শ্রমের অর্থ কেরল-ত্রাণে পাঠাতে আবেদন বন্দির

সংশোধনাগারের কুঠুরিতেই কেটে গিয়েছে দীর্ঘ আড়াই দশক সময়। আত্মীয়-পরিজন কেউই কখনও দেখা করতে আসেননি। জন্মভূমি কেরলের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছে বহু দিন আগেই।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৯ অগস্ট ২০১৮ ০০:১২
Share:

সংশোধনাগারের কুঠুরিতেই কেটে গিয়েছে দীর্ঘ আড়াই দশক সময়। আত্মীয়-পরিজন কেউই কখনও দেখা করতে আসেননি। জন্মভূমি কেরলের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছে বহু দিন আগেই। কিন্তু আলিপুর সংশোধনাগারে বন্দি শেখ আজিজের সঙ্গে তাঁর জন্মভূমিকে ফের জুড়ে দিল কেরলের ভয়াবহ বন্যা। সম্প্রতি বন্যাবিধ্বস্ত কেরলে ত্রাণ পাঠাতে চেয়ে আলিপুর সংশোধনাগার কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করেছেন সত্তরোর্ধ্ব ওই বৃদ্ধ। বন্দি জীবনে শ্রমের বিনিময়ে উপার্জিত অর্থের একাংশ কেরলের ত্রাণে দান করতে চেয়েছেন তিনি।

Advertisement

১৯৯৩ সালের ১৬ মার্চ বৌবাজার বিস্ফোরণের প্রধান অভিযুক্ত রশিদ খানের অন্যতম সহযোগী ছিলেন আজিজ। সেই সময় থেকে আলিপুর সংশোধনাগারে রয়েছেন তিনি। পরবর্তী কালে আদালতে তিনি দোষী প্রমাণিতও হন। সংশোধনাগারে আর পাঁচ জন সাজাপ্রাপ্ত বন্দিদের মতো আজিজও শ্রমের বিনিময়ে অর্থ উপার্জন করেছেন। সেই উপার্জনের একাংশ বন্দিরা নিজেদের ইচ্ছেমতো খরচ করতে পারলেও বাকিটা পারেন না। বাকি অংশ কোনও কাজে ব্যবহার করতে চাইলে প্রথমে সংশোধনাগার কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে অনুমতি নিতে হয় বন্দিদের। নিজের উপার্জনের সেই অংশ থেকেই কেরলের ত্রাণে এক লক্ষ টাকা পাঠাতে চান আজিজ।

আদতে কেরলের বাসিন্দা হলেও কলকাতায় রশিদের সঙ্গেই থাকতেন আজিজ। সে কারণে তাঁর কেরলের বাড়ির ঠিকানা সংশোধনাগার কর্তৃপক্ষের কাছে নেই। দীর্ঘ বন্দি জীবনে কোনও দিনই কেরল নিয়ে সহ-বন্দি অথবা কর্তৃপক্ষের কাছে মুখ খোলেননি আজিজ। এমনকি, তিনি যে আদতে কেরলের বাসিন্দা, তাই জানতেন না সংশোধনাগার কর্তৃপক্ষ। কয়ের দিন আগে কেরলের বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে সহবন্দিদের সঙ্গে কথাবার্তার সময়ে জানাজানি হয় যে, আজিজের বাড়ি কেরলে। তার পরেই তিনি কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করেন যে, তাঁর উপার্জনের একাংশ কেরলের ত্রাণ হিসাবে পাঠাতে চান। তাঁর সেই আবেদন কারা দফতরের ডিজি অরুণ গুপ্তের কাছে পাঠিয়ে দিয়েছেন সংশোধনাগার কর্তৃপক্ষ। সেখান থেকে সবুজ সঙ্কেত আসার পরেই নিজের কষ্টার্জিত অর্থ ত্রাণ হিসেবে পাঠাতে পারবেন আজিজ।

Advertisement

বয়সের ভারে এখন আর সে ভাবে ভারী কাজ করতে পারেন না আজিজ। তবে আচার-আচরণে অনেকটাই পরিবর্তন হয়েছে বলে জানাচ্ছেন সংশোধনাগার কর্তৃপক্ষ। তাই একদা বিস্ফোরণ-কাণ্ডের অভিযুক্ত আজিজ এখন সংশোধনাগারের আবাসিকদের পাহারায় থাকেন। এর বিনিময়ে তাঁর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে জমা পড়ে টাকা। সেই টাকাই এ বার কেরলের পুনর্গঠনে পাঠাতে চান আজিজ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন