International Art Fair

শিল্পমেলায় রায়বেঁশে নাচ বন্দিদের

অনুষ্ঠান শেষ হতে অবশ্য তাঁদের সেই বিস্ময় বদলে গিয়েছে স্বতঃস্ফূর্ত হাততালিতে। বন্দি নৃত্যশিল্পীদের ‘পারফর্ম্যান্স’-এ মুগ্ধ দর্শকাসনে বসা বিভিন্ন স্তরের মানুষ।

Advertisement

প্রদীপ্তকান্তি ঘোষ

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ জানুয়ারি ২০২০ ০৩:০২
Share:

শিল্পিত: শিল্পমেলার সূচনায় বন্দিদের নাচ। নিজস্ব চিত্র

কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ হত্যার। কেউ বা ধর্ষণে অভিযুক্ত। কারও বিরুদ্ধে ডাকাতির অভিযোগ। এমনই নানাবিধ অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন তাঁরা। সকলেই যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত। আর তাঁরাই কি না রায়বেঁশে নাচ দেখাবেন! এমন ঘোষণা হতেই মুখ চাওয়াচাওয়ি শুরু হয়েছিল দর্শকদের মধ্যে। অনুষ্ঠান শেষ হতে অবশ্য তাঁদের সেই বিস্ময় বদলে গিয়েছে স্বতঃস্ফূর্ত হাততালিতে। বন্দি নৃত্যশিল্পীদের ‘পারফর্ম্যান্স’-এ মুগ্ধ দর্শকাসনে বসা বিভিন্ন স্তরের মানুষ।

Advertisement

বৃহস্পতিবার নিউ টাউনের মেলা প্রাঙ্গণে সূচনা হয়েছে ‘আন্তর্জাতিক শিল্পমেলা’র। আয়োজক ইন্ডিয়ান চেম্বার অব কমার্স। সেই মেলারই আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনে নৃত্য পরিবেশন করলেন দমদম সেন্ট্রাল জেলের কয়েক জন বন্দি। যন্ত্রানুষঙ্গের দায়িত্বও ছিলেন তিন বন্দি।

রায়বেঁশে নৃত্যশৈলী শুরু করেছিলেন ‘বাগদি’ সম্প্রদায় বা জমিদারেরা লেঠেলরা। যা শুরু হয়েছিল বীরভূমে। পরে বর্ধমান, মুর্শিদাবাদ হয়ে তা ছড়িয়ে পড়ে গোটা বঙ্গে। রায়বেঁশে-তে একটি লম্বা বাঁশের সাহায্যে লেঠেলরা মল্লক্রীড়া করতেন। ঘণ্টা, ঢোল, করতালের ছন্দে ডান পায়ের ঘুঙুর সহকারে নৃত্য করতেন শিল্পীরা। কথিত আছে, লেঠেলরা নাকি যুদ্ধের ক্লান্তি দূর করতে এই নাচে অংশ নিতেন।

Advertisement

একদা রায়বেঁশে নাচ জনপ্রিয় থাকলেও বর্তমানে তা প্রায় হারিয়ে যেতে বসেছে। সেই রায়বেঁশে নৃত্যকে সঙ্গী করেই এ দিন নিউ টাউনের মেলার মঞ্চ মাতালেন বাপি গাজি, আশাদুল শেখ, শেখর রায়, শুকলাল হেমব্রম, শিশু পাল, খোকন-সহ দমদম জেলের ১১ জন বন্দি। নাচে তাঁদের অন্যতম সঙ্গী ছিল লাঠি। যন্ত্রানুষঙ্গে ছিলেন শ্রীকান্ত-সহ তিন বন্দি। তাঁদের মধ্যে শ্যামল মিত্র নামে এক জন সদ্য জেল থেকে ছাড়া পেয়েছেন। তার পরেও কিন্তু দল থেকে সরে যাননি তিনি। বরং এখনও দমদম জেলের বন্দি নৃত্যশিল্পীদের দলের সঙ্গে কাজ করছেন। যা যথেষ্টই প্রশংসনীয় বলে দাবি করেছেন এ দিনের নৃত্যানুষ্ঠানের নির্দেশক চিরন্তন ভাদুড়ী। গত সাত বছর ধরে দমদম জেলের বন্দিদের নৃত্য সংক্রান্ত কাজকর্মের সঙ্গে যুক্ত আছেন চিরন্তনবাবু। তিনি জানালেন, এ দিন নৃত্যে মঞ্চ মাতালেও জেলের অন্দরে অন্য সাংস্কৃতিক কর্মসূচির সঙ্গেও আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে থাকেন বাপি-শেখর-আশাদুলেরা।

বন্দিদের মানসিকতা পরিবর্তনের ক্ষেত্রে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড অনেকাংশেই সহায়তা করে, একাধিক বার এমন দাবি করেছেন কারা দফতরের কর্তারা। তার সঙ্গে সাযুজ্য রেখে এই নৃত্যও তাঁদের মানসিকতায় পরিবর্তন আনছে বলে দাবি চিরন্তনবাবুর।

বণিকসভার মঞ্চে বন্দিদের অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে সেতুর ভূমিকা নিয়েছেন একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার ম্যানেজিং ট্রাস্টি চৈতালি দাস। জেলে বন্দিদের দিয়ে পাটজাত সামগ্রী তৈরি করানোর প্রশিক্ষণ থেকে শুরু করে তা বিপণনের ক্ষেত্রে ওই সংস্থাটি নানা পদক্ষেপ করে থাকে। চৈতালির বক্তব্য, ‘‘প্রকাশ্যে এমন অনুষ্ঠান সমাজের কাছে বন্দিদের সম্পর্কে ভিন্ন ধারণা গড়ে তুলতে সাহায্য করবে।’’ এ দিন রায়বেঁশে নাচের পরে মেলাতেই আরও দু’দিন অনুষ্ঠান করার জন্য তাঁরা আমন্ত্রিত হয়েছেন বলে দাবি করেছেন চিরন্তনবাবু। যদিও আয়োজকদের তরফে কারা দফতরের কাছে এ নিয়ে এখনও আবেদন আসেনি বলেই খবর।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন