Corona

ঝুঁকি বেশি, তাই নজর থাক সংক্রমিত প্রসূতিদের উপরেও

গর্ভাবস্থায় রক্ত জমাট বাঁধার আশঙ্কা থাকে। যা বাড়ে কোভিডের কারণেও। তাই নজর দিতে হবে সে দিকেও।

Advertisement

শান্তনু ঘোষ

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৯ মে ২০২১ ০৫:৪০
Share:

প্রতীকী ছবি।

এক জন প্রসূতি করোনা আক্রান্ত হলে তাঁর বিপদ কতটা?

Advertisement

সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ে এটাই এখন বহুল চর্চিত প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে সব ক্ষেত্রেই যে তাঁদের অবস্থা খারাপ হচ্ছে, তেমনটা এখনও জানা যায়নি বলে জানাচ্ছে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর। যদিও গত ৪ মে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, গর্ভবতী নন এমন মহিলাদের তুলনায় কোভিডে আক্রান্ত গর্ভবতীদের ঝুঁকি বেশি। অনেক ক্ষেত্রে তাঁদের আইসিইউয়ে রাখতে হতে পারে। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অনির্বাণ দলুই বলেন, ‘‘প্রসূতিদের ক্ষেত্রে শরীরে প্রদাহ সৃষ্টিকারী বিভিন্ন সূচকের মাত্রা বেড়ে যায়। তাই তাঁদের ক্ষেত্রে আলাদা গুরুত্ব দিতে হবে। এ ছাড়া গর্ভাবস্থায় রক্ত জমাট বাঁধার আশঙ্কা থাকে। যা বাড়ে কোভিডের কারণেও। তাই নজর দিতে হবে সে দিকেও।’’

করোনা পরিস্থিতিতে প্রসূতিতের মানসিক স্বাস্থ্যের দিকেও নজর রাখা জরুরি বলে মনে করছেন মনোরোগ চিকিৎসকেরা। তাঁদের ব্যাখ্যা, প্রত্যেক প্রসূতির মনে মা হওয়ার আনন্দ যেমন থাকে, তেমনই সন্তানের জন্ম দিতে গিয়ে যদি সমস্যা হয়, সেই ভেবে থাকে অজানা আশঙ্কাও। এর উপরে করোনার আতঙ্ক আরও বেশি চাপ তৈরি করছে বলে জানাচ্ছেন ‘ইনস্টিটিউট অব সাইকায়াট্রি’-র অধিকর্তা, মনোরোগ চিকিৎসক প্রদীপ সাহা। তিনি বলেন, ‘‘কোভিড হলে আমার কী হবে, গর্ভস্থ সন্তানের কী হবে, এই অতিরিক্ত আশঙ্কায় অবসাদ দেখা দিতে পারে।’’

Advertisement

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা আরও জানিয়েছে, করোনা আক্রান্ত প্রসূতিদের মধ্যে অনেকেরই সময়ের আগে প্রসব হচ্ছে। সেই সদ্যোজাতদের রাখতে হচ্ছে নিওনেটাল ইন্টেনসিভ কেয়ার ইউনিটে (নিকু)। এ ছাড়াও, কোমর্বিডিটি রয়েছে অথবা ৩৫ বছরের ঊর্ধ্বে প্রসূতিরা করোনা আক্রান্ত হলে তাঁদেরও ঝুঁকি রয়েছে। কিন্তু এ সব কারণে কোনও পরিবারই যাতে ভ্রান্ত সিদ্ধান্ত না নেয়, তার জন্য একটি পরামর্শ-নির্দেশিকা (অ্যাডভাইজ়রি) প্রকাশ করেছে স্বাস্থ্য দফতর। তাতে জানানো হয়েছে, এখনও পর্যন্ত করোনা আক্রান্ত কোনও প্রসূতির মিসক্যারেজ হওয়ার তথ্য মেলেনি। এমনকি, সংক্রমিত হওয়ার কারণে গর্ভপাত করানোরও প্রয়োজন নেই। চিকিৎসকেরা বলছেন, ‘‘করোনা আক্রান্ত বহু প্রসূতি স্বাভাবিক সন্তানের জন্ম দিচ্ছেন। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সদ্যোজাত কোভিড নেগেটিভ থাকছে।’’

আরও বলা হয়েছে, করোনা চিকিৎসার ওষুধের সঙ্গে গর্ভাবস্থার সময়ের ওষুধ— আয়রন, ক্যালসিয়াম, ফলিক অ্যাসিড বন্ধ করা চলবে না। স্ত্রী-রোগ চিকিৎসক অভিনিবেশ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘গর্ভবতী থাকাকালীন শরীরের ইমিউনিটি মডিলিউটেড হয়ে থাকে। সেই কারণে কোভিড হলেও সাইটোকাইন ঝড় কম হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে কোভিড-আক্রান্ত প্রসূতিকে বুডেসোনাইড ইনহেলার দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু পাশাপাশি, গর্ভাবস্থার পরিচর্যার ওষুধও খেতে হবে।’’ তিনি আরও জানাচ্ছেন, যে সব প্রসূতি কোভিড আক্রান্ত নন, তাঁদেরও ভিটামিন সি, জিঙ্ক দেওয়া হচ্ছে। শ্বাসপ্রশ্বাস ঠিক রাখতে হালকা ব্যায়াম করারও পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

তবে গর্ভাবস্থায় মৃদু শ্বাসকষ্ট হওয়াটা স্বাভাবিক বলেই জানিয়ে অভিনিবেশবাবু বলেন, ‘‘এই সময়ে প্রোজেস্টেরন হরমোনের মাত্রা বৃদ্ধির কারণে মৃদু শ্বাসের সমস্যা হয়ে থাকে। মনে হয়, খুব গভীর ভাবে শ্বাস নিতে হচ্ছে ও তার জন্য অনেক পরিশ্রম করতে হচ্ছে।’’ কিন্তু কোনও প্রসূতির শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা দ্রুত কমতে থাকলে তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা প্রয়োজন বলেও জানাচ্ছেন তিনি। স্বাস্থ্য দফতরের পরামর্শ-নির্দেশিকাতেও বলা হয়েছে, তীব্র শ্বাসকষ্টের মতো গুরুতর উপসর্গ দেখা দিলে গর্ভবতীদেরও হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে।

আবার, করোনা আক্রান্ত প্রসূতির স্বাভাবিক প্রসবের উপরেই জোর দিয়েছে স্বাস্থ্য দফতর। যদিও চিকিৎসকদের একাংশ জানাচ্ছেন, অনেক সময়েই রোগীর অবস্থা বুঝে জরুরি প্রয়োজনে সিজ়ার করতে হচ্ছে।পাশাপাশি স্বাস্থ্য দফতর স্পষ্ট জানিয়েছে, করোনা আক্রান্ত মা অবশ্যই হাত ধুয়ে, মাস্ক পরে সন্তানকে স্তন্যপান করাতে পারেন। তবে কেউ মনে করলে সরাসরি স্তন্যপান না করিয়ে দুধ বার করে ফিডিং বোতলেও খাওয়াতে পারেন।

একই সঙ্গে প্রতিষেধকের বিষয়ে অনির্বাণবাবু বলেন, ‘‘গর্ভবতীদের উপরে প্রতিষেধকের পরীক্ষামূলক প্রমাণ নেই। তাই তাঁদের দেওয়া হচ্ছে না। তবে এটুকু নিশ্চিত বলা যায়, যদি ভবিষ্যতে গর্ভবতীদের জন্য করোনার কার্যকর প্রতিষেধক মেলে, মা ও সন্তান উভয়ের জন্যই সেটি ভাল হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন