পিত্তনালীর পাথর বেরোল ৯৯-এর বৃদ্ধার

এমআরসিপি পরীক্ষার মাধ্যমে জানা যায়, পিত্তথলি এবং পিত্তনালীতে পাথর জমা হওয়ার পাশাপাশি সিরোসিস অব লিভারে আক্রান্ত ওই বৃদ্ধা।

Advertisement

জয়তী রাহা

শেষ আপডেট: ১৭ জুলাই ২০১৯ ০২:১০
Share:

অস্ত্রোপচারের পরে হাসপাতালে জাইগুন বিবি। িনজস্ব চিত্র

আচমকা পেটে তীব্র যন্ত্রণা আর বমি শুরু হয়েছিল। তার পর থেকেই নিয়মিত জ্বর আসতে শুরু করে মুর্শিদাবাদের বাসিন্দা, নিরানব্বই বছরের জাইগুন বিবির। যা দেখে ঘাবড়ে গিয়েছিলেন তাঁর ছেলে, ব্যারাকপুরের বাসিন্দা ও প্রাক্তন সেনাকর্মী খইরুল আনাম জালালউদ্দিন। মাস কয়েক আগে তাঁর কাছে আসা বৃদ্ধা মাকে নিয়ে খইরুল স্থানীয় সেনা হাসপাতালে যান। জানা যায়, জাইগুন বিবির পিত্তথলিতে বেশ কয়েকটি পাথর আছে। সেই পাথরের কয়েকটি চলে গিয়েছে পিত্তনালীতে। আটকে আছে সেখানে।

Advertisement

ওই হাসপাতালের চিকিৎসকেরা জানান, এই বয়সে অস্ত্রোপচারের যে ঝুঁকি রয়েছে, তা সামাল দেওয়ার মতো পরিকাঠামো তাঁদের নেই। এর পরেই বৃদ্ধার পরিবার তাঁকে নিয়ে আসে কলকাতার ই এম বাইপাসের একটি বেসরকারি হাসপাতালে। সম্প্রতি সেখানেই প্রথম ধাপের চিকিৎসার পরে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন জাইগুন বিবি। মাসখানেক পরে সেখানেই তাঁর দ্বিতীয় পর্বের চিকিৎসা হবে।

এমআরসিপি পরীক্ষার মাধ্যমে জানা যায়, পিত্তথলি এবং পিত্তনালীতে পাথর জমা হওয়ার পাশাপাশি সিরোসিস অব লিভারে আক্রান্ত ওই বৃদ্ধা। যদিও আপাতদৃষ্টিতে সিরোসিস অব লিভারের কোনও লক্ষণ ধরা পড়েনি তাঁর। এর পরেই অ্যাপোলো গ্লেনেগ্‌লস হাসপাতালের গ্যাস্ট্রোএন্টেরোলজিস্ট কিংশুক দাসের নেতৃত্বে অ্যানাস্থেটিস্ট কৌস্তভ চক্রবর্তী ও চিকিৎসক শুভ চক্রবর্তী পিত্তনালী থেকে পাথর বার করেন।

Advertisement

চিকিৎসক কিংশুকবাবু বলেন, ‘‘সেই অর্থে পিত্তথলিতে পাথর হলে অস্ত্রোপচার করাটা উল্লেখযোগ্য কিছু নয়। তবে এই বয়সে পিত্তনালীর পাথর এবং সিরোসিস অব লিভার নিয়েই চিন্তা ছিল। কারণ, ইআরসিপি পদ্ধতির মাধ্যমে পিত্তনালী থেকে পাথর বার করতে গিয়ে নালীর মুখ কাটতে হয়। সে ক্ষেত্রে রোগীর সিরোসিস অব লিভার থাকায় রক্তপাত বন্ধ না হওয়ার আশঙ্কা থাকে।’’

কিংশুকবাবু জানান, ইআরসিপি-র মাধ্যমে পিত্তনালী থেকে দেড় সেন্টিমিটারের পাথর বার করে স্টেন্ট বসানো হয়েছে, যাতে ফের জাইগুন বিবির জন্ডিস ফিরে না আসে এবং তাঁর পিত্তথলি থেকে পাথর নালীতে আসতে না পারে। হাসপাতাল সূত্রের খবর, রোগীকে সুস্থ করে বাড়ি পাঠানো হয়েছে। সপ্তাহ চারেক পরে

ফের অস্ত্রোপচার করে বাদ দেওয়া হবে তাঁর পিত্তথলিটি।

এসএসকেএম হাসপাতালের শল্য চিকিৎসক দীপ্তেন্দ্র সরকারের কথায়, ‘‘জাইগুন বিবির ক্ষেত্রে বয়স বড় সমস্যা। কারণ, ৯৯ বছরের সিরোসিস অব লিভারের রোগীকে অ্যানাস্থেশিয়া দিলে জ্ঞান না ফেরার বড় আশঙ্কা থাকে। এমন রোগীকে সুস্থ করে বাড়ি ফেরানো অবশ্যই জেরিয়াট্রিক চিকিৎসায় বড় চ্যালেঞ্জ।’’

খইরুল বলছেন, ‘‘প্রতিদিন মুড়ি, শসা, ফল এবং ভাত-মাছ-ডিম খান মা। নিয়ম মেনে রোজ এক লিটার দুধ খান। আমরা সাত ভাইবোন মাকে কখনওই সে ভাবে অসুস্থ হতে দেখিনি। তাই চিন্তায় ছিলাম। কিন্তু চিকিৎসকেরা যে ভাবে মায়ের মনোবল

বাড়িয়েছিলেন, তাতেই অনেকটা ভরসা এসেছিল। মা আবার স্বাভাবিক খাওয়াদাওয়া শুরু করেছেন।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement