মুকুন্দপুরের আমরি হাসপাতালের ইউনিট হেড জয়ন্তী চট্টোপাধ্যায়।
রোগীকে মারাত্মক অসুখ সম্পর্কে বোঝানো কিংবা মৃত্যুর খবর পরিবারকে জানানো, কী ভাবে করবেন চিকিৎসক! সে নিয়ে বারবার আলোচনা হয়।
কিন্তু স্বাস্থ্য পরিষেবায় শুধুই কি রোগী এবং চিকিৎসকের যোগাযোগ হয়! বেসরকারি স্বাস্থ্যক্ষেত্রে রোগীদের সঙ্গে সব সময় যোগাযোগ রাখেন হাসপাতালের প্রশাসনিক কর্তারা। তাঁদের জনসংযোগের দক্ষতা কতটা? আমরির ঘটনা সেই প্রশ্নকে তুলে ধরল।
সম্প্রতি মুকুন্দপুরের আমরি হাসপাতালে আড়াই বছরের ঐত্রী দে মারা যায়। পরিবার চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ তুললে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানান হাসপাতালের ইউনিট হেড জয়ন্তী চট্টোপাধ্যায়। মৃত শিশুর পরিবারকে বলেন, ‘‘মস্তানি করবেন না। আমার থেকে বড় মস্তান এখানে কেউ নেই।’’
এই ঘটনায় প্রশ্ন ওঠে, বেসরকারি হাসপাতালের ম্যানেজমেন্টে থাকা কর্মীদের জনসংযোগের কোনও প্রশিক্ষণ কি আদৌ থাকে।
আমরি হাসপাতালের সিইও রূপক বড়ুয়া জানান, হাসপাতাল ম্যানেজমেন্টের কর্মীদের কথা বলার ধরণ এবং রোগীদের সঙ্গে জনসংযোগ কী ভাবে করা যায়, তা শেখানোর জন্য নির্দিষ্ট প্রশিক্ষণ বিভাগ রয়েছে। হাসপাতালের ফ্রন্ট অফিস থেকে হাউজ কিপিং সব বিভাগের কর্মীরা দু’মাসে এক বার করে প্রশিক্ষণ নেন। রোগীদের সঙ্গে কী ভাবে কথা বলা হবে কিংবা তাঁদের পরিজনদের সঙ্গে কেমন ব্যবহার করতে হবে সব কিছুই শেখানো হয়। হাসপাতাল ম্যানেজমেন্টের উচ্চস্তরের কর্তাদেরও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা রয়েছে। ছ’মাস অন্তর তাঁদের জন্য কর্মশালা হয়। প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য ‘কমিউনিকেশন স্কিল’ বিশেষজ্ঞদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
জয়ন্তীদেবীর প্রসঙ্গে রূপকবাবু বলেন, ‘‘প্রায় কুড়ি বছর ধরে জয়ন্তীদেবী হাসপাতালে দায়িত্ব সামলাচ্ছেন। কিন্তু সে দিনের ঘটনা দুর্ভাগ্যজনক। বাবা-মায়ের আবেগ বোঝা উচিত ছিল। ওঁর মতো অভিজ্ঞ কর্তা যথেষ্ট প্রশিক্ষিত। তার পরেও কী ভাবে এমন ঘটল বুঝতে পারছি না। হয়তো পরিস্থিতি খারাপ ছিল।’’
শহরের আরও এক বেসরকারি হাসপাতাল অ্যাপোলোর সিইও রানা দাশগুপ্ত জানান, জনসংযোগের দক্ষতা তাঁদের হাসপাতালে সবথেকে বেশি গুরুত্ব পায়। রোগীর পরিজনদের সঙ্গে কী ভাবে কথা বলতে হবে সে নিয়ে লাগাতার প্রশিক্ষণ শিবির চলে। কোনও ক্রিটিক্যাল টেস্ট রিপোর্ট কিংবা জটিল রোগ সম্পর্কে কী ভাবে রোগী ও তাঁর পরিজনদের জানানো হবে। কিংবা তাঁদের সামলাতে হবে সবটাই শেখানো হয়। তাঁর কথায়, ‘‘কর্তৃপক্ষ নজরদারি রাখেন। হাসপাতাল কর্মীরা কী ভাবে রোগীর পরিজনদের সঙ্গে কথা বলছেন সেটা দেখা হয়। যাতে জনসংযোগে কোনও সমস্যা তৈরি না হয় সে দিকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়।’’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরও এক বেসরকারি হাসপাতালের তরফে জানানো হয়, চিকিৎসকদের পাশাপাশি কর্মীদের জনসংযোগের দক্ষতা বাড়াতে ফি-মাসে একাধিক প্রশিক্ষণ শিবিরের আয়োজন করে হাসপাতাল। রোগীর মৃত্যু সংবাদ তাঁর পরিবারকে জানানো কিংবা পরিজন কোনও কারণে উত্তেজিত হয়ে গেলে তাঁদের কী ভাবে সামলানো যায় সেটাও শেখানো হয় ওই শিবিরে।