বিক্ষোভ জারি, আপাতত বন্ধ জিডি বিড়লা স্কুল

অত্যাচারের ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পরে অভিভাবকদের একাংশ দাবি তুলেছিলেন, পড়ুয়াদের নিরাপত্তা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত স্কুল বন্ধ রাখতে হবে। এ দিন উল্টে স্কুল এবং শিক্ষিকাদের নিরাপত্তার যুক্তি দিয়ে বন্ধের নোটিস ঝুলিয়েছেন জিডি বি়ড়লা কর্তৃপক্ষ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৪ ডিসেম্বর ২০১৭ ০৩:০৫
Share:

ধিক্কার: অভিযুক্তদের শাস্তি ও স্কুল প্রিন্সিপ্যালের গ্রেফতারির দাবিতে মিছিল। অবরুদ্ধ রানিকুঠি থেকে টালিগঞ্জ। রবিবার। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক।

শিশু ছাত্রীর যৌন নির্যাতনের ঘটনার জেরে রবিবার অনির্দিষ্ট কালের জন্য বন্ধ হয়ে গেল জিডি বিড়লা সেন্টার ফর এডুকেশন। অত্যাচারের ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পরে অভিভাবকদের একাংশ দাবি তুলেছিলেন, পড়ুয়াদের নিরাপত্তা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত স্কুল বন্ধ রাখতে হবে। এ দিন উল্টে স্কুল এবং শিক্ষিকাদের নিরাপত্তার যুক্তি দিয়ে বন্ধের নোটিস ঝুলিয়েছেন জিডি বি়ড়লা কর্তৃপক্ষ। অভিযুক্তদের আড়াল করা ও তথ্য গোপনের দায়ে এ দিনই স্কুলের প্রিন্সিপ্যালের বিরুদ্ধে ‘পকসো’ আইনে অভিযোগ দায়ের করেছে রাজ্যের শিশু সুরক্ষা কমিশন। পৃথক এফআইআর করেছেন শিশুটির বাবাও। ঘটনার তদন্তভার হাতে নিয়েছে লালবাজারের গোয়েন্দা বিভাগ।

Advertisement

মাস তিনেক আগে জিডি বিড়লার মতোই বেহালার এমপি বিড়লা স্কুলেও সাড়ে তিন বছরের একটি শিশুকন্যাকে যৌন নিগ্রহ করা হয়। সেই ঘটনায় অভিযোগ পেলেও পুলিশ বা স্কুল, কেউই কোনও ব্যবস্থা নেয়নি বলে ওই শিশুর পরিবারের অভিযোগ। এখন সেই ঘটনাটি ফের সামনে আসায় এমপি বিড়লা স্কুল কর্তৃপক্ষের আশঙ্কা, অভিভাবকদের একাংশ তাঁদের স্কুলের সামনে সোমবার বিক্ষোভ দেখাতে পারেন। পুলিশ সূত্রের খবর, জেমস লং ট্র্যাফিক গার্ডের ওসি-কে দেওয়া এক চিঠিতে জানানো হয়েছে, সংবাদপত্রে প্রকাশিত খবরের ভিত্তিতে কয়েক জন অভিভাবক বিক্ষোভ দেখাতে পারেন। সোমবার স্কুলে স্বাভাবিক রুটিন অনুযায়ী ক্লাস হবে। তাই স্কুলের মূল ফটকের সামনে পুলিশ মোতায়েন করার আর্জি জানানো হয়েছে।

আরও পড়ুন: স্কুল ছাড়িয়ে আঁচ পৌঁছল রাজপথেও

Advertisement

জিডি বিড়লার ঘটনায় অভিযুক্ত দুই শিক্ষককে বরখাস্ত করেছেন স্কুল কর্তৃপক্ষ। তবে তাতে সন্তুষ্ট নন অভিভাবকেরা। বরং স্কুল বন্ধের নোটিস ঝোলানো নিয়ে তাঁরা চূড়ান্ত ক্ষুব্ধ। লালবাজারের দেওয়া স্কুল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে অভিভাবকদের মুখোমুখি বসার প্রস্তাব উড়িয়ে আন্দোলনের পথেই রয়েছেন তাঁরা। প্রিন্সিপ্যাল শর্মিলা নাথের পদত্যাগ এবং তাঁকে গ্রেফতারের দাবিতে এ দিন টালিগঞ্জ মেট্রো স্টেশনের সামনে চার রাস্তার মোড় অবরোধ করেন বিক্ষোভকারীরা। সোমবারও ফের জমায়েত হবে স্কুলের সামনে।

ওই ছাত্রীর বাবাকে দেওয়া স্কুল কর্তৃপক্ষের চিঠি

ওই বিক্ষোভ-অবরোধের মধ্যেই নির্যাতিতা ছাত্রীর বাবা যাদবপুর থানায় গিয়ে স্কুলের প্রিন্সিপ্যালের বিরুদ্ধে তথ্য গোপন করার অভিযোগে এফআইআর দায়ের করেছেন। কলকাতার পুলিশ কমিশনারের কাছে প্রিন্সিপ্যালকে গ্রেফতারের সুপারিশ করেছে রাজ্যের শিশু সুরক্ষা কমিশন। ‘পকসো’ আইন মোতাবেক, শিশু-নির্যাতনে অভিযুক্তকে আড়াল করা এবং তথ্য গোপন করা অপরাধ। প্রিন্সিপ্যালের বিরুদ্ধে সেই অভিযোগই এনেছে কমিশন। লালবাজার সেই অভিযোগের তদন্ত শুরু করেছে। কলকাতা পুলিশ যে মোটেই বিষয়টিকে হাল্কা ভাবে দেখছে না, তা বোঝাতে রবিবারই যৌন নির্যাতনের ঘটনার তদন্তভার নিয়েছে লালবাজারের গোয়েন্দা বিভাগ। স্পেশ্যাল জুভেনাইল পুলিশ ইউনিটের (সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে বছর দুয়েক আগে তৈরি হয়েছে এই শাখা) হাতে ওই ঘটনা সংক্রান্ত যাবতীয় নথিপত্র তুলে দিয়েছে যাদবপুর থানা।

শিশুটির অবস্থার এখন সামান্য উন্নতি হয়েছে। রাতে একটু ঘুমোচ্ছে সে। কিন্তু এখনও কিছু খেতে চাইছে না। কারণ শৌচাগারে গেলেই তলপেটে যন্ত্রণা হচ্ছে। ভয়ে তাই খাওয়া এক রকম বন্ধই করে দিয়েছে শিশুটি।

মেয়েদের স্কুলে কেন পুরুষ শিক্ষক থাকবেন, শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় এ দিন সেই প্রশ্ন তুলেছেন। প্রশ্ন তুলেছেন, ছেলে ও মেয়েদের জন্য একটিই শৌচাগার থাকা নিয়েও। শিক্ষামন্ত্রীর মন্তব্য, ‘‘এ সব ব্যাপারে স্কুলের আরও সচেতন এবং সংবেদনশীল হওয়া উচিত ছিল।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন