অন্য প্রকল্পের টাকায় ঘর সংস্কার ঘিরে বিতর্ক

এই প্রশ্নই এখন ঘুরপাক খাচ্ছে আলিপুরের দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা পরিষদ অফিসের আনাচে কানাচে। আর তা নিয়েই তৈরি হয়েছে বিতর্ক। যদিও অতিরিক্ত জেলাশাসক (জেলা পরিষদ) এই নিয়ে অনিয়মের অভিযোগ মানতে নারাজ। তাঁর দাবি, যা হয়েছে তা তো নিয়ম মেনেই।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৮ জুলাই ২০১৭ ০১:৪০
Share:

বিতর্ক: এই ভবনেরই তেতলায় কাজ হওয়ার কথা। নিজস্ব চিত্র

প্রধানমন্ত্রী গ্রামীণ আবাস যোজনার আনুষঙ্গিক তহবিল (কন্টিনজেন্সি ফান্ড) থেকে কি সভাধিপতির অফিসঘর সংস্কার করা যায়? এই প্রশ্নই এখন ঘুরপাক খাচ্ছে আলিপুরের দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা পরিষদ অফিসের আনাচে কানাচে। আর তা নিয়েই তৈরি হয়েছে বিতর্ক। যদিও অতিরিক্ত জেলাশাসক (জেলা পরিষদ) এই নিয়ে অনিয়মের অভিযোগ মানতে নারাজ। তাঁর দাবি, যা হয়েছে তা তো নিয়ম মেনেই।

Advertisement

আলিপুরে দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা পরিষদের অফিসে তেতলায় তিনটি ঘর সংস্কার শুরু হচ্ছে। মাস খানেক আগে এ জন্য ই-টেন্ডার দেওয়া হয়েছিল। দরপত্র ডেকে একটি সংস্থাকে দায়িত্বও দেওয়া হয়ে গিয়েছে। এ বার কাজ শুরুর অপেক্ষা। একটি কম্পিউটার রুম সংস্কার করতে দরপত্রে খরচ দেখানো হয়েছে ৪,৯৯,৪৩৫ টাকা। তেতলারই অন্য দু’টি ঘরের একটি অর্থ ও পরিসংখ্যান বিভাগ। অন্যটি সভাধিপতির ঘর। প্রথমটির সংস্কারে দরপত্রে খরচ ধার্য হয়েছে ৪,৯৯,৫৩৮ টাকা। দ্বিতীয়টির জন্য ধার্য হয়েছে ৪,৯৯,৯৫০ টাকা। তিন ক্ষেত্রেই টাকার উৎস প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার আনুষঙ্গিক তহবিল (কন্টিনজেন্সি ফান্ড)।

প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার শুরু ২০১৫ সালে। এই প্রকল্প গ্রামীণ এবং শহুরে দুই ধাঁচের হয়। দু’ ক্ষেত্রেই পুরো টাকাটা দেয় কেন্দ্রীয় সরকার। গ্রামীণ প্রকল্পের সুবিধাভোগীদের জন্য সেই টাকার অঙ্ক ১,২০,০০০। কেন্দ্র থেকে টাকা সরাসরি জেলা পরিষদে আসে। সেখান থেকেই টাকা যায় প্রকল্পের সুবিধাভোগীর অ্যাকাউন্টে।

Advertisement

উত্তর এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা পরিষদের আধিকারিকদের একাংশের দাবি, প্রকল্পের কন্টিনজেন্সি বলে যে তহবিলটি রয়েছে, সেখান থেকে শুধুমাত্র প্রকল্পের ‘আনুষঙ্গিক খরচ-খরচা’ করা যেতে পারে। বিল, ফাইল, যাতায়াত-সহ প্রকল্পের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত এমন খরচ। ‘আনুষঙ্গিক খরচ-খরচা’র মধ্যে কি অফিসঘর সংস্কারও আছে? স্পষ্ট উত্তর দিতে পারেননি দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা সভাধিপতি শামিমা শেখ। তাঁর উত্তর, ‘‘অফিসের তিনটি ঘর সংস্কার হচ্ছে জানি। কিন্তু তা কোন টাকা দিয়ে বলতে পারব না।’’ নিজস্ব তহবিল বা পরিকল্পনা বহির্ভূত তহবিল থেকে রাজ্য এবং কেন্দ্র যে টাকা পাঠায়, কেন সেখান খরচ করা হল না? সভাধিপতির দাবি, ‘‘ওই তহবিলে পর্যাপ্ত টাকা থাকে না। তাই সেখান থেকে খরচ করা হয়নি।’’

অতিরিক্ত জেলাশাসক (জেলা পরিষদ) দেবকুমার নন্দনের দাবি, ‘‘কোনও ভাবেই নিয়ম ভাঙা হয়নি। আমাদের অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ ফান্ড রয়েছে ২২ কোটি টাকার।
সেখান থেকেই এই খরচ।’’ তবে কন্টিনজেন্সি ফান্ডের উল্লেখ কেন দরপত্রে? তিনি বলেন, ‘‘অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ ফান্ড এবং কন্টিনজেন্সি ফান্ড একই। এই টাকা খরচের জন্য সরকারের থেকে লিখিত অনুমতি পেয়েছি।’’ যদিও এই প্রকল্পে যুক্ত অন্য জেলার আধিকারিকদের দাবি, অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ ও কন্টিনজেন্সি ফান্ড এক নয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন