বাজি-বিধি ভাঙলে পুলিশ ব্যবস্থা নেবেই বললেন পুলিশ কমিশনার অনুজ শর্মা

কালীপুজো আর দীপাবলিতে শব্দের লাগামছাড়া দৌরাত্ম্য চলে শহরে। এ বারও কি সেটাই ভবিতব্য শহরবাসীর? অভিযোগ কেউ করুন বা না করুন, আইন অনুযায়ী পুলিশ সব সময়েই ব্যবস্থা নিয়ে থাকে। সব থানাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, খবর এলেই ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য।

Advertisement
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ অক্টোবর ২০১৯ ০২:০৬
Share:

পুলিশ কমিশনার অনুজ শর্মা।—ফাইল চিত্র।

প্রশ্ন: প্রতি বছরই এ সময়ে পুলিশ প্রচুর শব্দবাজি আটক করে। তা সত্ত্বেও কালীপুজো আর দীপাবলির রাতে শহরে দেদার বাজি ফাটে। তা হলে খামতি কি নজরদারিতেই?

Advertisement

উত্তর: শব্দবাজি নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মানতে সব রকম ব্যবস্থা নিচ্ছি। নিষিদ্ধ বাজি তৈরি হয় অন্যত্র। শহরে তা যাতে ঢুকতে না পারে, তার জন্য অনেক আগে থেকেই তল্লাশি চলছে। গত বছরের চেয়ে অনেক বেশি শব্দবাজি বাজেয়াপ্ত হয়েছে এ বার। সর্বত্র প্রচার চালানো হচ্ছে। কাজে লাগানো হচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়াকেও। তা সত্ত্বেও কিছু বাজি শহরে ঢুকছে। আমরাও চেষ্টা করে চলেছি আটকাতে।

Advertisement

প্র: শব্দবাজি ফাটানো বন্ধের ক্ষেত্রে থানার বিরুদ্ধে নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ নতুন নয়। অনেকেই ভয়ে থানায় অভিযোগ জানান না। পুলিশ দাবি করে, অভিযোগ হয়নি বলে ব্যবস্থা নেওয়া যায়নি। পুলিশ স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে অভিযোগ দায়ের করে না কেন?

উ: অভিযোগ কেউ করুন বা না করুন, আইন অনুযায়ী পুলিশ সব সময়েই ব্যবস্থা নিয়ে থাকে। সব থানাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, খবর এলেই ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য।

প্র: ডিজে ও বড় সাউন্ড বক্সের তাণ্ডব একটা বড় সমস্যা। বিশেষ করে জলসা ও বিসর্জনের মিছিলে। অভিযোগ পেয়ে পুলিশ যায় ঠিকই, কিন্তু বহু ক্ষেত্রে পুলিশ ফিরে যেতেই ফের তাণ্ডব শুরু হয়। অনেক ক্ষেত্রে স্থানীয় থানা অভিযোগকারীর পরিচয় ফাঁস করে দেয় বলে অভিযোগ ওঠে।

উ: হাইকোর্ট এবং রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের যা নিয়ম আছে, তা সকলকেই মানতে হবে। ১০০ ডায়ালে কেউ ফোন করলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অভিযোগকারীর পরিচয় গোপন রাখতেও বলা হয়েছে।

প্র: এ শহরে হাসপাতাল ও নার্সিংহোমের মতো ‘সাইলেন্স জ়োন’-এ মাইক বাজে, বাজিও ফাটে। ধরপাকড়েও তা কমে না। এমনকি, পুলিশকর্মীদের আবাসনেও শব্দবাজি ফাটানোর অভিযোগ ওঠে।

উ: সাইলেন্স জ়োনে যাতে এ বার শব্দবাজি না ফাটে, তা দেখতে ওসিদের ওই দিন বিশেষ অভিযান চালাতে বলা হয়েছে। পুলিশ হাসপাতালগুলির কাছে বেশি করে টহল দেবে। প্রয়োজনে হাসপাতালে পুলিশ-পিকেটের ব্যবস্থাও থাকবে। পুলিশ আবাসনে যাতে শব্দবাজি না ফাটে, তা নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে ওসিদের। উচ্চপদস্থ পুলিশ আধিকারিকদের আবাসনও যাতে বাদ না যায়, তা-ও দেখতে বলেছি।

প্র: সুপ্রিম কোর্ট আতসবাজি পোড়ানোর সময় নির্দিষ্ট করে দিয়েছে। গত বছর তা মানা হয়নি। এ বার কি মানা হবে?

উ: কঠোর ভাবে মানা হবে। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী, রাত আটটা থেকে দশটা পর্যন্ত বাজি পোড়ানো যাবে। এই নিয়ম যাতে মানা হয়, তার জন্য থানাগুলিকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কেউ বাজি-িবধি ভাঙলে তাঁর বিরুদ্ধে পুলিশ ব্যবস্থা নেবেই।

প্র: গত বছর কালীপুজো ও দীপাবলির দূষণে শীর্ষে ছিল কলকাতা। এ বার?

উ: পরিবেশ দূষণ ঠেকাতে প্রচার করছি। ফেসবুক-সহ অন্যান্য মাধ্যমেও বাজির দূষণ নিয়ে প্রচার চলছে। দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদও ব্যবস্থা নিচ্ছে।

প্র: এ বার নিয়ম ভেঙে শব্দবাজি ফাটালে শাস্তির উপরে জোর দিয়েছে দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ। সর্বোচ্চ এক লক্ষ টাকা জরিমানা ও পাঁচ বছর কারাবাসের কথা রয়েছে। পুলিশ কি ব্যবস্থা নেবে?

উ: দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ আইন মোতাবেক ব্যবস্থা নেবে। চাইলে আমরা সাহায্য করব। দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ ও দমকলের আধিকারিকেরা লালবাজার কন্ট্রোল রুমে থাকবেন। যাতে কোনও অভিযোগ পেলেই দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া যায়।

প্র: কালীপুজোয় সব থেকে বড় সমস্যা শব্দদূষণ। কী ভাবে আটকাবেন?

উ: দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ শব্দদূষণ ঠেকাতে ‘সাউন্ড লিমিটার’ নিয়ে যা করার করছে। আমরা তাদের নির্দেশ মতো ব্যবস্থা নিচ্ছি। তবে কোনও ভাবেই নির্ধারিত সময়ের পরে কোথাও যাতে মাইক না বাজে, তা দেখতে শহরের সমস্ত থানাকে বলা হয়েছে।

প্র: কালীপুজো ও দীপাবলির রাতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা কেমন থাকবে?

উ: আমরা ওই দু’দিন অতিরিক্ত বাহিনী মোতায়েন করছি শহর জুড়ে। যে সব এলাকায় বড় পুজো হয়, সেখানে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। ‘ওয়াচ টাওয়ার’ থেকে নজরদারি চালানো হবে। পুলিশকে অটো এবং অতিরিক্ত গাড়ি দেওয়া হয়েছে অলিগলিতে টহলের জন্য।

সাক্ষাৎকার: শিবাজী দে সরকার

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন