পুরভোট ২০১৫

প্রচারের ভিড়ে আলাদা ওঁদের পেশাদারি হোর্ডিং

পুর-পরিষেবা তো আছেই, রয়েছে রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটও। এ সবের পরেও শহরে ওয়ার্ডের লড়াই জমে উঠেছে শুধু প্রচারের গুণে। ছড়ায়, কোটেশনে, বাক্যচয়নে ভরপুর বিজ্ঞাপনের পেশাদারিত্ব। সাবেক কালের ‘ভোট দিন’-এ প্রচার থেকে বেরিয়ে এসে লেখা হয়েছে ‘প্রতিনিধি নয়, প্রতিবেশি।’

Advertisement

অনুপ চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১৫ এপ্রিল ২০১৫ ০৩:৫০
Share:

দেবাশিস কুমার এবং অতীন ঘোষ

পুর-পরিষেবা তো আছেই, রয়েছে রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটও। এ সবের পরেও শহরে ওয়ার্ডের লড়াই জমে উঠেছে শুধু প্রচারের গুণে। ছড়ায়, কোটেশনে, বাক্যচয়নে ভরপুর বিজ্ঞাপনের পেশাদারিত্ব। সাবেক কালের ‘ভোট দিন’-এ প্রচার থেকে বেরিয়ে এসে লেখা হয়েছে ‘প্রতিনিধি নয়, প্রতিবেশি।’

Advertisement

বিদায়ী পুরবোর্ডের দুই মেয়র পারিষদ দেবাশিস কুমার এবং অতীন ঘোষের সমর্থনে লেখা প্রচারের এই অভিনবত্ব নজর কাড়ছে মানুষের। একটি দক্ষিণ কলকাতার ৮৫ এবং অন্যটি উত্তর কলকাতার ১১ নম্বর ওয়ার্ডে। এক জনের দায়িত্বে ছিল পার্ক এবং উদ্যান, অন্য জনের হাতে স্বাস্থ্য দফতর। শহর জুড়ে পুরসভা যে বিজ্ঞাপন দিয়েছে, তাতেও ওই দুই দফতরের সাফল্যের তারিফ করা হয়েছে।

দক্ষিণের দেশপ্রিয় পার্কের আশপাশ জুড়ে ৮৫ নম্বর ওয়ার্ড। রাসবিহারী অ্যাভিনিউ থেকে মনোহরপুকুর রোডে ঢুকেই নজরে পড়ল দেবাশিস কুমারের একটি কাটআউট। ১৫-১৮ ফুট উচ্চতার। সকলকে আহ্বান জানানোর ভঙ্গিমায়। ওই রাস্তার অন্যত্রও বাহারি প্রচারের চিত্র। এক জায়গায় লেখা রয়েছে, ‘পয়লা ওয়ার্ড, ময়লা ছাড়া।’

Advertisement

সত্যিই কি তাই? জানতে চাইলে এলাকার বাসিন্দা সমরেশ মিত্র বলেন, ‘‘রাস্তাঘাট দেখলে আপনি নিজেই বুঝতে পারবেন।’’ সাফাইয়ের কাজে এতটাই ‘সন্তুষ্ট’ তিনি। এই সাফল্যের পিছনে বাসিন্দাদের সচেতনতাই আসল বলে জানান দেবাশিস কুমার। বলেন, ‘‘সাফাইকর্মী ছাড়াও প্রতিদিন ১০টি ব্যাটারি চালিত হাইড্রলিক গাড়ি ময়লা ফেলার কাজে ব্যবহৃত হয়। তার উপরে রয়েছে ১০০ দিনের লোকেরা।’’ তবে তা মাত্র এই ওয়ার্ডেই বলে জানালেন তিনি। অন্যত্র নয় কেন? দেবাশিস কুমারের জবাব, ‘‘গাড়িগুলি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার দেওয়া। আমরা তাঁদের কাছে আবেদন জানিয়েছিলাম।’’ আসলে উদ্যোগ থাকলে ওয়ার্ডের রাস্তাঘাট পরিষ্কার রাখা যায়, তা জানাতে ভোলেননি এলাকার বাসিন্দারা। যেমন ওই ওয়ার্ডের আর একটি দেওয়াল লিখন নজর কেড়েছে এলাকার ভোটারদের। ‘পৌরপিতার সৌর প্রয়াস।’ কলকাতা পুরসভার উদ্যোগে শহরে একমাত্র দেশপ্রিয় পার্কে সৌর আলো লাগানো হয়েছে। উল্লেখযোগ্য এটাই, যে এতকাল ওই পার্কে আলো জ্বালানোর জন্য যে বিদ্যুৎ বিল লাগত, তা-ও লাগছে না। একই সঙ্গে শহরে কার্বন নির্গতের পরিমাণও কমছে।

প্রায় ২৫ হাজার ভোটার ওই ওয়ার্ডে। মূল লড়াই বিজেপি-র সঙ্গে তৃণমূলের। বিজেপি-র প্রার্থী শশী অগ্নিহোত্রী অবশ্য পুর-পরিষেবা ‘না পাওয়ার’ কথাই তুলছেন। তবে তা কতখানি ভোটারদের প্রভাবিত করবে, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েই গিয়েছে। ওয়ার্ড জুড়ে ঝকঝকে বিজ্ঞাপন হয়তো তারই জানান দিচ্ছে।

বিজ্ঞাপনের পেশাদারিত্বে এলাকার উন্নয়নকে তুলে ধরেছেন আর এক তৃণমূল প্রার্থী অতীন ঘোষ। উত্তর কলকাতার হাতিবাগান, সিকদার বাগান, নলিন সরকার স্ট্রিট এলাকা জুড়ে ১১ নম্বর ওয়ার্ড। দীর্ঘকাল থেকে অতীনবাবুর খাসতালুক বলে পরিচিত। ২০১০ সালে শহরে মশাবাহিত রোগের উপদ্রবে হইচই পড়েছিল শহর জুড়ে। যা সে সময়ে অস্বস্তিতে ফেলেছিল বামফ্রন্ট শাসিত পুরবোর্ডকে। ক্ষমতায় ফিরে তৃণমূল বোর্ড স্বাস্থ্য দফতরের দায়িত্ব দেয় অতীনবাবুকে। ৫ বছর পরে কী হাল মশাবাহিত রোগের? লেখা হয়েছে, ‘ম্যালেরিয়ার মশাগুলো শহর থেকে উধাও হল/ পূরণ হল মনস্কাম/ সবার মুখে তোমার নাম।’’

হাতিবাগান বাজারের পাশে পেল্লাই সাইজের ফ্লেক্স। ছবির সঙ্গে দু’টি শব্দ, ‘তোমাকে চাই’। ওই রাস্তার উপরেই ঝকঝকে একটি বিল্ডিং নজরে পড়ল। কলকাতা পুরসভার স্বাস্থ্য কেন্দ্র। দফতরের মেয়র পারিষদ হিসেবে কেন্দ্রটিকে আকর্ষণীয় করে তুলেছেন। বললেন, ‘‘দৈনিক দু’শোর বেশি রোগী হয় সেখানে। জয়ের ব্যাপারে এতটুকু চিন্তিত নন অতীনবাবু। জানালেন, ১৬ হাজারের মতো ভোটার। ৮০ শতাংশ ভোট পাওয়াই তাঁর লক্ষ্য। এখানে বাম প্রার্থী ফরওয়ার্ড ব্লকের পিয়ালী পাল। লড়াইয়ে মাঠে বাম-বিজেপি কাউকে প্রতিপক্ষ মানতে নারাজ তিনি। বলেন, ‘‘সারা বছর কাজ করি, এখন তো ডিভিডেন্ডের আশা করতেই পারি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন