এমনই হাল সেতুর নীচে রাস্তার।
বাড়ির বারান্দা ঝুলে আছে বিপজ্জনক ভাবে। নীচে কয়েকটি বালির বস্তা দিয়ে কোনও রকমে ঠেকনা দেওয়া রয়েছে। বিপদ এড়াতে পথচারীদের জন্য বন্ধ ওই ফুটপাথও। এখানেই শেষ নয়, ফুটপাথের পাশে ধ্বংসস্তূপে জল জমে তা রীতিমতো মশার আঁতুড়ঘর হয়ে দাঁড়িয়েছে। দুর্ঘটনার ৯০ দিন পরেও এমনই হাল ভেঙে পড়া বিবেকানন্দ উড়ালপুল সংলগ্ন এলাকার।
গত ৩১ মার্চ পোস্তার কাছে উড়ালপুলের একাংশ বিবেকানন্দ রোড লাগোয়া একটি বাড়ির বারান্দার উপরে ভেঙে পড়ে। তার পর থেকেই বিপজ্জনক ভাবে ঝুলে আছে বারান্দাটি। যার জেরে এলাকার বেশ কয়েকটি দোকান খোলা যাচ্ছে না। বুধবার স্থানীয় এক ব্যবসায়ী জগদ্বন্ধু নন্দী বলেন, ‘‘৩১ মার্চ উড়ালপুল ভেঙে পড়ার পরে মেয়র ঘটনাস্থলে দাঁড়িয়ে বলেছিলেন, কেএমডিএ-র তরফে বারান্দা সংস্কার করা হবে। কিন্তু এখনও তা হয়নি। ফলে আমরা দোকানও খুলতে পারছি না।’’ এ দিন মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়কে এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি অবশ্য কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তবে কেএমডিএ-র এক আধিকারিক বলেন, ‘‘পোস্তার কাছে বিবেকানন্দ রোড লাগোয়া বারান্দাটির সংস্কারের কাজ শীঘ্রই শুরু হবে।’’ কিন্তু দুর্ঘটনার পরে ভগ্নপ্রায় ওই বারান্দার সংস্কারের কাজ শুরু করতেই তিন মাস লেগে গেল? তার অবশ্য কোনও জবাব মেলেনি ওই আধিকারিকের কাছে।
বুধবার দুপুরে পোস্তার কাছে বিবেকানন্দ উড়ালপুল সংলগ্ন এলাকায় গিয়ে যত্রতত্র দেখা গেল ধ্বংসস্তূপ। কোথাও জমে আবর্জনা। তার উপরে উড়ালপুল ভাঙার পর থেকেই বিবেকানন্দ রোডের এক দিকে প্রচুর জল জমছে বলে জানালেন স্থানীয়েরা। আর ধ্বংসস্তূপে জল জমে বাড়ছে মশা। ফলে এলাকায় ফের নতুন করে ম্যালেরিয়ার আতঙ্ক ছড়াচ্ছে বলে জানাচ্ছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। ইতিমধ্যে এলাকায় পাঁচ জনের ম্যালেরিয়া হয়েছে বলেও জানা গিয়েছে।
ভাঙা বারান্দায় বালির বস্তার ঠেকনা। বুধবার, পোস্তায় বিশ্বনাথ বণিকের তোলা ছবি।
পুরসভার তরফে জানানো হয়েছে, ওই এলাকায় মাটির নীচে জলের পাইপে ছোটখাটো ফুটো হয়েছে। তা থেকেই জল জমছে। দ্রুত ওই পাইপ মেরামত করা হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন পুরসভার ডিজি (জল সরবরাহ) বিভাস মাইতি। কলকাতা পুরসভার মেয়র পারিষদ (স্বাস্থ্য) অতীন ঘোষ বলেন, ‘‘পোস্তার কাছে ভেঙে পড়া বিবেকানন্দ উড়ালপুল সংলগ্ন এলাকায় মশার বংশবৃদ্ধি হতে পারে বলে আগেই আমরা সতর্ক রয়েছি। জল জমে যাতে সেই আশঙ্কা আরও না বাড়ে তাই এলাকায় বেশি করে মশা মারার তেল স্প্রে করা হবে। এলাকায় অতিরিক্ত স্বাস্থ্যকর্মীও কাজ করবেন।’’ বুধবার ওই জল জমা অংশে মশা মারার তেল ছড়াতে দেখা যায় কলকাতা পুরসভার স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মীদের।
ওই এলাকার একদিকের রাস্তা রবীন্দ্র সরণি চালু হয়েছে দুর্ঘটনার দিন কয়েকের মধ্যেই। কিন্তু তিন মাস পার হয়ে গেলেও মালাপাড়া থেকে গিরীশপার্ক পর্যন্ত বিবেকানন্দ রোডে যান চলাচল এখনও বন্ধ। আর এই রাস্তা বন্ধ থাকায় রাস্তার দু’পাশের ব্যবসায় ভাটা পড়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। ‘‘নাম কা ওয়াস্তে দোকান খোলা রাখতে হচ্ছে। কোনও রকমে দোকানের ভাড়াটুক হচ্ছে।’’— জানালেন এলাকার এক ব্যবসায়ী।