মৃত্যুর খবর যায়নি বাড়িতে, বিক্ষোভ থানায়

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০২ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০৪:১৫
Share:

শিবশঙ্কর সাউ।—নিজস্ব চিত্র

থানা থেকে তাঁর বাড়ির দূরত্ব দু’কিলোমিটারও নয়। অথচ নিখোঁজ যুবকের বাড়িতে তাঁর মৃত্যুর খবর পৌঁছতে সময় লাগল পাঁচ দিনেরও বেশি! ঘটনাটি প্রত্যন্ত এলাকার নয়, খাস কলকাতার ও খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাড়ার।

Advertisement

স্থানীয়দের দাবি, পুলিশের বিরুদ্ধে এমনই অবহেলার অভিযোগ তুলে শনিবার সকালে কালীঘাট থানায় বিক্ষোভ দেখাতে জড়ো হন মৃতের পাড়ার শ’খানেক বাসিন্দা। তাঁদের অভিযোগ, পুলিশই ওই যুবককে খুন করেছে। তাই উদ্ধারের পরেও খবর দেয়নি। পুলিশ জানায়, মিনিট পনেরো-কুড়ি ধরে চলে বিক্ষোভ। উত্তেজিত জনতার ছোড়া ইটে থানায় কাচ ভেঙে গিয়েছে বলে দাবি স্থানীয়দের। বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ, পুলিশ তাঁদের লাঠিপেটা করেছে। আহত হয়েছেন কয়েক জন মহিলাও। পুলিশ অবশ্য লাঠিপেটা এবং কাচ ভাঙচুর, দু’টি অভিযোগই অস্বীকার করেছে।

পুলিশ সূত্রে খবর, চেতলার রাখাল দাস আঢ্য রোডের বাসিন্দা শিবশঙ্কর সাউ (৩০) ওরফে চিমা ২৬ অগস্ট রাতে নেশাগ্রস্ত অবস্থায় এসএসকেএম থেকে নিখোঁজ হয়ে যান। ২৭ তারিখ, সোমবার তাঁর পরিবার ভবানীপুর থানায় অভিযোগ দায়ের করে। ওই রাতেই কালীঘাট থানা চিমাকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করে এসএসকেএমেই ভর্তি করে। পরে তিনি মারাও যান। কিন্তু অভিযোগ, পুলিশের তরফে কোনও খবর পায়নি চিমার পরিবার। শুক্রবার রাতে তাঁরা নিজেরাই কালীঘাট থানায় যোগাযোগ করেন। তার পরে ছেলের মৃত্যুর খবর পান বলে দাবি তাঁদের। শনিবার দেহটি শনাক্ত করেন পরিজনেরা।

Advertisement

শিবশঙ্কর সাউয়ের মৃত্যুর খবর না জানানোয় কালীঘাট থানায় বিক্ষোভ দেখানো হয় বলে অভিযোগ। শনিবার।—নিজস্ব চিত্র

এ দিন সকালে চিমার বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল, কান্নায় ভেঙে পড়েছেন তাঁর মা অঞ্জনা সাউ। তাঁর অভিযোগ, ‘‘পুলিশই চিমাকে মেরে ফেলেছে। তাই পাঁচ দিন কোনও খবর দেয়নি।’’ ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজ কেন পুলিশ দিচ্ছে না, সেই প্রশ্নও তুলেছেন তিনি।

নিখোঁজ ব্যক্তিদের দ্রুত খুঁজে বার করার জন্য মোবাইল অ্যাপ চালু করেছে লালবাজার। তা ছাড়া, অজ্ঞাতপরিচয় কোনও দেহ উদ্ধার হলে মৃতের ছবি তুলে সব থানায় বার্তা পাঠানোর কথা। একই ভাবে সবিস্তার বিবরণ দিয়ে বার্তা যায় নিখোঁজ সম্পর্কেও। পুলিশের কাজ, দুই বার্তা মিলিয়ে দেখা এবং কোনও নিখোঁজ ব্যক্তি ও মৃতদেহের বিবরণে মিল থাকলে সংশ্লিষ্ট পরিবারকে খবর দেওয়া। কিন্তু অভিযোগ, চিমার ক্ষেত্রে সে সব খতিয়ে দেখা হয়নি। কলকাতা পুলিশের ডেপুটি কমিশনার (দক্ষিণ) মিরাজ খালিদ বলেন, ‘‘ওই ঘটনায় কোনও গাফিলতি রয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হবে।’’ পুলিশের একটি সূত্রের দাবি, দুই থানার মধ্যে সমন্বয়ের অভাবে এই ঘটনা ঘটেছে। বাদ যাচ্ছে না লালবাজারের গোয়েন্দা বিভাগের মিসিং পার্সন স্কোয়াডের ভূমিকাও।

চিমার বাবা নাড়ুগোপাল সাউ এ দিন জানান, ২৬ অগস্ট রাতে চিমা ফোনে জানান, হাতে আঘাত লাগায় তিনি এসএসকেএমে যাচ্ছেন। এর পরেই আর এক ছেলেকে নিয়ে সেখানে পৌঁছন তিনি। চিকিৎসা শুরুর আগেই চিমা নেশাগ্রস্ত অবস্থায় উন্মত্ত আচরণ শুরু করেন। নাডুগোপালবাবুরা থামানোর চেষ্টা করলে তিনি ধাক্কা মেরে পালিয়ে যান। ২৭ তারিখ তাঁরা ভবানীপুর থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করেন। পরে লালবাজারেও জানান।

নাড়ুগোপালবাবু জানান, পুলিশের কাছ থেকে তথ্য না পেয়ে শুক্রবার নিজেরাই চিমার ছবি নিয়ে এলাকায় বেরোন। এক দোকানদার জানান, ওই যুবক অচেতন অবস্থায় রাস্তায় পড়েছিলেন। কালীঘাট থানার পুলিশ তাঁকে উদ্ধার করে। এর পরে রাতেই তাঁরা কালীঘাট থানায় যান। পুলিশ জানায়, চিমা ২৬ তারিখ রাতে কালীঘাট থানা এলাকায় একটি গাড়ির কাচ ভেঙেছিলেন। তার পরেই অজ্ঞান হয়ে পড়ে যান বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছিলেন। পরিবারের তরফে খুনের অভিযোগ করা হলেও পুলিশের দাবি, ময়না-তদন্তের প্রাথমিক রিপোর্টে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে মৃত্যুর কথা বলা হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন