বিমানবন্দরে চাকরির নামে প্রতারণায় উদ্বিগ্ন পুলিশ

শহরের উপান্তে থাকা, অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করা সেই তরুণী (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) তাই নিজেই রুটি-রুজির সন্ধানে বার হন। আচমকাই বিজ্ঞাপণ দেখে জানতে পারেন কলকাতা বিমানবন্দরে যাত্রীদের তল্লাশি করার চাকরি রয়েছে।

Advertisement

সুনন্দ ঘোষ

কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ অগস্ট ২০১৯ ০৩:০৩
Share:

প্রতীকী ছবি।

অসুস্থ স্বামী কোনওরকমে সামান্য কিছু রোজগার করেন। তাতে, শাশুড়ি, ছেলে-সহ চার জনের সংসার চলে না। তার উপরে ছেলের লেখাপড়াও রয়েছে।

Advertisement

শহরের উপান্তে থাকা, অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করা সেই তরুণী (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) তাই নিজেই রুটি-রুজির সন্ধানে বার হন। আচমকাই বিজ্ঞাপণ দেখে জানতে পারেন কলকাতা বিমানবন্দরে যাত্রীদের তল্লাশি করার চাকরি রয়েছে। তিন মাস প্রশিক্ষণ শেষে মাসিক ১০ হাজার টাকা বেতনের পাকা চাকরি পাওয়া যাবে।

প্রথম ‘ইন্টারভিউ’-এর পরে তরুণীকে বলা হয়, মূত্রের নমুনা পরীক্ষা করতে হবে। সেই নমুনা ও নগদ ২৩০০ টাকা দিয়ে আসেন সংস্থার কাছে। কোন ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা তা জানানো হয়নি তাঁকে। ফোনে শুধু বলা হয়, ‘‘পরীক্ষায় আপনি সফল। এ বার চাকরি পেতে গেলে আরও ১২ হাজার ৪০০ টাকা জমা রাখতে হবে।’’

Advertisement

ফোনে কথা বলতে গিয়ে কেঁদে ফেলেন সেই তরুণী— ‘‘অভাবের সংসার। কোথায় পাব অত টাকা! চুপিচুপি গিয়ে কানের দুল বন্ধক রেখে টাকা নিয়ে এসেছিলাম।’’

টাকা জমা দেওয়ার পরে বলা হয় ৬ অগস্ট বিমানবন্দরে গিয়ে চাকরিতে যোগ দিতে হবে। সকাল ন’টায় পৌঁছতে হবে।

ভোর থাকতে বেরিয়ে পড়েন তিনি। সঙ্গী অসুস্থ স্বামী। হাতে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের নিয়োগপত্র। বিমানবন্দরে পৌঁছে এ দিক সে দিক ঘুরে পৌঁছন বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের কাচে ঢাকা দফতর, শিসমহলে। সেখানে গিয়ে নিয়োগপত্র দেখানোর পরে জানতে পারেন, সেটি জাল। এমন কোনও চাকরি বিমানবন্দরে নেই। মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে। দু’ বারে ১৪ হাজার ৭০০ টাকা নিয়ে কেটে পড়েছে সেই যুবকের দল, যারা চাকরি দেবে বলেছিল। তাঁদের মোবাইলও বন্ধ।

তরুণী একা নন। কলকাতা বিমানবন্দরে চাকরি দেওয়ার নাম করে নিয়মিত এ ভাবে মাঝেমধ্যেই অনেককে ঠকিয়ে টাকা তোলা হচ্ছে বলে অভিযোগ জমা পড়ছে কলকাতা বিমানবন্দরের শিসমহলে। তাঁদের মধ্যে অনেকেই পুলিশের কাছে অভিযোগ করছেন না। বাগুইআটির বাসিন্দা এক তরুণীর কথায়, ‘‘বিমানবন্দরে গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের কাজে গ্রুপ লিডার নেওয়া হবে বলে আমাকে জানানো হয়েছিল। যোগাযোগ করা হয়েছিল দিল্লির একটি ঠিকানা থেকে।’’ কয়েক দফায় দিল্লির এক ব্যক্তির অ্যাকাউন্টে ৭০ হাজার টাকা পাঠিয়েছিলেন ওই তরুণী। তাঁকে বলা হয়েছিল, প্রশিক্ষণের জন্য, ইউনিফর্ম কেনার জন্য টাকা লাগবে।

আপনি বিশ্বাস করলেন কেন?

তরুণীর উত্তর, ‘‘বিমানবন্দরে ওই গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের কাজ করা এক যুবকের কাছে খবর নিয়ে জেনেছি, সেখানে অনেকেই টাকা দিয়ে চাকরি পেয়েছেন। তাই, বিশ্বাস করেছিলাম।’’ বাগুইআটি থানায় এক বছর আগে অভিযোগ জানান তরুণী। আজও টাকা ফেরত পাননি। একই অভিজ্ঞতা বনগাঁ-র বাসিন্দা রাজা বিশ্বাসের। রিষড়ায় ডেকে পাঠিয়ে তাঁকে বলা হয়েছিল, বিমান নামার পরে সেখান থেকে যাত্রীদের ব্যাগ নিয়ে টার্মিনালে পৌঁছে দিতে হবে। এই চাকরি পাওয়ার জন্য তাঁর কাছ থেকে ১২ হাজার টাকা নেওয়া হয়েছিল। রিষড়া থানায় অভিযোগ জমা পড়েছে, সুরাহা হয়নি।

বিধাননগর কমিশনারেটের পুলিশকর্তাদের মতে, এক সময়ে এই সব চাকরিপ্রার্থীদের নতুন টার্মিনালের দোতলায় ৩সি গেটের সামনে নিয়ে আসা হত। সেই গেট দিয়ে যে কেউ ভিতরে ঢুকে উড়ান সংস্থার টিকিট কাউন্টার পর্যন্ত যেতে পারেন। বাইরে চাকরি প্রার্থীকে দাঁড় করিয়ে প্রতারক ভিতরে ঢুকে ঘুরে যেত। তাতে প্রার্থীর বিশ্বাস জন্মাতো। এমন ভাবে প্রচুর টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগে গত তিন বছরে বেশ কয়েক জনকে ধরা হয়েছে। এখন আর টার্মিনাল পর্যন্ত প্রার্থীদের নিয়ে আসার ঝুঁকি নিচ্ছে না প্রতারকেরা। কেউ রিষড়ায়, কেউ ইছাপুরে বসে প্রতারিত করে চলেছে চাকরি প্রার্থীদের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন