৃত সিমিয়নের সঙ্গে ছিল আরও একজন। পুলিশের দাবি, এখানেও ৪ এপ্রিল যে ব্যাক্তি স্কিমিং ডিভাইস লাগিয়েছে, সেই দুষ্কৃতিও সময় নিয়েছে ৫০ সেকেন্ড।

আরও পড়ুন: অঙ্কে বিশ্বজয় বঙ্গসন্তানের, নিখুঁত স্কোরে আনলেন সোনা

আর সেই সমস্ত যোগাযোগ মিলিয়ে দেখে, গোয়েন্দাদের ধারণা, কলকাতার এই প্রতারণার পেছনেও এই বোগদান-মারিয়ান জুটি আাছে। হায়দরাবাদ পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, এই জুটি এপ্রিলের শেষ দিকেই ভারত ছেড়েছে। কিন্তু গোয়েন্দাদের ধারণা, অন্য দেশ থেকে গোটা চক্র চালাচ্ছে এরাই। আর সেটা হয়তো নেপাল থেকে। কারণ ধৃতদের জেরা করে জানা গিয়েছে গত কয়েক মাসে তারা একাধিক বার নেপাল গিয়েছিল। কলকাতা পুলিশ ইতিমধ্যেই একাধিক শহরের পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করছে, বিভিন্ন শহরে ধৃত রোমানীয় জালিয়াতদের তথ্য জানতে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন