Protest

তরুণীর নেশামুক্তি কেন্দ্রের ঠিকানা দেবে না পরিবার, বিক্ষোভ যাদবপুরে

তরুণীকে নেশামুক্তি কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে বলেই তাঁর বাবা জানিয়েছেন। যদিও সেই নেশামুক্তি কেন্দ্র কোথায়, তা খোলসা করতে চাননি তিনি। ‘‘নেশা করে করে মেয়ের চেহারা শুকিয়ে গিয়েছে।”

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৮ মার্চ ২০২৩ ০৬:৪৮
Share:

তরুণীকে নেশামুক্তি কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে বলেই তাঁর বাবা জানিয়েছেন। প্রতীকী ছবি।

বাবার দাবি, মেয়ের মানসিক সমস্যা রয়েছে। নেশামুক্তি কেন্দ্রে রেখে তাঁর চিকিৎসা করানো প্রয়োজন। মেয়ে স্বেচ্ছায় চিকিৎসা করাচ্ছেন না বলে তাঁকে জোর করে কলকাতা থেকে তুলে নিয়ে যাওয়ার কথাও স্বীকার করেছে পরিবার। অন্য দিকে, সাবালিকা মেয়ের বন্ধুবান্ধবদের অভিযোগ, মেয়েকে তাঁর ইচ্ছের বিরুদ্ধে তুলে নিয়ে গিয়ে নেশামুক্তি কেন্দ্রে রেখে মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছেন বাবাই। এই ঘটনার প্রতিবাদে সোমবার যাদবপুর থানার সামনে একাধিক মানবাধিকার সংগঠনের তরফে বিক্ষোভ দেখানো হয়। গোটা ঘটনার পিছনে যাদবপুর থানার সক্রিয় ভূমিকা রয়েছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। আপাতত ওই তরুণীর সন্ধান করছেন তাঁর বন্ধুরা। তাঁকে কোথায় রাখা হয়েছে, সে ব্যাপারে খোঁজ পেতে রাতে শহরতলির একাধিক জায়গায় তাঁরা ছোটাছুটি করেন।

Advertisement

গত রবিবার ‘পশ্চিমবঙ্গ গণ সমবায় সমিতি’র সদস্যা এক তরুণীকে যাদবপুর থানার সামনে থেকে তাঁর পরিবার জোর করে পুলিশের সাহায্যেই উঠিয়ে নিয়ে যায় বলে অভিযোগ। ওই পরিবারের আদি বাড়ি উত্তর ২৪ পরগনার হাবড়ায়।

ওই তরুণীকে নেশামুক্তি কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে বলেই তাঁর বাবা জানিয়েছেন। যদিও সেই নেশামুক্তি কেন্দ্র কোথায়, তা খোলসা করতে চাননি তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘নেশা করে করে মেয়ের চেহারা শুকিয়ে গিয়েছে। খাওয়াদাওয়া করে না। ব্যাগের মধ্যে নানা ধরনের নেশার জিনিসপত্র পেয়েছি আমরা। মেয়ে নিজেই বলেছে, ওর মানসিক সমস্যা রয়েছে। কিন্তু, কলকাতায় তেমন ভাবে চিকিৎসা করাতে নারাজ। তাই রবিবার ওই ভাবে নিয়ে আসতে হয়েছে।’’

Advertisement

এ দিন যাদবপুর থানার সামনে মানবাধিকার সংগঠনগুলির বিক্ষোভ প্রদর্শনের সময়ে বার বারই উঠে এসেছে ওই তরুণীর মানবাধিকার ও তাঁর ইচ্ছা-অনিচ্ছার প্রশ্ন। যে বন্ধুর সঙ্গে যাদবপুরের বিক্রমগড়ে তরুণী থাকতেন, সেই ঋতব্রত ঘোষের অভিযোগ, ‘‘পুলিশ আইন ভেঙে আমাদের বন্ধুকে তাঁর মতামত ছাড়াই নেশামুক্তি কেন্দ্রে পাঠাতে সাহায্য করেছে। যে মানসিক সমস্যার কথা বলা হয়েছে আমার বন্ধুর পরিবারের তরফে, সেটির চিকিৎসা করিয়ে ও সুস্থ হয়ে উঠেছিল। এক জন প্রাপ্তবয়স্কের সঙ্গে পুলিশ এটা করতে পারে না। এর পরে তো যাঁকে তাঁকে মানসিক রোগী প্রমাণ করে দেওয়া হবে।’’ মানবাধিকার সংগঠন এপিডিআরের সাধারণ সম্পাদক রঞ্জিত শূর বলেন, ‘‘কাউকে নেশামুক্তি কেন্দ্রে নিয়ে যেতে ম্যাজিস্ট্রেটের অনুমতির প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে তা করা হয়নি।’’ এ দিন পুলিশকর্মীদের শাস্তি-সহ একাধিক দাবি তোলেন বিক্ষোভকারীরা। যদিও পুলিশের এক আধিকারিকের দাবি, ‘‘যা করা হয়েছে, নিয়ম মেনেই করা হয়েছে। পুলিশ বিধি ভাঙেনি।’’

ওই তরুণীকে নিজেদের মধ্যে ফিরে পেতে আদালতে ‘হেবিয়াস করপাস’ করার পরিকল্পনা করছেন তাঁর বন্ধুরা। অভিযোগ জানানো হয়েছে রাজ্য মহিলা কমিশনের কাছেও। কমিশনের চেয়ারপার্সন লীনা গঙ্গোপাধ্যায় এ দিন বলেন, ‘‘কমিশন ঘটনার উপরে নজর রাখছে। তরুণীর বন্ধুবান্ধব এবং পরিবারের সঙ্গেও কমিশনের কথা হয়েছে। এ ভাবে জোর করে কাউকে নেশামুক্তি কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া যায় না।’’ আদতে ঋতব্রত এবং ওই তরুণীকে আলাদা করার ছক কষা হচ্ছে বলেও অভিযোগ বন্ধু মহলের।

তরুণীর পরিজনদের দাবি, তাঁরা ওই দু’জনের সম্পর্ক নিয়ে প্রথমে আপত্তি তুললেও পরে সব মেনে নেন। তরুণীর বাবা ও মায়ের দাবি, ‘‘আমরা যা করেছি, মেয়ের স্বাস্থ্যের কথা ভেবেই করেছি। মেয়েকে ভাল দেখতে চাওয়া কি বাবা-মায়ের অন্যায়? আমরা তো ঋতব্রত বা মেয়ের কোনও বন্ধুর নামে পুলিশে অভিযোগ করিনি।’’ তা হলে কি মেয়েকে বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করতে দেবেন? তরুণীর বাবার উত্তর, ‘‘বন্ধুরা যদি তেমন ভাবে আসে, আপত্তি নেই। তবে, মেয়ে আগে একটু সুস্থ হয়ে উঠুক।’’ যদিও ‘তেমন ভাবে’ বলতে কী বোঝাতে চাইছেন, পরিষ্কার করেননি তিনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন