ganga

Ganga: ‘গঙ্গাঘাটের ঐতিহ্য থাকলেও নেই পরিচ্ছন্নতার কৌলিন্য!’

পুরসভা জানাচ্ছে, ঘাট ও গঙ্গাতীরে ময়লা না ফেলার সচেতনতা-বার্তা, নির্দিষ্ট বিনের ব্যবস্থা, সবই রয়েছে।

Advertisement

দেবাশিস ঘড়াই

কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ এপ্রিল ২০২২ ০৫:৫৭
Share:

ফাইল চিত্র।

একেই কি ‘স্ববিরোধিতা’ বলে?

Advertisement

অনেকের মতে, হয়তো তা-ই। যে কারণে কলকাতা পুরসভার হেরিটেজ তালিকা অনুযায়ী, নিমতলা, আহিরীটোলা, কুমোরটুলি, কাশীপুর-সহ একাধিক ঘাট ‘গ্রেড ওয়ান’ হেরিটেজভুক্ত হলেও ওই মর্যাদা রক্ষায় ঘাট যতটা পরিচ্ছন্ন থাকার কথা, ততটা রয়েছে কি? অর্থাৎ, শহরের সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ গঙ্গাঘাটের ঐতিহ্য সর্বোচ্চ মর্যাদা পেলেও পরিচ্ছন্নতার নিরিখে তাদের কৌলিন্য নেই কেন? এই প্রশ্নই তো ওঠে। তা-ও এক বার-দু’বার নয়। একাধিক বার।

যে প্রশ্ন আরও জোরদার হয়েছে গঙ্গাঘাটের দূষণ সংক্রান্ত মামলায় জাতীয় পরিবেশ আদালতের করা সাম্প্রতিক মন্তব্যের প্রেক্ষিতে। যেখানে আদালত জানাচ্ছে, মিলেনিয়াম পার্ক থেকে একাধিক ক্রুজ় পর্যটকদের গঙ্গাবক্ষ ভ্রমণে নিয়ে যায়। তবে গঙ্গার ঘাটগুলির যা অবস্থা, তাতে কী দৃশ্য পর্যটকদের সামনে ফুটে ওঠে, তা যথেষ্ট বিস্ময়ের!

Advertisement

প্রসঙ্গত, সংশ্লিষ্ট মামলার প্রেক্ষিতে শহরের গঙ্গার ঘাট ও সংলগ্ন এলাকার দূষণের অবস্থা দেখে রিপোর্ট জমা দেওয়ার জন্য গত ফেব্রুয়ারিতে একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করেছিল আদালত। রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদকে নোডাল এজেন্সি করা হয়েছিল। কেন্দ্র এবং রাজ্যের প্রতিনিধিদের নিয়ে গঠিত ওই কমিটি গত মাসের শেষে সেই ‘ইনস্পেকশন রিপোর্ট’ জমা দেয়। কিন্তু সংশ্লিষ্ট রিপোর্টের যৌক্তিকতা নিয়েই প্রশ্ন‌ তুলেছে আদালত।

আদালত কখনও রিপোর্টটিকে ‘ধোঁয়াশাপূর্ণ’ (ভেগ), ‘ভুল’ (অ্যাপিয়ার্স টু বি ইনকারেক্ট) বলে মন্তব্য করেছে। তা ছাড়া, সংশ্লিষ্ট মামলায় রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ এবং কলকাতা পুরসভার জমা দেওয়া হলফনামায় গঙ্গার ঘাট পরিষ্কার রাখা নিয়ে কী পদক্ষেপ করা হচ্ছে, তার স্পষ্ট দিশা নেই বলে জানানো হয়েছে। দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদকে ‘এক হাত’ নিয়ে আদালত বলেছে, পর্ষদের সুপারিশ সাধারণ মানের, যা প্রত্যাশিত নয়। অথচ, গঙ্গার ঘাটের দূষণ রুখতে এবং নিয়মভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ সংক্রান্ত স্পষ্ট তথ্যই প্রত্যাশিত ছিল পর্ষদের কাছে।

যদিও পুরসভা জানাচ্ছে, ঘাট ও গঙ্গাতীরে ময়লা না ফেলার সচেতনতা-বার্তা, নির্দিষ্ট বিনের ব্যবস্থা, সবই রয়েছে। পুরসভার এক শীর্ষ কর্তার কথায়, ‘‘শহরের ঘাটগুলি শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি বন্দর কর্তৃপক্ষের অধীনে রয়েছে। তবে পুরসভার উদ্যান, নিকাশি এবং কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা দফতর প্রতিদিন ঘাটগুলির রক্ষণাবেক্ষণ এবং পরিষ্কার রাখার কাজ করে।’’

যদিও আদালতের কাছে পুরসভার এই দাবি বিশেষ ‘মান্যতা’ পায়নি। বরং আদালতের ‘তোপের’ মুখে পড়েছে কখনও দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ, কখনও পুরসভা। এমনকি, বাদ যায়নি কেন্দ্রও! কারণ, কলকাতায় গঙ্গাতীরের সামগ্রিক রক্ষণাবেক্ষণে ‘ন্যাশনাল মিশন ফর ক্লিন গঙ্গা’র (এনএমসিজি) ভূমিকা কী, সে বিষয়ে ১২ মে-র মধ্যে তাদের রিপোর্ট জমা দিতে বলা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট মামলার আবেদনকারী সুপ্রভা প্রসাদের আইনজীবী পৌষালি বন্দ্যোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘বিশেষজ্ঞ কমিটিকে ফের সরেজমিনে ঘাট পরিদর্শন করে নতুন রিপোর্ট জমা দিতে বলেছে পরিবেশ আদালত।’’
তবে তাতে গঙ্গাঘাট-সহ সংলগ্ন এলাকায় আবর্জনার দাপট কমবে কি? তা নিয়ে সংশয়ী অনেকেই। এক ঐতিহ্য সংরক্ষণবিদের বক্তব্য, ‘‘এখনও পর্যন্ত যা ঘটনাপ্রবাহ, তাতে এটা স্পষ্ট, গঙ্গাঘাটগুলি ঐতিহ্যের মর্যাদা পেলেও তাদের পরিচ্ছন্নতার কৌলিন্য নেই!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন