সম্পত্তি-বিবাদে বৃদ্ধকে ‘মেরে’ ধৃত ভাইপো

পুলিশ জানিয়েছে, সম্পত্তি নিয়ে বিবাদের জেরে মঙ্গলবার দুপুরে এমন ভাবেই জেঠুকে খুনের অভিযোগ উঠল বছর চল্লিশের ভাইপোর বিরুদ্ধে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২১ মার্চ ২০১৮ ০৩:২৫
Share:

দীননাথ যাদব

সবে বাড়ির সামনের বারান্দায় রাখা খাটিয়ায় বসে নাতিকে দুপুরের খাবার আনতে যেতে বলেছিলেন বৃদ্ধ। নাতির দাবি, তিনি বাইরে বেরোতেই পথ আটকায় বাইকে চেপে আসা হেলমেটে মুখ ঢাকা দু’জন। কিছু বুঝে ওঠার আগেই এক জন পিস্তল ঠেকায় নাতির কপালে। অন্য জন পিস্তল সেঁটে ধরে ওই বৃদ্ধের পেটে। মুহূর্তের মধ্যে পরপর দু’টি গুলির শব্দ। তার পরেই মাটিতে লুটিয়ে পড়েন বৃদ্ধ। কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে নাতি দেখলেন, দাদুর পেটে গুলি চালানো ব্যক্তি তাঁর কাকা!

Advertisement

পুলিশ জানিয়েছে, সম্পত্তি নিয়ে বিবাদের জেরে মঙ্গলবার দুপুরে এমন ভাবেই জেঠুকে খুনের অভিযোগ উঠল বছর চল্লিশের ভাইপোর বিরুদ্ধে। মৃত দীননাথ যাদব (৭২) টিটাগড় পুরসভার প্রাক্তন সিপিএম কাউন্সিলর। ঘটনার এক ঘণ্টার মধ্যে খড়দহ থানার পুলিশ অভিযুক্ত গোবিন্দ যাদবকে ঘোলার নাটাগড় থেকে গ্রেফতার করে। উদ্ধার হয় দু’টি ওয়ান শটার-সহ মোটরবাইকটি। ঘটনায় জড়িত সন্দেহে গ্রেফতার করা হয় গোবিন্দের মা কিরণদেবীকেও।

পুলিশ সূত্রের খবর, টিটাগড়ের ১১ নম্বর ওয়ার্ডের লক্ষ্মীঘাটের আর এন টি পথ এলাকার বাসিন্দা দীননাথবাবু। তিনি ওই ওয়ার্ডেরই কাউন্সিলর ছিলেন। ওই এলাকায় প্রায় কুড়ি কাঠা জমির উপরে রয়েছে দীননাথবাবুদের পৈতৃক সম্পত্তি। প্রায় কুড়ি বছর আগে বাবা যোগেশ্বর যাদবের মৃত্যু হলেও সম্পত্তি ভাগাভাগি হয়নি তাঁদের
পাঁচ ভাইয়ের মধ্যে। প্রত্যেকের নিজেদের বাড়ি রয়েছে। এ ছাড়াও পৈতৃক জমিতে প্রায় ৬০টি ঘরে ভাড়াটে রয়েছে। অভিযোগ, সম্পত্তির ভাগ বাঁটোয়ারা এবং ভাড়ার টাকা নিয়ে দীর্ঘ দিন ধরেই দীননাথবাবুদের পারিবারিক অশান্তি চলছিল। তাঁর স্ত্রী সরস্বতীদেবী বলেন, ‘‘কত বার বলেছিলাম সম্পত্তি ভাগাভাগি করে ফেলতে। কিন্তু উনি শুনতেন না। আমি দোতলায় থাকতাম আর উনি একা একতলায় থাকতেন, একাই হোটেল থেকে খাবার আনিয়ে খেতেন।’’

Advertisement

স্থানীয় সূত্রের খবর, সম্পত্তি নিয়ে দীননাথবাবুর সঙ্গে অন্য ভাইদের কমবেশি সমস্যা থাকলেও সব থেকে বেশি সমস্যা ছিল কয়েক বছর আগে প্রয়াত সেজ ভাই রামপ্রসাদবাবুর ছেলে গোবিন্দের সঙ্গে। অভিযোগ, সম্পত্তির ভাগ পেতে মাঝেমধ্যেই জেঠুকে হুমকি দিত গোবিন্দ। দু’জনের মধ্যে আইনি লড়াইও চলছিল। পুলিশ জানায়, গত ৮ মাস ধরে আসানসোলে থাকছিল এলাকায় ‘বাউন্ডুলে’ বলেই পরিচিত গোবিন্দ। তার এক পায়ে সমস্যাও রয়েছে। জেরায় পুলিশ জেনেছে, এ দিন রীতিমতো খুনের পরিকল্পনা করেই সে বাড়িতে আসে। তার মা কিরণদেবীও আসানসোল থেকে গত ১২ মার্চ ফিরে আসেন।

দীননাথবাবুর নাতি রাকেশ জানান, দুপুর দেড়টা নাগাদ বাড়ি ফিরে উঠোনের কলে হাত মুখ ধুয়ে বারান্দায় পাতা খাটিয়ায় বসেছিলেন দীননাথবাবু। এর পরে রাকেশকে স্থানীয় হোটেল থেকে তাঁর দুপুরের খাবার আনতে যেতে বলেন। সেই মতো বাড়ির থেকে বেরিয়ে কয়েক পা এগোতেই রাকেশের পথ আটকায় গোবিন্দেরা। দীননাথবাবুকে গুলি করে তারা ঘোলার দিকে চম্পট দেয়। গুলির আওয়াজে নেমে আসেন সরস্বতীদেবী এবং ভাড়াটেরা। দীননাথবাবুকে বি এন বসু মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকেরা মৃত বলে ঘোষণা করেন।

পুলিশ সূত্রের খবর, নীল গেঞ্জি পরা গোবিন্দ লাল রঙের বাইক নিয়ে চম্পট দিয়েছে শুনে খড়দহ থানার সাদা পোশাকের পুলিশ বিভিন্ন জায়গায় তল্লাশি শুরু করে। তখনই তাঁরা জানতে পারেন, ঘোলায় পানিহাটি কলেজের পাশে গোবিন্দের বোনের ফ্ল্যাট রয়েছে। সেখানে সে যেতে পারে এই সন্দেহে পৌঁছে যান পুলিশকর্মীরাও। দুপুর আড়াইটে নাগাদ গোবিন্দ বাইক নিয়ে পৌঁছতেই তাকে ধরা হয়। তখন সে একাই ছিল বলে পুলিশের দাবি। অন্য অভিযুক্তের বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তদন্তকারীদের অনুমান, প্রতি দিন দুপুর দেড়টা নাগাদ দীননাথবাবু খাটিয়ায় বসতেন সেই খবর এ দিন গোবিন্দকে দিয়েছিলেন তার মা কিরণদেবীই। ‘বাউন্ডুলে’ গোবিন্দ কোথা থেকে পিস্তল জোগাড় করল তা নিয়ে অবশ্য এখনও ধন্দে পুলিশ ও প্রতিবেশীরা। ব্যারাকপুর সিটি পুলিশের কমিশনার রাজেশকুমার সিংহ বলেন, ‘‘পুরো বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন