Exam Result

শ্রেণি পরীক্ষার পর্যায়ক্রমিকে বেহাল ফল কেন, দায় কার

শিক্ষকেরা জানাচ্ছেন, পরীক্ষার খাতা এমন বেহাল হলেও প্রত্যেক পড়ুয়াই পরবর্তী ক্লাসে উঠে যাবে। এবং তার নাম স্কুলের পোর্টালে উঠে যাবে জানুয়ারি মাসের ১ তারিখেই।। কারণ প্রথম শ্রেণি থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পাশ-ফেল প্রথাই তো নেই।

আর্যভট্ট খান

শেষ আপডেট: ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫ ০৮:০২
Share:

—প্রতীকী চিত্র।

অষ্টম শ্রেণির এক পরীক্ষার্থীর তৃতীয় পর্যায়ক্রমিক পরীক্ষার খাতা দেখতে গিয়ে শিক্ষক দেখলেন, গোটা খাতায় কিছুই লেখেনি সে, শুধু প্রশ্নপত্রটাই টুকে দিয়ে গিয়েছে। তৃতীয় পর্যায়ক্রমিক পরীক্ষার খাতা দেখতে গিয়ে আর এক শিক্ষকের অভিজ্ঞতা, পুরো সাদা খাতা জমা দিয়েছে পরীক্ষার্থী। মাঝে মাঝে শুধু দু’-একটা প্রশ্নের উত্তরে লিখেছে, জানি না। সপ্তম শ্রেণির এক ছাত্র তৃতীয় পর্যাক্রমিক মূল্যায়নে বাংলা, ইংরেজি-সহ বেশিরভাগ বিষয়েই শূন্য পেয়েছে।

স্কুলগুলিতে তৃতীয় পর্যায়ক্রমিক পরীক্ষা সবে শেষ হয়েছে। ওই পরীক্ষার খাতা দেখতে গিয়ে এমনই সব অভিজ্ঞতা হচ্ছে শিক্ষকদের। তবে শিক্ষকেরা জানাচ্ছেন, পরীক্ষার খাতা এমন বেহাল হলেও প্রত্যেক পড়ুয়াই পরবর্তী ক্লাসে উঠে যাবে। এবং তার নাম স্কুলের পোর্টালে উঠে যাবে জানুয়ারি মাসের ১ তারিখেই।। কারণ প্রথম শ্রেণি থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পাশ-ফেল প্রথাই তো নেই। শিক্ষকদের পর্যবেক্ষণ, এর ফলে কোনও ভয়ও নেই বহু পড়ুয়ার। তারা জানে, পরীক্ষার খাতায় কিছু না লিখলেও তারা ঠিকই পরবর্তী ক্লাসে উঠে যাবে।

পড়াশোনার এই হাল দেখে অনেক শিক্ষকই আবার দাবি করছেন, পাশ-ফেল চালু করা হোক। না হলে নবম শ্রেণিতে উঠে দেখা যাচ্ছে, বহু ছাত্রেরই সেই পর্যন্ত পৌঁছনোর যোগ্যতা নেই।

উত্তর কলকাতার বেলগাছিয়া মনোহর অ্যাকাডেমির শিক্ষিকা সুমনা সেনগুপ্ত বলেন, ‘‘পাশ-ফেল প্রথা নেই বলে বহু পড়ুয়া মনেই করে না যে পরীক্ষা দেওয়া এক জন ছাত্রের সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। যেমন, অষ্টম শ্রেণির এক পড়ুয়া সমস্ত পরীক্ষা দিয়েও হঠাৎ করে ভূগোল পরীক্ষার দিন আসেনি। ওর বন্ধুরা বলল, আগে থেকে নাকি ঠিক করা ছিল, তাই সে দিঘা বেড়াতে চলে গিয়েছে।’’ সুমনা বলেন, “ওই ছাত্র ভূগোল পরীক্ষা না দিয়ে দিঘা চলে গিয়েছে, কারণ সে জানে পরীক্ষা না দিলেও সে পরের ক্লাসে উঠে যাবে। এতটাই পরীক্ষা নিয়ে দায়িত্ববোধের অভাব।’’

নিয়ম মতো প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় পর্যায়ক্রমিক পরীক্ষার পরে একটি সার্বিক মূল্যায়ন হওয়ার কথা। কয়েক জন শিক্ষক জানাচ্ছেন, কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে, প্রথম বা দ্বিতীয় পর্যায়ক্রমিকে না বসে শুধুমাত্র তৃতীয় পর্যায়ক্রমিক পরীক্ষা দিচ্ছে বহু ছাত্র। তাঁদের মতে, এমন গা-ছাড়া মনোভাব থাকত না, যদি অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পাশ-ফেল প্রথা থাকত। যাদবপুর বিদ্যাপীঠের প্রধান শিক্ষক পার্থপ্রতিম বৈদ্যের মতে, “নবম শ্রেণি পর্যন্ত কোনও ক্লাসে আটকানো হয় না। ফলে যারা নবম শ্রেণিতে ওঠে, তাদের অনেকেরই ওই শ্রেণিতে ওঠার যোগ্যতাই থাকে না। পাশ-ফেল নেই বলে বহু পড়ুয়া শ্রেণির পরীক্ষাকে গুরুত্বই দিচ্ছে না। তৃতীয় পর্যায়ক্রমিকের খাতা দেখতে গিয়ে আরও প্রকট হয়েছে এই সমস্যা।’’

শিক্ষকদের মতে, ‘রাইট টু এডুকেশন অ্যাক্ট, ২০০৯’-এ বলা হয়েছে, অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত কানও পড়ুয়াকে ক্লাসে আটকানো যাবে না। শিক্ষকদের কাজ হল, সেই আইন মেনে চলা। তাঁরা সেই কাজটাই করছেন। সেটা মানতে গিয়ে যে অধিকাংশ পড়ুয়ার শিক্ষার মান খারাপ হয়ে যাচ্ছে, তা বিভিন্ন সমীক্ষায়ও ফুটে উঠেছে।

যদিও হিন্দু স্কুলে প্রধান শিক্ষক শুভ্রজিৎ দত্তের মতে, ‘রাইট টু এডুকেশন অ্যাক্টে’ কোনও পড়ুয়াকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত ক্লাসে রাখা যাবে না, এ কথা যেমন বলা হয়েছে, তেমনই এটাও বলা হয়েছে যে পড়ুয়াদের সারা বছর ধরে ধারাবাহিক মূল্যায়ন করতে হবে শিক্ষকদেরই। শুভ্রজিতের প্রশ্ন, “সেটা কি শিক্ষকেরা সবাই করেন? যে ছেলেটি লিখতে পারছে না, তার লার্নিং গ্যাপ হয়ে গিয়েছে। এক জন শিক্ষকের তো ওই পড়ুয়ার লিখতে না পারার লার্নিং গ্যাপ তার ক্লাস চলাকালীন মূল্যায়নেই ধরে ফেলা উচিত। সেটা ধরে ফেলে তাকে অতিরিক্ত ক্লাস করানো উচিত। এটা কি সব শিক্ষকেরা করেন? শিক্ষকেরা সেটা করলে বহু পড়ুয়ার তৃতীয় পর্যায়ক্রমিক পরীক্ষার বেহাল খাতা নিয়ে যে অভিযোগ উঠছে, সেটা হত না।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন

এটি একটি প্রিমিয়াম খবর…

  • প্রতিদিন ২০০’রও বেশি এমন প্রিমিয়াম খবর

  • সঙ্গে আনন্দবাজার পত্রিকার ই -পেপার পড়ার সুযোগ

  • সময়মতো পড়ুন, ‘সেভ আর্টিকল-এ ক্লিক করে

সাবস্ক্রাইব করুন