উৎসবের প্রস্তুতি

সব পাড়াতেই এখন পুজোর সাজ। চলছে মণ্ডপ তৈরি। প্রতিমা নির্মাণ। জমে উঠেছে উৎসবের প্রস্তুতি। কোন পাড়ায় কী হচ্ছে তার আগাম হদিস।এ বার আমরা প্রথাগত পুজোর পাশাপাশি বাংলার সঙ্গে ওড়িশা ও ঝা়ড়খণ্ডের ‘কারাম’ উৎসবের মেলবন্ধন ঘটানোর চেষ্টা করছি। কদম গাছকে কেন্দ্র করে পালিত হয় কারাম উৎসব। তারই সঙ্গে সাযুজ্য রেখে মণ্ডপ সাজবে নানা লোক-চিত্রকলায়।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ০০:৩০
Share:

ছবি: দেশকল্যাণ চৌধুরী।

৬৬ পল্লি

Advertisement

এ বার আমরা প্রথাগত পুজোর পাশাপাশি বাংলার সঙ্গে ওড়িশা ও ঝা়ড়খণ্ডের ‘কারাম’ উৎসবের মেলবন্ধন ঘটানোর চেষ্টা করছি। কদম গাছকে কেন্দ্র করে পালিত হয় কারাম উৎসব। তারই সঙ্গে সাযুজ্য রেখে মণ্ডপ সাজবে নানা লোক-চিত্রকলায়। সপ্তমী এবং অষ্টমীতে থাকছে সবার জন্য ভোগের বন্দোবস্ত। পুজোর ঠিক পরেই বড় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করার ভাবনাও মাথায় আছে। সেখানে নতুন শিল্পীদের নানা সুযোগ করে দেওয়ার প্রচেষ্টা থাকছে। সব মিলিয়ে আমাদের ‘হর্ষপার্বণ’-এর উত্তেজনার পারদ কিন্তু চড়ছে।

Advertisement

পদ্মপুকুর বারোয়ারি

আমাদের পুজোর সঙ্গে থিমের সেই অর্থে কোনও সম্পর্ক নেই। বরাবরের মতো এ বারও সাবেক প্রতিমা। দুর্গাপুজো আসলে আমাদের কাছে পুনর্মিলন। পাড়া ছেড়ে যাওয়া কত মানুষ, বিয়ে হয়ে যাওয়া পাড়ার মেয়েরা ফিরে আসেন এই সময়টায়। অষ্টমীর দিন সবাই মিলে দুপুরে খাওয়ার ব্যবস্থা থাকে। পাড়ার মেয়ে-বৌয়েরা মিলে অন্ত্যাক্ষরী ইত্যাদি ছোট ঘরোয়া অনুষ্ঠান করে। তাই আমাদের কাছে পুজো আসলে ফিরে দেখার রঙিন দিন।

লেক গার্ডেন্স সর্বজনীন

আমাদের পুজোর এ বার হীরক জয়ন্তী। থিম-পুজোর ভিড়ে গা না ভাসিয়ে প্রতিমা সাবেক ধাঁচের। মন্দিরের আকারে তৈরি মণ্ডপের ভিতরে-বাইরে থাকবে জমজমাট নকশা। শিল্পী দীপক ঘোষের ভাবনা ইতিমধ্যেই রূপ পেতে শুরু করে দিয়েছে। মণ্ডপের কাঠামো প্রায় তৈরি, চলছে ভিতরের অলঙ্করণের কাজ। চতুর্থীর দিন আমরা লোপামুদ্রা মিত্র এবং দোহার-কে নিয়ে অনুষ্ঠান করতে চলেছি। পঞ্চমী এবং নবমীতেও থাকবে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। পুজোর দিনগুলোয় থাকবে এক সঙ্গে খাওয়াদাওয়াও।

ভবানীপুর স্বাধীন সঙ্ঘ

পৌরাণিক যুগে গাছকে দেবতা হিসেবে পুজো করা হত। আবার বিজ্ঞানে গাছের অবদান তো অপরিসীম। কিন্তু নির্বিচারে সেই সবুজ ধ্বংস করে আমরা নিজেদের বিপদ নিজেরাই ডেকে আনছি। তার থেকে বাঁচার উপায় কী, আমরা তা-ই ফুটিয়ে তুলব পুরো মণ্ডপে। সে জন্য আমাদের মণ্ডপ সাজছে গাছের ছাল, বাঁশ, কাঠ দিয়ে। থাকছে নানা সামাজিক কর্মসূচিও। অষ্টমীতে ছোট ছোট মেয়েদের নিয়ে থাকবে কুমারী পূজা। সব মিলিয়ে কিন্তু আমাদের পুজো সচেতনতার বার্তা দিতেও তৈরি।

বড়িশা সর্বজনীন

আমাদের এ বারের বিষয় ‘বৃক্ষরূপেণ সংস্থিতা’। গাছ সভ্যতার বড় আশ্রয়। এই বার্তা দর্শকদের কাছে পৌঁছে দিতে একচালা প্রতিমা থাকবে গাছের কোটরের মধ্যে। মণ্ডপ
জুড়ে থাকবে বিভিন্ন গাছ ও প্রাণীর মডেল। পুরো মণ্ডপ সাজবে চন্দননগরের আলোয়। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের পর্যটন দফতরের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে পুজো প্রাঙ্গণে থাকছে হস্তশিল্পের দোকান। আমাদের পুজোর বাড়তি আকর্ষণ অষ্টমী এবং নবমীতে এক সঙ্গে খাওয়াদাওয়া এবং বাউল গান। এর পাশাপাশি, অন্যান্য বারের মতো মহালয়া থেকে লক্ষ্মীপুজো পর্যন্ত মেলা চলবে।

বড়িশা উদয়ন পল্লি

আমাদের পুজো এ বার ‘বর্ণে-ছন্দে নব আনন্দে’। ভাবনা হিসেবে বেছে নিয়েছি শাস্ত্রীয় নৃত্যকে।
থিমের সঙ্গে মানানসই প্রতিমা তৈরি হচ্ছে। উদ্বোধন চতুর্থীর সন্ধ্যায়। তার আগে থাকছে বসে আঁকো প্রতিযোগিতা। থাকবে বস্ত্র বিতরণও। আমাদের যে টাকা চাঁদা ওঠে, তার প্রায় পুরোটাই খরচ করি পুজো ও মণ্ডপসজ্জায়। যেটুকু অবশিষ্ট থাকে, তা ত্রাণ তহবিলে দিই। প্রস্তুতি প্রায় ৬০ শতাংশ সম্পূর্ণ।

যাত্রা শুরু সঙ্ঘ (পাটুলি)

আমাদের মণ্ডপে ঢুকলেই আপনি পৌঁছে যাবেন পুরনো চিৎপুরে। মণ্ডপে থাকবে কুমোরটুলি, যাত্রার বিভিন্ন দৃশ্য। আমরা একটা ট্রামের মডেল রাখারও চেষ্টা করছি। প্রত্যেক নারীর মধ্যেই আছে দেবী-শক্তি— এই ভাবনায় সাজবে মণ্ডপ। সঙ্গে ডাকের সাজের সনাতন প্রতিমা। প্রস্তুতি চলছে জোরকদমে। উৎসবের আনন্দ সকলের সঙ্গে ভাগ করে নিতে পঞ্চমীর দিন আমরা বস্ত্র বিতরণের আয়োজন করেছি। এ ছাড়া অষ্টমী-নবমীতে মেতে উঠব এক সঙ্গে পাত পেড়ে খাওয়ার আনন্দে।

খেয়ালী সঙ্ঘ (বাঁশদ্রোণী)

কাল্পনিক মন্দিরের আদলে মণ্ডপ তৈরি হচ্ছে আমাদের। কাঠামো থেকে শুরু করে কারুকার্য, সব কিছুই হচ্ছে টিন ব্যবহার করে। সাবেক আদলের সঙ্গে আধুনিক শিল্প মিলে ব্যতিক্রমী রূপে থাকবেন মা দুর্গা। কাজ চলছে জোরকদমে। পঞ্চমীর দিন পাড়ার বাসিন্দারা মঞ্চস্থ করবেন ‘মহিষাসুরমর্দিনী’। অন্যান্য দিনেও থাকছে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। আর সপ্তমী-নবমীর দুপুরের খাওয়া ছাড়া পুজো যেন অসম্পূর্ণ লাগে।

অরুণোদয় সঙ্ঘ (গাঙ্গুলিবাগান)

শালবল্লায় কালো রং করা দিয়ে শুরু হয়েছিল আমাদের পুজো-প্রস্তুতি। কারণ, আমাদের মণ্ডপ এ বার নাটমন্দিরের আদল নেবে শালবল্লার ব্যবহারেই। নাটমন্দিরের মধ্যে মানানসই সাবেক প্রতিমা। এই পুজোর সবচেয়ে বড় আকর্ষণ সবাই মিলে দিনভর হুল্লোড় আর আড্ডা। এই আড্ডায় কিন্তু আমরা ম্যাডক্স স্কোয়ারের চেয়ে কিছুমাত্র পিছিয়ে নেই। পুজোর সময়ে মাধ্যমিক এবং উচ্চ-মাধ্যমিকে কৃতী পড়ুয়াদের সংবর্ধনা দিই আমরা।

বেচারাম চ্যাটার্জি রোড

উষ্ণায়নের কুপ্রভাব রোখার অন্যতম উপায় বন সংরক্ষণ। আমাদের, বেচারাম চ্যাটার্জি রোড সর্বজনীনের (বেহালা) মণ্ডপে থাকবে এই বার্তাই। কাঠ, বাঁশ, গাছ ইত্যাদি প্রাকৃতিক জিনিসে সাজবে মণ্ডপ। প্রতিমায় থাকছে মাটির সাজ। এলাকার তরুণ শিল্পী তরুণ বেরার ভাবনায় শিউলি, পদ্মের সাজে মণ্ডপে উঠে আসবে এক টুকরো শরৎ-প্রকৃতি। পুজোর দিনগুলিতে থাকছে কচিকাঁচাদের নিয়ে বসে আঁকো প্রতিযোগিতা, অন্ত্যাক্ষরী, রবীন্দ্রসঙ্গীতের অনুষ্ঠান। উপরি পাওনা অষ্টমীর দিন ভোগ বিতরণ ও পাত পেড়ে খাওয়া। সকলের যোগদান ও উৎসাহে আমাদের পুজো আক্ষরিক অর্থেই সর্বজনীন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন