পরিকাঠামো নিয়ে প্রশ্ন পিজি-তে

পর পর একাধিক চিকিৎসক নিগ্রহের ঘটনার অনেক গুলিরই নেপথ্যে রয়েছে স্বাস্থ্য ব্যবস্থার পরিকাঠামোগত ত্রুটি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০২:২৩
Share:

ফাইল চিত্র।

সোমবার সন্ধ্যায় এসএসকেএম হাসপাতালে বিদ্যুৎ বিভ্রাটের ঘটনার জেরে ফের প্রশ্নের মুখে পড়েছে সরকারি স্বাস্থ্য পরিকাঠামো। পাশাপাশি চিকিৎসকেরা প্রশ্ন তুলেছেন, এই পরিকাঠমোগত ত্রুটির জেরে কোনও রোগীর বড় কোনও ক্ষতি হলে, তার দায় কে নিতেন?

Advertisement

পর পর একাধিক চিকিৎসক নিগ্রহের ঘটনার অনেক গুলিরই নেপথ্যে রয়েছে স্বাস্থ্য ব্যবস্থার পরিকাঠামোগত ত্রুটি। চিকিৎসকদের একাংশের আশঙ্কা, এসএসকেএমে বিদ্যুৎ বিভ্রাটের জেরে বড় কোনও বিপত্তি ঘটলে ফের সেই নিগ্রহের পুনরাবৃত্তি ঘটতে পারত।

সোমবার সন্ধ্যা পৌনে সাতটা নাগাদ বিদ্যুৎ বিভ্রাট ঘটে এসএসকেএম হাসপাতালের মেন বিল্ডিংয়ে। হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, প্রায় কুড়ি মিনিট ওই বিল্ডিংয়ে ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) বিদ্যুৎ ছিল না। সেই সময় উনিশ জন রোগী ভেন্টিলেশনে ছিলেন। যার মধ্যে আটটির কোনও ব্যাটারি ব্যাক আপ ছিল না। অর্থাৎ বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ হয়ে গেলে বড় ধরনের বিপর্যয় ঘটে যেতে পারত। বাকি ১১টি ব্যাটারির মধ্যে তিনটি মিনিট দশেক পরে বন্ধ হয়ে যায়। তখন হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক, নার্স এবং হাসপাতাল কর্মীরা রোগীদের অন্যত্র নিয়ে যান ও পরিষেবা অব্যহত রাখার চেষ্টা করেন। সামান্য এ দিক ও দিক হলে ব়়ড় বিপদ ঘটে যেতে পারত।

Advertisement

মঙ্গলবার চিকিৎসক মহলে প্রশ্ন ওঠে, চিকিৎসকদের নিরাপত্তা যেখানে বারবার ব্যাহত হচ্ছে, সেখানে পরিকাঠামোর মান যথাযথ রাখতে কর্তৃপক্ষ আরও বেশি যত্নবান কেন হবেন না?

এ প্রসঙ্গে চিকিৎসকদের সংগঠন ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল ডক্টর্স ফোরাম’-র তরফে চিকিৎসক অর্জুন দাশগুপ্ত বলেন, ‘‘চিকিৎসকেরা রোগীদের প্রাণ বাঁচানোর চেষ্টা চালাবেন সেটাই স্বাভাবিক। তবে মাথায় রাখতে হবে, স্বাস্থ্য পরিষেবার সব কিছু তাঁদের হাতে নেই। তাই স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সামান্য ত্রুটি থাকলেও যখন সেটার জন্য চিকিৎসকের দিকে আঙুল উঠে, তখন সেটা মেনে নেওয়া যায় না।’’ আরেক সংগঠন ‘ডক্টর্স ফর পেশেন্ট’-এর তরফে চিকিৎসক কৃষ্ণেন্দু মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘পাইলট প্লেন চালালেও বিমান পরিবহনের সবটা কিন্তু তাঁর হাতে থাকে না। চিকিৎসকদের ক্ষেত্রেও এ কথা প্রযোজ্য।’’

এসএসকেএম-এর এক কর্তা বলেন, ‘‘এটা একটা দুর্ঘটনা। সেটাকে পরিকাঠামোগত ত্রুটি বলা ঠিক নয়। রোগী নিরাপত্তার বিষয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের যথেষ্ট নজরদারি রয়েছে।’’ যদিও হাসপাতালের অধিকর্তা অজয়কুমার রায় কোনও প্রতিক্রিয়া জানাতে চাননি।

স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা দেবাশিস ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘এসএসকেএম হাসপাতালের ঘটনায় চিকিৎসক এবং হাসপাতাল কর্মীদের ভূমিকা ইতিবাচক। তবে এই ধরণের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রুখতে আমরা পূর্ত দফতর এবং সিইএসসি-র সঙ্গে বৈঠক করব।’’

বস্তুত, বিভিন্ন হাসপাতালে বিদ্যুৎ বিভ্রাটের ঘটনায় সিইএসসি-র ভূমিকা নিয়ে প্রায়শই প্রশ্ন ওঠে। এই প্রসঙ্গে এ দিন সিইএসসি-র এক কর্তার দাবি, রক্ষণাবেক্ষণ সংক্রান্ত যতটা দায়িত্ব তাঁদের রয়েছে, সেটা তাঁরা নিয়মিত পালন করেন। সম্প্রতি তাঁরা তেল নির্ভর ট্রান্সফর্মার বদলে দিয়ে অন্য প্রযুক্তির (ড্রাই) ট্রান্সফর্মার অধিকাংশ জায়গায় লাগিয়ে দিয়েছেন। যাতে বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে কোনও বড় দুর্ঘটনা না ঘটতে পারে। পাশাপাশি, প্রতিটি হাসপাতাল, নার্সিংহোমকে লিখিত ভাবে আবেদন করা হয়েছে যাতে তাদের অভ্যন্তরীণ বিদ্যুৎ পরিকাঠামোর নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়। এই সংক্রান্ত পরামর্শের জন্য সংস্থার পক্ষ থেকে নোডাল অফিসারও রাখা হয়েছে। যাঁর
ফোন নম্বর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে দেওয়া রয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন