Kolkata International Book Fair 2020

গিল্ডের মেলায় সরকারের নিয়ন্ত্রণ কেন, উঠছে প্রশ্ন

কলকাতা আন্তর্জাতিক বইমেলা এবং রাজ্য সরকারের সম্পর্কের এমনই মহিমা! বিজ্ঞাপনী বুলি ধার করে বলাই যায়, গঁদের আঠার মতো মজবুত বন্ধন।

Advertisement

ঋজু বসু

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৮ জানুয়ারি ২০২০ ০২:২১
Share:

প্রস্তুতি: বইমেলায় সরকারি স্টলে চলছে শেষ মুহূর্তের তোড়জোড়। সোমবার। ছবি: স্নেহাশিস ভট্টাচার্য

দিন কয়েক আগেই মাথায় আকাশ ভেঙে পড়েছিল বইমেলার উদ্যোক্তাদের। প্রশাসনের সর্বোচ্চ স্তর থেকে বার্তা এসেছিল, সরস্বতী পুজো পড়ে যাওয়ায় মুখ্যমন্ত্রী কখনওই মেলা উদ্বোধনে আসতে পারবেন না।

Advertisement

কিন্তু তত দিনে আমন্ত্রণপত্র ছাপা হয়ে গিয়েছে। কলকাতামুখী রুশ দেশের বিশিষ্ট অতিথিবর্গের মস্কো বা দিল্লি থেকে আসার দিনক্ষণও পাকা! এই পরিস্থিতিতে শেষ মুহূর্তে বইমেলার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন এক দিন এগিয়ে আনা হয়েছে। আজ, মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টায় হবে সেই উদ্বোধন। রুশ অতিথিরা কলকাতায় নেমেই দু’ঘণ্টার মধ্যে সল্টলেকের সেন্ট্রাল পার্কের মাঠে মেলার উদ্বোধনে হাজির হবেন। কিন্তু রাজ্য প্রশাসনের সর্বোচ্চ স্তরের স্পর্শ ছাড়া বইমেলার উদ্বোধন অসম্ভব।

কলকাতা আন্তর্জাতিক বইমেলা এবং রাজ্য সরকারের সম্পর্কের এমনই মহিমা! বিজ্ঞাপনী বুলি ধার করে বলাই যায়, গঁদের আঠার মতো মজবুত বন্ধন। খাতায়-কলমে বইমেলার আয়োজক ‘পাবলিশার্স অ্যান্ড বুক সেলার্স গিল্ড’। কিন্তু মেলার ভিতরে পদে পদে উপস্থিতি সরকারি ছায়ার। গিল্ডের কর্তাদের পাল্টা যুক্তি, ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলাতেও সরকারি লোকজনকে উদ্বোধনে থাকতে দেখা যায়। সাহিত্যিক সমরেশ মজুমদার কিন্তু মনে করাচ্ছেন, আমাদের বইমেলা মানে লেখক ও পাঠকের মধ্যে সেতুবন্ধন। আগেকার যশস্বী লেখকেরা অনেকেই প্রয়াত বলে বিষণ্ণ লাগে তাঁর। ‘‘তবু কলকাতার বইমেলা অবশ্যই পাঠকের বইমেলা। নিছক বই ব্যবসার নয়, সংস্কৃতি চর্চারও প্রাঙ্গণ। সরকারের কাছে তার টিকি বাঁধা থাকলে মুক্ত চিন্তার আদানপ্রদানে বাধা সৃষ্টি হতেও পারে,’’ বলছেন প্রবীণ সাহিত্যিক। তবে তিনিও বলছেন, ‘‘অবশ্য বিকল্প রাস্তা কী আছে, আমি জানি না। তাই কোনও কিছু নিয়ে অভিযোগ করছি না।’’

Advertisement

বিকল্প রাস্তা যে নেই, তা জোর গলায় বলছেন গিল্ডের সভাপতি ত্রিদিবকুমার চট্টোপাধ্যায় বা সাধারণ সম্পাদক সুধাংশুশেখর দে। তাঁদের কথায়, ‘‘সরকারি সাহায্য ছাড়া এত বড় মেলার আয়োজন করা অসম্ভব।’’ এক সময়ে ময়দানে বইমেলার যুগে মাঠের জন্য ভাড়া লাগত না উদ্যোক্তাদের। ময়দানে বইমেলার শেষ বছরে পাঁচ টাকার টিকিটে ৭০ লক্ষ টাকা আয় হয়েছিল গিল্ডের। মিলনমেলার ভাড়া ছিল দু’-আড়াই কোটি টাকা। তাতে ছাড় দিয়ে ৫০ লক্ষ টাকায় মাঠ দিয়েছিল বাম সরকার। তৃণমূল সরকার সেটা কমিয়ে ২৫ লক্ষ টাকায় দিত। আর এখন সল্টলেকের মাঠে ভাড়া শূন্য। শুধু স্টল বা বিভিন্ন প্যাভিলিয়ন তৈরির খরচ লাগে। তবে বইমেলা ঘিরে মানুষের আগ্রহ আঁচ করে মেলার টিকিট বিক্রি এক দশক আগেই বন্ধ করে দেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তা হলে কি বইমেলাতেও ঢুকে পড়েছে জনমোহিনী রাজনীতি? দিল্লির প্রগতি ময়দানে দু’টি সরকারি বইমেলায় তো টিকিট ৩০ টাকা করে! ত্রিদিববাবু তা মানতে নারাজ! তিনি বলছেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর চোখে বইমেলা বাঙালির কুম্ভমেলা। সেখানে টিকিট থাকতে পারে না! গিল্ডও স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার ঢঙে সরকারি সাহায্যে মেলার আয়োজন করে।’’

কিন্তু যত মানুষ মেলায় ঢোকেন, তাঁদের অনেকেই যে বই কেনেন না, তা পরিসংখ্যানেই স্পষ্ট। কারও কারও মতে, টিকিটের ব্যবস্থা রেখে মেলার আয়োজন হলে বরং বইমেলা স্বাধীন চিন্তার পরিসর হতে পারত। বইমেলার উদ্বোধনী মঞ্চ প্রতি বছরই কার্যত মুখ্যমন্ত্রীর বই প্রকাশের আসর হয়ে ওঠে। গত বার পর্যন্ত ৮৭টি বই প্রকাশের পরে মমতা আশা প্রকাশ করেন, পরের বছর ‘সেঞ্চুরিটা’ হয়ে যাবে। গিল্ড-কর্তা সুধাংশুবাবুর হিসেব, বাংলা-ইংরেজি মিলিয়ে এ বার আরও ১০-১২টি বই প্রকাশিত হতে পারে মুখ্যমন্ত্রীর।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন