Presidency University

২২ ঘণ্টা আটকে মুক্ত কলেজ স্ট্রিট

একটা সময়ে যাত্রীদের একাংশের সঙ্গে গোলমালে জড়িয়ে পড়েন পড়ুয়ারা। দু’পক্ষে ধস্তাধস্তি পর্যন্ত হয়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৭ মার্চ ২০২০ ০৩:২০
Share:

দুর্ভোগ: প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়াদের অবরোধের জেরে যানজট। শুক্রবার, কলেজ স্ট্রিট চত্বরে। ছবি: সুদীপ ঘোষ

উত্তর কলকাতার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা সেটি। রয়েছে হাসপাতাল, একাধিক স্কুল, কলেজ। রোজ কয়েক হাজার লোক এবং ছাত্রছাত্রীর ভিড় লেগে থাকে সেখানে। নিজেদের দাবি আদায়ে সেই মহাত্মা গাঁধী রোড ও কলেজ স্ট্রিটের মোড় টানা ২২ ঘণ্টা আটকে রাখলেন প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা। যার ফল, সঙ্কটজনক রোগী-সহ গাড়িকে হাসপাতালে পৌঁছতে হল ঘুরপথে। শিয়ালদহ পৌঁছতে জেরবার হলেন নিত্যযাত্রীরা। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে শুরু হওয়া ওই অবরোধ শেষমেশ ওঠে শুক্রবার বিকেলে।

Advertisement

যদিও ততক্ষণে যা দুর্ভোগ হওয়ার হয়ে গিয়েছে। হাওড়া ও শিয়ালদহের জীবনরেখা মহাত্মা গাঁধী রোড দিনভর বন্ধ থাকায় বহু মানুষকে ঘুরে হাওড়া থেকে শিয়ালদহ যেতে হয়। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে যাওয়া অ্যাম্বুল্যান্সকে বিক্ষোভকারীরা ছেড়ে দিলেও যাঁরা গাড়ি বা বাসে হাসপাতালে গিয়েছেন, হয়রানি পিছু ছাড়েনি তাঁদের। চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ দিয়ে মেডিক্যাল কলেজে পৌঁছন তাঁরা। অনেক বাসযাত্রী পড়ুয়াদের অবরোধ তোলার অনুরোধ করলেও কাজ হয়নি।

একটা সময়ে যাত্রীদের একাংশের সঙ্গে গোলমালে জড়িয়ে পড়েন পড়ুয়ারা। দু’পক্ষে ধস্তাধস্তি পর্যন্ত হয়। ডিসি (সেন্ট্রাল) সুধীর নীলকান্তম পড়ুয়াদের বোঝানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু উল্টে তাঁরই সঙ্গে বচসা বেধে যায় ছাত্রছাত্রীদের। ডিসি-কে ঘিরে তাঁরা স্লোগান দিতে থাকেন। বেলা সাড়ে ১১টা নাগাদ অবশ্য পড়ুয়ারা কলেজ স্ট্রিটের এক দিকে চলে যান। পুলিশকে এক ঘণ্টা সময় দেন তাঁরা। জানান, এর মধ্যে উপাচার্যের সঙ্গে কথা বলে সমস্যার সমাধান করুক পুলিশ। না-হলে তাঁরা ফের রাস্তায় বসবেন। কিন্তু উপাচার্য অনুরাধা লোহিয়া জানিয়ে দেন, ছাত্রছাত্রীরা অবরোধ না-তুললে তিনি কথা বলবেন না।

Advertisement

বাইক-আরোহীকে অন্য পথে ঘুরে যেতে বলছেন ছাত্রেরা। (ডান দিকে) হাত জোড় করে পড়ুয়াদের অবরোধ তুলে নেওয়ার অনুরোধ করছেন যাত্রীরা। শুক্রবার, কলেজ স্ট্রিট চত্বরে। ছবি: সুদীপ ঘোষ

উপাচার্যের অনড় মনোভাব দেখে দুপুর ২টো নাগাদ পড়ুয়ারা ফের চার মাথার মোড়ে বসে পড়েন। তখন ক্ষোভে ফেটে পড়েন কয়েক জন নিত্যযাত্রী। কিছু রুটের বাসচালকদেরও পড়ুয়াদের সঙ্গে গোলমালে জড়াতে দেখা যায়। একটা সময়ে দেখা যায়, কয়েক জন যাত্রী নিজেরাই গার্ডরেল সরিয়ে রাস্তা ফাঁকা করছেন। ক্ষোভ আঁচ করে তখন বাসের সামনে বসে পড়েন আন্দোলনকারীরা। পুলিশকে কার্যত দর্শকের ভূমিকায় থাকতে দেখা যায়। পুলিশের এক শীর্ষ কর্তা বলেন, ‘‘আন্দোলন পড়ুয়াদের। তাই জোর করার কোনও প্রশ্ন নেই।’’ দিনভর গোলমাল চলার পরে বিকেল পাঁচটা নাগাদ অবরোধ ওঠে।

উল্লেখ্য, হিন্দু হস্টেলের তিন, চার, পাঁচ নম্বর ওয়ার্ডের সং‌স্কার থেকে শুরু করে সেখানকার পুরনো কর্মীদের ছাঁটাইয়ের প্রতিবাদে গত ৪০ দিনেরও বেশি সময় ধরে ক্যাম্পাসের মধ্যে অবস্থান করছিলেন পড়ুয়ারা। তাঁদের অভিযোগ ছিল, এই ৪০ দিনে উপাচার্য আলোচনায় বসেননি। তাই বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় তাঁরা কলেজ স্ট্রিট মোড়ে বসে পড়েন। এ দিন এক ছাত্র বলেন, ‘‘উপাচার্য আমাদের প্রতি মানবিক নন। কিন্তু আমরা তো সাধারণ মানুষের ভোগান্তির কথা ভেবে অমানবিক হতে পারি না। তাই অবরোধ তুলে নিলাম। তবে আরও বড় আন্দোলনে নামব।’’

উপাচার্য অনুরাধাদেবী এই আন্দোলন নিয়ে সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, তাঁকেও তিন দিন ঘেরাও থাকতে হয়েছিল। ডিন অব স্টুডেন্টসকে ঘেরাও থাকতে হয়েছিল পাঁচ দিন। তিনি পাল্টা দাবি করেছেন, পড়ুয়ারাই আলোচনা চান না। তাঁরা চান, তাঁরা যা বলবেন সেটাই হবে।

শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ছাত্রদের বক্তব্য শোনার জন্য উপাচার্য আছেন। শিক্ষা দফতর আছে। নিজেদের দাবি মেটাতে পথ অবরোধ করে অন্যদের অসুবিধায় ফেলা যায় না। গুরুত্বপূর্ণ রাস্তায় বসে আজাদি, আজাদি করলে দাবি মেটে না।’’ যদিও আন্দোলনকারীদের বক্তব্য, তাঁরা বিকাশ ভবনে গিয়ে শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে চেয়ে চিঠি দিয়ে এসেছেন। কিন্তু মন্ত্রী সাড়া দেননি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন