রুট যাদবপুর থেকে তারাতলা। কিন্তু চলে কয়েক ভাগে। যাদবপুর থেকে সাউথ সিটি বা লেক গার্ডেন্স, যাদবপুর থেকে আনোয়ার শাহ রোড বা রবীন্দ্র সরোবর মেট্রো স্টেশন এবং যাদবপুর থেকে টালিগঞ্জ ফাঁড়ি বা তারাতলা।
পরিবহণ দফতরের বিজ্ঞপ্তিতে লেখা আছে, রুট উল্টোডাঙা থেকে লঞ্চঘাট। কিন্তু কোনও চালককে বলতে শোনা যায় না, তিনি লঞ্চঘাট যাবেন। সবাই জানেন, রুটটাই আসলে উল্টোডাঙা থেকে শোভাবাজার মেট্রো।
এ ছাড়া চার জনের জায়গায় পাঁচ জন যাত্রী নেওয়া বা অভব্য আচরণ তো আছেই। উল্টোডাঙা থেকে শোভাবাজার যাওয়ার পথে বেপরোয়া গাড়ি চালানোর প্রতিবাদ করেছিলেন শর্মিষ্ঠা সেন নামে এক যাত্রী। অটোচালকের পাল্টা জবাব, ‘‘আপনি এতো চেঁচাচ্ছেন কেন! কই, অন্য কেউ তো কিছু বলছেন না!’’
পরিবহণমন্ত্রী হওয়ার পরে মদন মিত্র প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, বেআইনি অটোরিকশার বিরুদ্ধে অভিযান চালাবে সরকার। বেআইনি অটোর সংখ্যা নির্ধারণ করতে পরিবহণ দফতরের তদানীন্তন যুগ্মসচিব আশিস ঠাকুরের নেতৃত্বে একটি কমিটিও গড়ে রাজ্য সরকার। কলকাতা ও লাগোয়া এলাকায় কত বেআইনি অটো রয়েছে, সার্বিক ভাবে অটোকে শৃঙ্খলায় বাঁধা যায় কী ভাবে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত রিপোর্ট দিতে বলা হয় ওই কমিটিকে। তিন মাসের মধ্যে জমা পড়ে রিপোর্টও। কিন্তু এখনও তা দিনের আলো দেখেনি। অটোকে আইনে বাঁধতে এমনকী রাস্তায়ও নেমে পড়েছিলেন মদনবাবু। কিন্তু পরিস্থিতির কোনও পরিবর্তনই হয়নি।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দ্বিতীয়বারের মন্ত্রিসভায় নয়া পরিবহণমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারীও সম্প্রতি ঘোষণা করেছেন পৃথক অটোনীতি তৈরি করা হবে। পরিবহণ দফতর সূত্রে খবর, অটোর দাদাগিরি বন্ধ করা ও রাজ্যের সব অটোকে এক শৃঙ্খলায় বাঁধা, পৃথক অটো নীতি তৈরির পিছনে সেটাই মন্ত্রীর প্রধান উদ্দেশ্য। কিন্তু আদৌ তিনি বেপরোয়া অটোকে শৃঙ্খলায় বাঁধতে পারবেন কি না, তা নিয়ে সন্দিহান শাসক দলের নেতাদের একাংশই। তাঁদের কথায়, ‘‘ভোটে পেশীশক্তি থেকে সভা জমায়েত— সব কিছুতেই ভরসা জোগায় অটো ইউনিয়ন। এমন এক সংগঠিত শক্তিকে বাম আমলেও তাবড় নেতারা খোঁচাতে চাননি, এই আমলেও নয়। রাজ্য প্রশাসনের এক শীর্ষ কর্তার কথাতেই এই ইঙ্গিত স্পষ্ট। তিনি বলেন, ‘‘মন্ত্রী পৃথক অটোনীতি তৈরির কথা বলেছেন। কিন্তু তার মানে এখনই সরকার হইহই করে অটো শাসনে নেমে পড়বে— এমনটা নয়। ধীরে চলার নীতি নিয়েই চলতে চায় সরকার।’’
আশিস ঠাকুরের নেতৃত্বে ওই কমিটি তাদের রিপোর্টে বলেছিল, কলকাতার অটোকে কয়েকটি অঞ্চলে ভাগ করা হোক। তার বাইরে কোনও অটোই যেতে পারবে না। নির্দিষ্ট রঙের মাধ্যমে এলাকাভিত্তিক অটোকে চেনা যাবে। ধীরে ধীরে অটোকে আনা হোক দেশের অন্য শহরের মতো মিটারের আওতায়। তা হলে অটোর দাদাগিরি অনেকটাই কমবে বলে দাবি করেছিল ওই কমিটি। এমনকী, ভাড়া নিয়ন্ত্রণেও নির্দিষ্ট সুপারিশ করেছিল কমিটি। বেআইনি অটোর দৌরাত্ম্য রুখতে কলকাতার প্রতিটি বৈধ অটোতে ‘হাই সিকিওরিটি নম্বর প্লেট’ লাগানোর কথা ঘোষণা করেছে সরকার। তা হলে সহজেই বেআইনি অটো চিহ্নিত করা যাবে। আজ পর্যন্ত এই নির্দেশও বাস্তবায়িত হয়নি। অভিযোগ মানছেন অটো চালকদের একাংশও। বেআইনি ভাবে কাটা রুটে চালানোর জন্য তাঁদের যুক্তি, পুলিশি ধড়পাকড়ে তাঁরা জেরবার। লাভের গুড়ের ব়ড় অংশ খেয়ে যায় পুলিশই। সে জন্যই কাটা রুটে অটো চালিয়ে বেশি আয় করার চেষ্টা করেন চালকেরা।
অটোচালকদের এই অভিযোগ অবশ্য উড়িয়ে দিচ্ছেন কলকাতা পুলিশের কর্তারা। তাঁদের কথায়, ‘‘নিজেদের দোষ ঢাকতে অটো চালকেরা এ সব বলছেন।’’ তা হলে পুলিশ কেন অটোর দাদাগিরি নিয়ন্ত্রণে আনতে পারছে না? কলকাতা পুলিশের দাবি, অটোতে এখন চার জনের বেশি যাত্রী নেওয়ার বিষয়টি অনেকটাই কমে গিয়েছে। তবে কাটারুটের দৌরাত্ম্য যে কমেনি, তা মেনে নিচ্ছেন তাঁরা। লালবাজারের এক কর্তার কথায়, ‘‘শাসক দলের নেতারাই কাটারুটের পক্ষে। চাইলেও তাই আমরা এর বিরুদ্ধে ব্যাপক অভিযান চালাতে পারছি না।’’