গঙ্গার দায় কার, সব পক্ষকে বৈঠকের নির্দেশ

নদী একটাই। কিন্তু তার মালিক অনেক। কিন্তু সেই নদী বিপন্ন হলে দায় নেবে কে?এই প্রশ্নেই শুক্রবার সরগরম হল কলকাতার জাতীয় পরিবেশ আদালত বা ন্যাশনাল গ্রিন ট্রাইব্যুনালের এজলাস। কলকাতার গঙ্গাপাড়ের দূষণ ঠেকাতে সব পক্ষকে নিয়ে বৈঠকের সিদ্ধান্ত নিয়েছে ট্রাইব্যুনালের বিচারপতি এস পি ওয়াংদি ও বিশেষজ্ঞ-সদস্য পি সি মিশ্রের ডিভিশন বে়ঞ্চ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০১:০৯
Share:

নদী একটাই। কিন্তু তার মালিক অনেক। কিন্তু সেই নদী বিপন্ন হলে দায় নেবে কে?

Advertisement

এই প্রশ্নেই শুক্রবার সরগরম হল কলকাতার জাতীয় পরিবেশ আদালত বা ন্যাশনাল গ্রিন ট্রাইব্যুনালের এজলাস। কলকাতার গঙ্গাপাড়ের দূষণ ঠেকাতে সব পক্ষকে নিয়ে বৈঠকের সিদ্ধান্ত নিয়েছে ট্রাইব্যুনালের বিচারপতি এস পি ওয়াংদি ও বিশেষজ্ঞ-সদস্য পি সি মিশ্রের ডিভিশন বে়ঞ্চ। ১৭ অক্টোবর ট্রাইব্যুনালে ওই বৈঠক হবে। জটিলতা কাটাতে সব পক্ষকে নিয়ে বৈঠক বিরল নয়। ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর জট কাটাতে হাইকোর্টে এমন বৈঠক হয়েছে। কিন্তু এ রাজ্যে পরিবেশ সংক্রান্ত কোনও মামলায় এমন বৈঠক আগে হয়নি।

কলকাতার গঙ্গাপাড়ের সৌন্দর্যায়নের জেরে নদী ও জীববৈচিত্রের ক্ষতি নিয়ে মামলা দায়ের করেছিলেন পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্ত। তাঁর যুক্তি ছিল, কলকাতায় গঙ্গার পাড় এমনিতেই ভাঙছে। সৌন্দর্যায়নের নামে গঙ্গার মধ্যে নির্মাণ হচ্ছে। এতে পাড়ের ক্ষতি তো হচ্ছেই, বিপদে প়ড়ছে গঙ্গার জীববৈচিত্রও। এই পরিস্থিতিতে গঙ্গার হাল ফেরানোর দায়িত্ব কে নেবে, তা নিয়েই শুরু হয়েছিল বিতর্ক।

Advertisement

গঙ্গা ও তার তীরের কিছুটা অংশ কলকাতা বন্দরের সম্পত্তি। কিন্তু তারা দায় নিতে চায়নি। গঙ্গার জল দূষিত হচ্ছে কি না, তা দেখে দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ। পরিকাঠামোর অভাবের যুক্তি দেখিয়ে দায়িত্ব নেননি পর্ষদের চেয়ারম্যানও। দায় নিতে চায়নি গঙ্গাপাড় সৌন্দর্যায়নের ভারপ্রাপ্ত কেএমডিএ-ও। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়কে দায়িত্ব দেওয়ার কথা হলেও কোন বিভাগ করবে, তাতে বিভ্রান্তি তৈরি হওয়ায় কাজ এগোয়নি। এমনকী, মামলার গোড়ায় সব পক্ষকে নিয়ে যে কমিটি তৈরি হয়েছিল, তাতেও তেমন কাজ হয়নি।

এ দিন শুনানির শুরুতে মামলার আবেদনকারী সুভাষ দত্ত জানান, গঙ্গার পাড় ভাঙছে। বর্ষায় জোরালো বানের ধাক্কায় আরও ক্ষতি হচ্ছে। বিচারপতি ওয়াংদি বন্দরের আইনজীবী দীপক মুখোপাধ্যায়ের কাছে জানতে চান, বন্দর কেন পাড় ভাঙার কারণ খতিয়ে দেখছে না? দীপকবাবু জানান, বন্দরের নিজস্ব ‘হাই়ড্রোলজি’ (জল সং‌ক্রান্ত প্রযুক্তি) বিশেষজ্ঞ নেই। বিচারপতি ওয়াংদি সেই যুক্তিকে আমল দেননি। তিনি জানান, বাইরের কোনও বিশেষজ্ঞকে নিয়োগ করুক বন্দর। এই কাজে কত সময় লাগবে জানতে চাইলে দীপকবাবু প্রথমে নির্দিষ্ট উত্তর দিতে পারায় বিচারপতি নিজেই চার সপ্তাহের সময়সীমা দেন।

বন্দরকে সময় দেওয়ার পরেই আদালতের তৈরি কমিটি ও গঙ্গার দায় কার, সেই প্রশ্ন ওঠে। বিচারপতি জানান, সব পক্ষকে নিয়ে বৈঠক করা প্রয়োজন। না হলে সমাধান মিলবে না। গঙ্গার সঙ্গে জড়িত সব পক্ষের নাম জানতে চান বিচারপতি। কোন সংস্থা থেকে কোন পদের কর্তা আসবেন, সে প্রশ্ন উঠলেও বিচারপতির স্পষ্ট নির্দেশ, এমন কাউকে আসতে হবে যিনি নিজে সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন। আইনজীবীদের অনেকেই বলছেন, পরিবেশ সংক্রান্ত মামলায় বারবার সিদ্ধান্ত নেওয়া, হলফনামা দেওয়ার নামে সময় নষ্ট হয়। তাই হয়তো আদালত সব পক্ষকে একসঙ্গে চাইছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন