এথান দীর্ঘদিন ধরে অত্যাচারিত, ইঙ্গিত তদন্তে

দীর্ঘদিন ধরে অত্যাচার চলত বালকের উপরে। দমদমের এম সি গার্ডেনে নিহত বালক এথান আব্রাহামের দেহের ময়না-তদন্তে এমনই ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে বলে সোমবার পুলিশ সূত্রের খবর।  

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১১ ডিসেম্বর ২০১৮ ০৩:০০
Share:

মর্মান্তিক: এই ঘর থেকেই মেলে এথানের দেহ। নিজস্ব চিত্র

দীর্ঘদিন ধরে অত্যাচার চলত বালকের উপরে। দমদমের এম সি গার্ডেনে নিহত বালক এথান আব্রাহামের দেহের ময়না-তদন্তে এমনই ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে বলে সোমবার পুলিশ সূত্রের খবর।

Advertisement

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, আট বছরের ছেলে এথানকে মারার পরে মা মালবিকা সেনকেও খুনের চেষ্টা করেন পৌলোমী সেন। পুলিশ জানিয়েছে, ময়না-তদন্তের প্রাথমিক রিপোর্ট অনুযায়ী, ওই বালককে শ্বাসরোধ করে খুন করা হয়েছে। হাসপাতাল সূত্রের খবর, এথানের মৃত্যু নিশ্চিত করতে তার শিরা কাটার চেষ্টাও করেন পৌলোমী। তবে এমন অত্যাচার এথানের উপরে চলতই বলে ইঙ্গিত মিলেছে ময়না-তদন্তের প্রাথমিক রিপোর্টে। মায়ের বিরুদ্ধে ছেলেকে খুন করার অভিযোগ দায়ের করে ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ।

রবিবার বিকেল সাড়ে ৫টা নাগাদ পৌলোমীকে তিনতলা বাড়ির সামনের মাঠে পড়ে থাকতে দেখেন প্রতিবেশী সুমনা সাহা। এ দিন তিনি বলেন, ‘‘সন্ধ্যা দেওয়ার সময়ে, এক মহিলা বাঁচাও বাঁচাও বলে চিৎকার করছিলেন। আমাকে দেখে বললেন, ছাদ থেকে পড়ে গিয়েছেন।’’ তবে মা ও মেয়ের দাবি অনুযায়ী, ঘটনার সূত্রপাত শনিবার রাতে। সেই রাতেই মেয়ে নাতিকে মেরে তাঁকে মারার চেষ্টা করেন বলে জানিয়েছেন সিপিএমের প্রাক্তন কাউন্সিলর মালবিকা। একই বক্তব্য পৌলোমীরও। মালবিকা জানান, পরদিন বিকেলে তিনি বুঝতে পারেন, নাতি এথানকে তাঁর মা খুন করেছেন! এতটা দেরি হল কেন বুঝতে? মালবিকা বলেন, ‘‘প্রায়ই তো বেলা পর্যন্ত ঘুম থেকে উঠত না। ভেবেছিলাম, মা-ছেলে ঘুমোচ্ছে। বিকেলে মেয়ে আমাকে দেখে ছাদে চলে যাওয়ার পরে ওদের ঘরে ঢুকে সব বুঝতে পারলাম।’’

Advertisement

এথানের স্কুল যাতায়াত এবং বাজার এনে দেওয়ার জন্য রিকশচালক সুশান্ত হালদারের যাতায়াত ছিল পৌলোমীদের এম সি গার্ডেনের ওই ভাড়া বাড়িতে। সুশান্ত বলেন, ‘‘বিকেলে মালবিকাদি ফোন করে ডেকে পাঠান। বাড়ি যাওয়া মাত্র আমাকে বলেন, নাতির লাশটার কী হবে? নাতির কী হয়েছে জানতে চাইলে বলেন, ছেলেকে মেরে মেয়ে ছাদ থেকে ঝাঁপ দিয়েছেন।’’ ওই বাড়ির মালিক অজয় দে-র অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। এ দিন অজয়বাবু বলেন, ‘‘এই মাসে বাড়ি ছেড়ে দেওয়ার কথা ছিল। কোনও দিন ভাড়া নিয়ে সমস্যা হয়নি।’’ নাগেরবাজারে এথানের স্কুলের অধ্যক্ষা বলেন, ‘‘কে জি-তে পড়ত এথান। দু’সপ্তাহ ধরে স্কুলে আসছিল না। যোগাযোগ করা হলে ওর মা জানান, কিছু সমস্যা চলছে।’’

পুলিশ সূত্রের খবর, বাজারে প্রচুর টাকা দেনা ছিল পৌলোমীর। এর কারণে অনটনের কথা জানিয়েছেন ওই মা এবং মেয়েও। ব্যারাকপুর কমিশনারেটের ডিসি (জোন টু) আনন্দ রায় বলেন, ‘‘ঠিক কী কারণে এই ঘটনা, তা জানতে আরও জিজ্ঞাসাবাদের প্রয়োজন।’’ পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনাস্থল থেকে ধারাল অস্ত্র মিলেছে। গলা টিপে খুন করার আগে এথানকে কিছু খাওয়ানো হয়েছিল কি না, তা ভিসেরা রিপোর্ট এলে স্পষ্ট হবে। আর্থিক অনটনের পাশাপাশি এই ঘটনার পিছনে আরও কোনও কারণ আছে কি না, তা-ও খতিয়ে দেখা হবে বলে পুলিশ সূত্রের খবর। সোমবার মালবিকাকে হাসপাতালে দেখতে যান স্থানীয় তৃণমূল নেতা রাজু সেনশর্মা। তিনি বলেন, ‘‘মালবিকাদির সঙ্গে কথা হল। গোটা ঘটনায় আমি হতবাক।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন