saraswati puja row in Presidency University

‘মানায় না’! প্রেসিডেন্সিতে সরস্বতী পুজো করার ‘জেদ’ সমর্থন করছেন না টিএমসিপিরই শীর্ষ নেতা

প্রেসিডেন্সিতে সরস্বতী পুজোর দাবিতে একটি দীর্ঘ ফেসবুক পোস্ট করেছিল পিইউটিএমসিপি। যার বক্তব্য ছিল, শিক্ষাঙ্গনে ধর্মনিরপেক্ষতার ওজর তুলে পুজো করতে দেন না কর্তৃপক্ষ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২২ জানুয়ারি ২০২৩ ১৮:৩৮
Share:

প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ে সরস্বতী পুজো করার চ্যালেঞ্জ ছুড়েছিল তৃণমূল ছাত্র পরিষদ। রবিবার টিএমসিপির রাজ্য সম্পাদক সুপ্রিয় চন্দ তার বিরোধিতা করেছেন। গ্রাফিক— সনৎ সিংহ

প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ে সরস্বতী পুজোর দাবি তুলেছে তৃণমূল ছাত্র পরিষদ। কিন্তু দেখা গেল সেই দাবি নিয়ে তাদের নিজেদের মধ্যেই রয়েছে দ্বন্দ্ব। প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃণমূল ছাত্র পরিষদ (পিইউটিএমসিপি) যেখানে ‘‘পুজো করে দেখিয়ে দেব’’ বলে চ্যালেঞ্জ নিয়েছে, সেখানে টিএমসিপির রাজ্য সম্পাদক পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় আনন্দবাজার অনলাইনকে জানালেন, ‘‘বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহ্যের সঙ্গে এ সব মানায় না। আমি চাই না কেউ জেদ করে বসে থাকুক।’’

Advertisement

প্রেসিডেন্সিতে সরস্বতী পুজোর দাবিতে একটি দীর্ঘ ফেসবুক পোস্ট করেছিল পিইউটিএমসিপি। সেই ফেসবুক পোস্টের বক্তব্য ছিল, শিক্ষাঙ্গনে ধর্মনিরপেক্ষতার ওজর তুলে প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ে সরস্বতী পুজো করতে দেন না কর্তৃপক্ষ। যা আদতে বাম ছাত্র সংগঠনের চাপে কর্তৃপক্ষের ভয় পাওয়ার ফল। কিন্তু এ বার বিশ্ববিদ্যালয়ে সরস্বতী পুজো করা কেউ আটকাতে পারবে না। ওই ফেসবুক পোস্টেই ‘‘পিইউটিএমসিপি সরস্বতী পুজো করে দেখাবে’’ বলে লেখে তারা। পিইউটিএমসিপির এই ফেসবুক পোস্টের জবাবেই সামাজিক মাধ্যমে একটি পাল্টা পোস্ট করেন তৃণমূল ছাত্র পরিষদের রাজ্য সম্পাদক সুপ্রিয় চন্দ। নিজের টুইটার এবং ফেসবুকে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মন্তব্যকে উদ্ধৃত করে লিখেছেন, ‘‘হঠাৎ সেখানে প্রতিমা পূজা করার জন্য জিদ অশোভন।’’

Advertisement

সুপ্রিয়ের এই পোস্টের পরই আনন্দবাজার অনলাইনের তরফে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছিল। তাঁর কাছে জানতে চাওয়া হয়, তিনি কি পিইউটিএমসিপির এই পদক্ষেপকে সমর্থন করছেন না? জবাবে সুপ্রিয় বলেন, ‘‘বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহ্যের সাথে এ সব মানায় না। সরস্বতী পুজো নিয়ে রবীন্দ্রনাথ, সুভাষচন্দ্র বসুর সময় থেকেই এটা বহু পুরনো বিতর্ক। আমি চাই না, কেউ জেদ করে বসে থাকুক। এটা করা উচিত নয়। ফলে আমার প্রতিবাদ আমার মতো করে জানিয়েছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসের সংস্কৃতির সঙ্গে যা যায় না, আমি তার বিরোধী।’’

প্রসঙ্গত, গত বৃহস্পতিবার প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে সরস্বতী পুজো করার অনুমতি চেয়ে প্রেসিডেন্সির ডিন অব স্টুডেন্টসের কাছে আর্জি পেশ করেছিল তৃণমূল ছাত্র পরিষদ। কিন্তু কর্তৃপক্ষ সেই অনুমতি দেননি। তা নিয়েই ক্ষুব্ধ তৃণমূলে ছাত্র সংগঠন কর্তৃপক্ষকে পাল্টা প্রশ্ন করেছে, ‘‘ধর্মনিরপেক্ষ শিক্ষাঙ্গনে ধোঁয়াশা তৈরি করে কি আসলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বাম ছাত্র সংগঠনের চাপের কাছে নতিস্বীকার করছেন?’’

প্রেসিডেন্সির দীর্ঘ ইতিহাসে এ যাবৎ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চত্বরে কখনও সরস্বতী পুজো হয়নি। কারণ হিসাবে কর্তৃপক্ষ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ধর্মনিরপেক্ষতার কথাই বলা হয়েছে বরাবর। কিন্তু প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃণমূল ছাত্র পরিষদ প্রশ্ন তুলেছে কর্তৃপক্ষের সেই যুক্তি নিয়েই। তাদের বক্তব্য, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নিশ্চয়ই ধর্মনিরপেক্ষ শব্দটির সঠিক সাংবিধানিক অর্থ জানেন না। কারণ, তা জানলে তাঁরা এই যুক্তিতে দেখিয়ে পুজোয় বাধা দিতেন না। একটি ফেসবুক পোস্টে প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃণমূল ছাত্র পরিষদ লিখেছে, ‘‘সংবিধানে বলা আছে, ধর্মনিরপেক্ষতা একটি অত্যন্ত ইতিবাচক বিষয়। ধর্মনিরপেক্ষ তাকেই বলা হয়, যেখানে প্রত্যেক ধর্মের মানুষ নিজের মতো আচার-অনুষ্ঠান-উৎসব পালন করতে পারবেন। ...কোথাও বলা নেই (ধর্মনিরপেক্ষতার অর্থ) কোনও মানুষ তাঁর নিজস্ব ধর্মীয় আচরণ পালন করতে পারবেন না।’’

ওই পোস্টেই টিএমসিপি লিখেছিল, ‘‘বাম একনায়কতন্ত্রের অত্যাচারকে আসলে কর্তৃপক্ষ ভয় পাচ্ছেন। এ রকম ভয় আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের বহু ছাত্রছাত্রীও অযথা পায়। তাদের প্রত্যেকের উদ্দেশে বলছি, ওদের দিন চলে গিয়েছে, আর ফিরবে না। ... প্রেসিডেন্সিতে সরস্বতী পুজো বহু প্রাক্তনীও চান। কিন্তু ওঁদের জন্য কেউ মুখ ফুটে বলতে পারেন না। তাঁদের প্রত্যেকের প্রতিনিধি হয়ে আমরা প্রেসিডেন্সির সাধারণ ছাত্রছাত্রীরা জোর গলায় বলছি, টিএমসিপি সরস্বতী পুজো করে দেখাবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন