পথসুরক্ষার কথা ভেবে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে সাবওয়ের এই দিকটি। রবিবার, বাঙুরে। নিজস্ব চিত্র
দুর্ঘটনা রোধে সাবওয়ের মুখ নিয়ন্ত্রণ করল বিধাননগর সিটি পুলিশ!
গত ৫ ফেব্রুয়ারি বাঙুর সাবওয়ে সংলগ্ন ভিআইপি রোডের উপরে বাসের ধাক্কায় ঊষা দাস (৬০) নামে এক মহিলার মৃত্যু হয়। এর পর থেকেই উল্টোডাঙাগামী সার্ভিস রোড লাগোয়া সাবওয়ের একটি মুখ বন্ধ রাখা হয়েছে।
প্রশ্ন উঠছে, সাবওয়ের দু’টি মুখ যদি দুর্ঘটনার সম্ভাবনাই বাড়ায় তাহলে এত টাকা খরচ করে তৈরির মানে কী? তবে কি পরিকল্পনায় গলদ?
ভিআইপি রোড রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব রাজ্য পূর্ত দফতরের। সাবওয়ে তৈরির কাজের সঙ্গে ওই দফতরের ইঞ্জিনিয়ারেরাই যুক্ত ছিলেন। কিন্তু পরিকল্পনায় গলদের কথা তাঁরা মানতে রাজি নন। দক্ষিণ দমদম পুরসভার এক আধিকারিকের বক্তব্য, সার্ভিস রোড দিয়ে বাস চালালে তার ফল যা হওয়ার তা-ই হচ্ছে।
পূর্ত বিভাগের এক ইঞ্জিনিয়ারের দাবি, সার্ভিস রোড এবং মূল রাস্তার নির্মাণে কিছু পার্থক্য রয়েছে। স্থানীয়দের সুবিধার কথা মাথায় রেখে সার্ভিস রোডে দু’মুখী যাতায়াতের ব্যবস্থা থাকে। ছোট গাড়ি, ধীর গতি— এই হল সার্ভিস রোডের বৈশিষ্ট্য। ভারী যানবাহনে ওই রাস্তা সংলগ্ন বাসস্ট্যান্ডের ক্ষতি হতে পারে। অথচ ভিআইপি রোডের ওই অংশে সেই নিয়ম মানা হচ্ছে না। প্রকল্প তৈরির সময়ে সার্ভিস রোড দিয়ে বাস চলাচলের কথা ছিল না।
যদিও বিধাননগর সিটি পুলিশের এক আধিকারিকের প্রশ্ন, ওই সার্ভিস রোড দিয়ে বাস চলাচলের পরিকল্পনা না থাকলে যাত্রী প্রতীক্ষালয় কেন করা হয়েছে? তিনি জানান, সাবওয়ে থেকে বেরিয়ে রাস্তা পারাপার করে বাসস্ট্যান্ডে পৌঁছতে গিয়ে যাতে দুর্ঘটনা না ঘটে, সে কথা মাথায় রেখে ট্র্যাফিক নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে।
বিতর্কে ইতি টানতে পূর্ত দফতরের এক কর্তা জানান, কেষ্টপুরের সার্ভিস রোডের ক্ষেত্রে রাস্তা পারাপারের সমস্যা নেই। যে ফুটে সাবওয়ে, সেখানেই যাত্রী প্রতীক্ষালয়। কিন্তু বাঙুরের ক্ষেত্রে সাবওয়ে থেকে বেরিয়ে রাস্তা পার করে তবেই বাসযাত্রীদের প্রতীক্ষালয়ে আসতে হচ্ছে। তার অন্যতম কারণ জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের ৬৪ ইঞ্চির একটা জলের পাইপ। এ জন্যই বাসস্ট্যান্ডের কাছে সাবওয়েটি করা যায়নি। তাতে জলের পাইপের ক্ষতি হতে পারত। তবে ভারী যানবাহনের জন্য সার্ভিস রোড সংলগ্ন বাসস্ট্যান্ডের ক্ষতির কথা মানতে চাননি তিনি। যদিও সার্ভিস রোডের বৈশিষ্ট্য মেনে দু’মুখী যাতায়াতের সুবিধা যে থাকা উচিত তা মেনে নিয়েছেন।
বাঙুরের বাসিন্দা তথা দক্ষিণ দমদমের ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর মৃগাঙ্ক ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘বাঙুরের কাউন্সিলর থাকাকালীন সাবওয়ের পরিকল্পনার সঙ্গে যুক্ত ছিলাম। পরিকল্পনা যে ভাবে করা হয়েছে, তাতে যে সাধারণ মানুষ সমস্যার সম্মুখীন হবেন তখনই সে কথা বলেছিলাম।’’
বিধাননগর পুলিশের এক কর্তা জানান, দুর্ঘটনার পরে বেশ কিছু পদক্ষেপ করা হয়েছে। ফুটপাথের উচ্চতা কমানো, গতি নিয়ন্ত্রণে স্পিড ব্রেকারের পাশাপাশি দুর্ঘটনাস্থলে বসানো হয়েছে সিগন্যাল। সাবওয়ের এক দিক বন্ধ রাখা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘পথচারীদের নিরাপত্তার কথা ভেবে পরিকল্পনায় কিছু রদবদল করতেই হয়। আগামী দিনে সাবওয়ে দিয়ে পথচারীর যাতায়াত বাড়লে বন্ধ মুখ খুলেও দেওয়া হতে পারে।’’