বিপদের মুখে সুরক্ষা কই, উঠছে প্রশ্ন

ম্যানহোলের ঢাকনা সরিয়ে নেমে, প্রবল গ্যাসে দম বন্ধ করে কেউ ঠিক করেন নিকাশি নালার খুঁত। কেউ আবার উঁচু বিদ্যুৎ স্তম্ভে উঠে কয়েকশো ভোল্ট প্রবাহের মধ্যেই ঠিক করেন খারাপ হয়ে যাওয়া আলো। কোথাও আবার ক্ষতি রুখতে আগুনের মুখে ঝাঁপিয়ে পড়ছেন কেউ।

Advertisement

তিয়াষ মুখোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৪ মে ২০১৭ ১৪:১০
Share:

বিপজ্জনক: সুরক্ষার কোনও সরঞ্জাম ছাড়াই চলছে ম্যানহোল সাফাই এবং বাতিস্তম্ভ সারাইয়ের কাজ। ছবি: দেশকল্যাণ চৌধুরী ও শৌভিক দে।

ম্যানহোলের ঢাকনা সরিয়ে নেমে, প্রবল গ্যাসে দম বন্ধ করে কেউ ঠিক করেন নিকাশি নালার খুঁত। কেউ আবার উঁচু বিদ্যুৎ স্তম্ভে উঠে কয়েকশো ভোল্ট প্রবাহের মধ্যেই ঠিক করেন খারাপ হয়ে যাওয়া আলো। কোথাও আবার ক্ষতি রুখতে আগুনের মুখে ঝাঁপিয়ে পড়ছেন কেউ।

Advertisement

সম্প্রতি বড়বাজারের পর্তুগিজ চার্চ স্ট্রিটের একটি রাসায়নিকের দোকানে আগুন নেভাতে গিয়ে গুরুতর জখম হয়েছেন ১০ জন দমকলকর্মী। বন্ধ দোকানের শাটার তুলতেই বিস্ফোরণে ঝলসে যান তাঁরা। এই ঘটনায় দমকলের অন্দরেই প্রশ্ন উঠেছিল, কর্মীদের প্রশিক্ষণ যথাযথ হয় কি? দমকলের আধিকারিকদের একাংশই বলেছিলেন, ওই কর্মীরা যথেষ্ট অভিজ্ঞ ও প্রশিক্ষিত হলে এমনটা হতো না। এক প্রাক্তন দমকল কর্তার কথায়, ‘‘আগের মতো প্রশিক্ষণই হয় না নতুন কর্মীদের। ওঁরা শিখবেন কী করে, কোন পরিস্থিতিতে কী ভাবে এগিয়ে যেতে হয় নিজেকে বাঁচিয়ে?’’ এক অস্থায়ী দমকলকর্মীর কথায়, ‘‘শুধু গামবুট আর হেলমেট পরিয়ে আগুনের মুখে ছেড়ে দেওয়া হয় আমাদের। তার আগে যে ট্রেনিং হয়, তাতে আমাদের ভয়ই কাটে না!’’

খাতায়-কলমে এই কর্মীদের বলা হয় ‘স্কিল্‌ড লেবার’। কিন্তু মাঝেমধ্যেই ঘটে যাওয়া এমন কিছু দুর্ঘটনা প্রশ্ন তুলেছে, মানুষকে নিরাপত্তা দিতে যাঁরা কার্যত সব
তুচ্ছ করে এগিয়ে যাচ্ছেন, তাঁরা নিজেরা কতটা সুরক্ষিত? পুরসভার এক নিকাশি-কর্তা জানালেন, যে অবস্থায় এই কর্মীরা কাজ করতে বাধ্য হচ্ছেন, তাতে যে কোনও সময়ে বড় বিপদ ঘটতে পারে। ওই কর্তার কথায়, ‘‘এই পরিস্থিতি বদলাতে আমরা চেষ্টা করছি যন্ত্র দিয়ে এই কাজ করানোর। এ বছরই ৫৩ কোটি
টাকার যন্ত্রপাতি কেনা হবে নিকাশি কাজ সহজ করার জন্য।’’ যদিও পুরসভারই অন্য একটি সূত্র বলছে, এ ধরনের কাজগুলি সম্পূর্ণ যন্ত্র-নির্ভর হয়ে ওঠা কার্যত অসম্ভব। তাই যদি কাজের সময়ে প্রয়োজনীয় সুরক্ষা নেওয়া যায়, বিপদের আশঙ্কা অনেকটাই কমে।

Advertisement

পুরসভায় বাতিস্তম্ভ সারানোর কাজে দীর্ঘ দিন নিযুক্ত এক কর্মীর কথায়, ‘‘আমি বাবা-কাকাকে দেখেই প্রাথমিক কাজ শিখেছি। বাকিটা অভিজ্ঞতা। কিন্তু আমি নিজে চাই না, আমার ছেলে এই কাজই করুক। পরিবারের ইচ্ছে, সে লেখাপড়া শিখে চাকরি করুক।’’

স্বভাবতই প্রশ্ন উঠছে, দক্ষ শ্রমিকের কাজের দক্ষতা কি তা হলে এ ভাবেই কমতে থাকবে? পুরসভায় কর্মী সংগঠনের এক নেতা জানাচ্ছেন, এই ধরনের কাজে সুরক্ষা
যেমন নেই, তেমনই এই চাকরিরও কোনও সামাজিক নিরাপত্তা নেই। অস্থায়ী কর্মী হিসেবে যাঁরা কাজ করছেন, তাঁরা না পান যথেষ্ট বেতন, না আছে তাঁদের জন্য বিমা বা ওই ধরনের আর্থিক সুবিধা। কাজ করতে গিয়ে বিপদে পড়লে তাঁদের পরিবার অথৈ জলে পড়ে। ওই নেতার কথায়, ‘‘খুব স্বাভাবিক ভাবেই এ সব কাজে নিজে থেকে আগ্রহ দেখিয়ে আসা, শেখায় নতুন প্রজন্মের অনীহা খুবই সঙ্গত। তাই থেকে যাচ্ছে দক্ষতার অভাব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন