প্রশ্ন আছে, তবু প্রত্যাখ্যানের জবাব দিচ্ছে রেডিও ট্যাক্সি

অ্যাপ চালিয়ে মাত্র দু’-তিন ধাপ। বাড়ির সামনে হাজির সেডান। এ ভাবেই অন্য শহরে লাগা কলঙ্ক ঘুচিয়ে কলকাতার যান-জীবন মসৃণ করতে উদ্যোগী রেডিও ট্যাক্সি। দিল্লিতে ‘উবের’ ধষর্ণ-কাণ্ডের পরে রেডিও ট্যাক্সি নিয়ে ভয় তৈরি হয়েছিল সর্বত্র। কিন্তু কলকাতায় হলুদ ট্যাক্সির দৌরাত্ম্যের কাছে হার মেনেছে আতঙ্ক। নিত্য নতুন প্রযুক্তির মাধ্যমে বাড়তি নিরাপত্তার আশ্বাস দিয়ে শহরে এখন রীতিমতো রমরমা রেডিও ট্যাক্সির।

Advertisement

সুচন্দ্রা ঘটক

শেষ আপডেট: ০২ এপ্রিল ২০১৫ ০০:০১
Share:

অ্যাপ চালিয়ে মাত্র দু’-তিন ধাপ। বাড়ির সামনে হাজির সেডান।

Advertisement

এ ভাবেই অন্য শহরে লাগা কলঙ্ক ঘুচিয়ে কলকাতার যান-জীবন মসৃণ করতে উদ্যোগী রেডিও ট্যাক্সি। দিল্লিতে ‘উবের’ ধষর্ণ-কাণ্ডের পরে রেডিও ট্যাক্সি নিয়ে ভয় তৈরি হয়েছিল সর্বত্র। কিন্তু কলকাতায় হলুদ ট্যাক্সির দৌরাত্ম্যের কাছে হার মেনেছে আতঙ্ক। নিত্য নতুন প্রযুক্তির মাধ্যমে বাড়তি নিরাপত্তার আশ্বাস দিয়ে শহরে এখন রীতিমতো রমরমা রেডিও ট্যাক্সির।

হাতের মুঠোয় স্মার্ট ফোন থাকলেই নিশ্চিন্ত। রাত যতই হোক, চলাফেরা সমস্যা নয়। অ্যাপ খুলে কয়েকটা টাচেই দেখে নেওয়া যায় আশপাশে ক’টা গাড়ি রয়েছে। সেই মতো পছন্দ করে ডেকে নেওয়া যাচ্ছে ঝকঝকে এসি গাড়ি। এসইউভি, সেডান, মিনি— রয়েছে সবই। কিছুক্ষণেই মিলছে গাড়ির নম্বর, চালকের নাম-সহ এসএমএস। নির্ধারিত সময়ে দোরগোড়ায় বাহন-সহ হাজির হয়ে যাচ্ছেন চালক। যাত্রা বাতিল বা সময় বদলানোও সম্ভব অ্যাপের মাধ্যমে।

Advertisement

নিয়মিত ট্যাক্সি-ঝঞ্ঝাট থেকে রক্ষা পেতে দেশ-বিদেশে নানা শহরে এখন রীতিমতো জনপ্রিয় এই ‘কল-আ-ক্যাব’ পরিষেবা। কলকাতা সেই তালিকায় নতুন সংযোজন। মেগা ক্যাব, মেরু ক্যাব, ওলা, উবের— শহরে চলাফেরা স্বচ্ছন্দ করতে উঠে এসেছে এমন নানা সংস্থা। বালাই চুকেছে চালকের সঙ্গে দর কষাকষিরও। অধিকাংশ সংস্থার গাড়ি চলাচল নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে জিপিএস-এর মাধ্যমে। নির্দিষ্ট সংস্থার দফতর থেকেই জিপিএস ব্যবহারে নজরে রাখা হচ্ছে প্রতিটি গাড়ি। যে রাস্তা ধরে যাচ্ছেন যাত্রী, সে অনুযায়ী যাত্রা শেষে বিল যাচ্ছে যাত্রীর মোবাইলে এসএমএসে অথবা ই-মেলে। কোনও সংস্থা সে টাকা কেটে নিচ্ছে যাত্রীর অ্যাকাউন্ট থেকে, কখনও চালকের হাতেই দিতে হচ্ছে বিল।

এতে মহিলাদের নিরাপত্তাও কিছুটা নিশ্চিত করা যাচ্ছে বলে মত অনেকের। গাড়ির নম্বর জানানো এসএমএসে সংস্থা থেকে দেওয়া হচ্ছে একটি জিপিএস লিঙ্ক। সেই এসএমএস পাঠানো যায় পরিজনেদের। প্রয়োজনে নির্দিষ্ট সংস্থার পাশাপাশি গাড়ির গতিবিধি নজরে রাখতে পারেন যাত্রীর পরিজনেরাও। এক আইটি সংস্থার কর্মী সুতপা রায় জানান, রাতে বাড়ি ফেরা এখন অনেকটা নিরাপদ। বলেন, ‘‘রাতে সেক্টর ফাইভ থেকে একা ট্যাক্সিতে রাজারহাট ফিরতে চিন্তাই হত। এখন বেরোনোর আগে অ্যাপ খুলে ট্যাক্সি ডাকি। গাড়িতে উঠে বয়ফ্রেন্ডকে শুধু এসএমএসটা ফরওয়ার্ড করি।’’ এই পরিষেবা শহরের মহিলাদের চলাফেরা অনেক সহজ করে দেবে বলে মনে করেন অভিনেত্রী পাওলি দামও। তাঁর বক্তব্য, এর পর থেকে গাড়ি ছাড়া চলতে হলে এমন ট্যাক্সিই ডাকবেন।

তবে কিছু ক্ষেত্রে রেডিও ট্যাক্সির ভাড়া সাধারণ হলুদ ট্যাক্সির তুলনায় খানিকটা বেশি। নানা সংস্থার ভাড়ার হিসেবও আলাদা। তা নিয়ে কি চিন্তিত নয় এখনকার টেক-স্যাভি যাত্রীরা?

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ঋক ঘোষের যুক্তি, ৩০-৪০ টাকার ফারাকে এত সুবিধে মিললে ক্ষতি কী? তিনি বলেন, ‘‘এমনিতে আজকাল অধিকাংশ সাধারণ ট্যাক্সি দিনের যে কোনও সময়েই মিটারের উপরে কুড়ি-তিরিশ টাকা বেশি চায়। সে জায়গায় এই সব সংস্থা ভাল গাড়ি দিচ্ছে। পেতেও ঝঞ্ঝাট পোয়াতে হচ্ছে না।’’

আগে রাতের দিকে কলেজ পড়ুয়া মেয়ে ট্যাক্সিতে কোথাও গেলে চিন্তায় থাকতেন এক নামী সংস্থার ইঞ্জিনিয়র হিল্লোল গঙ্গোপাধ্যায়। বলেন, ‘‘এখন কিছু অ্যাপ ডাউনলোড করে নিয়েছি। মেয়ে কোথাও গেলে ট্যাক্সি বুক করে দিই। খেয়াল রাখতে পারি কোন পথে নিয়ে যাচ্ছে ওকে। মেয়ের নিরাপত্তার জন্য এটুকু বেশি দেওয়াই যায়।’’

মহিলাদের নিরাপত্তার কথা ভেবে মে মাস থেকে কলকাতায় মহিলা চালিত ট্যাক্সিও চালু করবে মেগা ক্যাব। সংস্থার তরফে বিনোদ মিশ্র জানান, পুরুষ চালকের আচরণ নিয়ে অনেকে চিন্তিত থাকেন। তাই এ ভাবনা। উবের আবার জানাচ্ছে, এখন চাইলে গাড়িতে ওঠার আগে জেনে নেওয়া যায় তাদের চালকের সম্পর্কে জরুরি তথ্য। জরুরি পরিস্থিতিতে সংস্থার অ্যাপের মাধ্যমে পুলিশকেও যোগাযোগ করা যায়।

প্রতিযোগিতামূলক এই পরিস্থিতিতে ঘুরে দাঁড়ানোর দিশা খুঁজছে মিটার ট্যাক্সিও। শহরের বিভিন্ন ট্যাক্সিচালককে নিয়ে ‘নমস্তে ট্যাক্সি’ নামে চালু হচ্ছে নতুন পরিষেবা। সেখানকার নম্বরে ফোন করে ডেকে নেওয়া যাবে মিটার ট্যাক্সি। বেঙ্গল ট্যাক্সি অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক বিমল গুহর মতে, ‘‘এখনই নিজেদের আচরণ ঠিক না করলে মিটার ট্যাক্সির ভবিষ্যৎ অন্ধকার।’’ যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে রেজিস্ট্রেশনের আগে চালকের সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে প্রোফাইল তৈরির ভাবনা আছে তাদের।

তবে রেডিও ট্যাক্সির এই রমরমাও নির্মূল করতে পারেনি যাত্রী-ভোগান্তি। নতুন পরিষেবার সঙ্গে এসেছে নতুন ধরনের সম্যাও। যেমন সাত বছরের ছেলেকে নিয়ে শ্যামবাজার থেকে উত্তরপাড়ায় ফিরবেন বলে দিন পাঁচেক আগেই রেডিও ট্যাক্সি বলে রেখেছিলেন এক মহিলা। রাত সাড়ে দশটা নাগাদ আশার কথা গাড়ির। আধ ঘণ্টা অপেক্ষা করে অবশেষে সংস্থার কল-সেন্টারে ফোন করেন তিনি। তবে বারবার ফোনেও সমস্যা মেটেনি। দেখা মেলেনি গাড়ির। অন্য এক সংস্থার ট্যাক্সি বুক করে একই সমস্যায় পড়েন বেলুড়ের বাসিন্দা আর এক মহিলা। বারবার ফোন-পাল্টা ফোনেও মেলেনি গাড়ি। সমস্যা দেখা দিয়েছে নতুন বিলিং ব্যবস্থা নিয়েও। যোধপুর পার্কের বাসিন্দা রাজা মুখোপাধ্যায় বাবাকে নিয়ে আলিপুরে হাসপাতালে যাওয়ার সময়ে একটি রেডিও ট্যাক্সিতে ওঠেন। তাঁর অভিযোগ, ৮ কিলোমিটার রাস্তায় যাওয়ার জন্য বিল আসে ২৭ কিমি-র, ৪০২ টাকা। চালক জানান, তখনকার মতো বিল মিটিয়ে দিলে পরে তা ফেরত এসে যাবে যাত্রীর অ্যাকাউন্টে। সে টাকা এসেছে, তবে তার জন্য অন্তত বার কুড়ি ফোন এবং অ্যাপে অভিযোগ জানাতে হয়েছে রাজাবাবুকে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন