Dengue

মা হওয়া হল না, ডেঙ্গি কাড়ল প্রাণ

সপ্তাহ দুয়েক আগে হাত-পা ও পেটে ব্যথা শুরু হয় ন’মাসের অন্তঃসত্ত্বা বছর চব্বিশের তরুণী পূর্ণিমা বিশ্বাসের। শুরু হয় বমিও।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৫ নভেম্বর ২০১৭ ০২:১৪
Share:

পূর্ণিমা বিশ্বাস।

নতুন সদস্য আসার দিন গুনছিল পরিবার। হঠাৎই থমকে গেল সব। ডেঙ্গির সঙ্গে লড়াইয়ে হার মানতেই হল দুই মাকে।

Advertisement

সপ্তাহ দুয়েক আগে হাত-পা ও পেটে ব্যথা শুরু হয় ন’মাসের অন্তঃসত্ত্বা বছর চব্বিশের তরুণী পূর্ণিমা বিশ্বাসের। শুরু হয় বমিও। বাঙুর হাসপাতালে নিয়ে গেলে রক্ত পরীক্ষায় ধরা পড়ে এন এস ১ পজিটিভ। পরিবারের অভিযোগ, অন্তঃসত্ত্বা ডেঙ্গি আক্রান্তকে পরিষেবা দেওয়ার পরিকাঠামো নেই জানিয়ে তাঁকে ফিরিয়ে দেয় হাসপাতাল। তবু হাল ছাড়েননি পূর্ণিমার মা মুন্না হালদার। মেয়ে ও মেয়ের গর্ভস্থ সন্তানকে বাঁচানোর আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে গিয়েছেন। কিন্তু শেষরক্ষা হল না। শুক্রবার রাতে মৃত্যু হয় টালিগঞ্জের ৯৪ নম্বর ওয়ার্ডের ঝড়োবস্তির ডেঙ্গি আক্রান্ত অন্তঃসত্ত্বা পূর্ণিমার।

আরও পড়ুন: ডেঙ্গি রোগীর মৃত্যু ঘিরে উত্তাল মহেশতলা

Advertisement

মৃতার পরিবার জানিয়েছে, ২৪ অক্টোবর বাঙুর থেকে ফিরিয়ে দিলে ২৬ তারিখ পূর্ণিমার অবস্থার অবনতি হয়। সে দিন তাঁকে বাইপাসের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এক সপ্তাহ সেখানে চলে চিকিৎসা। সন্তানহারা মা মুন্না বলেন, ‘‘ডেঙ্গি হওয়ায় মেয়েটা ভয় পেয়ে গিয়েছিল। বারবার বলছিল, বাচ্চাটা সুস্থ থাকবে তো? বলেছিলাম, সব ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু পারলাম কই?’’

আবর্জনায় ভর্তি স্থানীয় জলাশয়। শনিবার, টালিগঞ্জ এলাকায়। নিজস্ব চিত্র

এ দিন দেখা গেল, পূর্ণিমার মৃত্যুতে ভেঙে পড়েছেন এলাকার বাসিন্দারাও। সঙ্গে অভিযোগ তুলেছেন পুরসভার ভূমিকা নিয়ে। বাসিন্দাদের একাংশ জানান, বৃষ্টি হলেই ওই এলাকায় জল জমে যায়। ডেঙ্গির প্রকোপ বাড়লেও পুরসভার কাছে জমা জল পরিষ্কারের দাবি জানিয়ে লাভ হয় না। ওই বস্তির কয়েক হাত দূরেই একটি জলাশয় রয়েছে। এ দিন সেখানে গিয়ে দেখা গেল, স্বচ্ছ জল তো দূর অস্ত্‌, আবর্জনায় ভরে রয়েছে জলাশয়টি। এলাকাবাসীর অভিযোগ, বস্তির একাধিক বাসিন্দা জ্বরে আক্রান্ত। ডেঙ্গি নিয়ে কেউ ভর্তি হাসপাতালে, কারও বা বাড়িতেই চিকিৎসা চলছে। পুরকর্তাদের বারবার সে কথা জানালেও এখন পর্যন্ত ওই এলাকা পরিদর্শন হয়নি।

যদিও অভিযোগ মানতে নারাজ পুরকর্তারা। তাঁদের দাবি, ঝড়োবস্তির কাছেই উন্মুক্ত ভ্যাট ছিল। এলাকা অপরিচ্ছন্ন থাকত। পুরসভাই তা সাফ করেছে। পাশাপাশি, নিয়মিত পরিদর্শনও করা হয়।

পূর্ণিমার মৃত্যু প্রসঙ্গে ওই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর কোনও কথা বলতে রাজি হননি। লাগোয়া ৯৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তপন দাশগুপ্ত বলেন, ‘‘ঘটনাটি দুঃখজনক। কিন্তু ডেঙ্গি মোকাবিলায় পুরসভা যথেষ্ট তৎপর। মশা নিধনের পরিকল্পনা থেকে ৯৪ নম্বর ওয়ার্ডও বাদ যায়নি। কাউন্সিলরেরা রাস্তায় দাঁড়িয়ে ডেঙ্গি নিয়ন্ত্রণের কাজ চালাচ্ছেন। বাসিন্দাদের অভিযোগ ঠিক নয়।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন