Kolkata Metro

সংক্রমণ বাড়ছে, মেট্রো ও রেলে হাজিরা কমানোর দাবি

Advertisement

ফিরোজ ইসলাম 

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৯ এপ্রিল ২০২১ ০৫:৫৩
Share:

কলকাতা মেট্রো ফাইল চিত্র

করোনা সংক্রমণের দ্বিতীয় ঝড়ে বেসামাল কলকাতা মেট্রো-সহ পূর্ব এবং দক্ষিণ-পূর্ব রেল। মাত্র সপ্তাহখানেকের মধ্যে টালিগঞ্জে মেট্রোর নিজস্ব তপন সিংহ মেমোরিয়াল হাসপাতালে শয্যার আকাল দেখা দিয়েছে। প্রতিদিন যে সংখ্যায় করোনার উপসর্গ নিয়ে রোগীরা আসছেন, তাতে সকলের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা কার্যত অসম্ভব বলে রেল সূত্রের খবর।

Advertisement

সপ্তাহখানেকের মধ্যে মেট্রোর কর্মী অথবা তাঁদের পরিবার নিয়ে প্রায় দেড় শতাধিক সংক্রমণের ঘটনা সামনে এসেছে বলে কর্মী ইউনিয়ন সূত্রের খবর। মেট্রোর বিভিন্ন স্টেশনের কর্মী ছাড়াও পার্ক স্ট্রিটের সদর কার্যালয়েও সংক্রমণের ঘটনা নজরে এসেছে। দমদম, বেলগাছিয়া, শ্যামবাজার, নেতাজি ভবন, কালীঘাট, টালিগঞ্জ-সহ একাধিক স্টেশনের বহু কর্মী আক্রান্ত। সংক্রমণ বাড়ছে আরপিএফ কর্মীদের মধ্যেও। অথচ মেট্রোর কর্মীদের প্রতিষেধক দেওয়ার কাজ গত শুক্রবার থেকে বন্ধ। স্টেশনের কর্মীদের বেশির ভাগের এখনও প্রতিষেধক দেওয়া বাকি।

মেট্রো সূত্রের খবর, গত এক সপ্তাহে মেট্রোয় যাত্রী যথেষ্ট বেশি ছিল। বিগত কয়েক দিনে মেট্রোয় গড়ে দৈনিক আড়াই লক্ষের বেশি যাত্রী সফর করেছেন। সকাল এবং সন্ধ্যার ব্যস্ত সময়ে ট্রেনের সংখ্যা বৃদ্ধি করা হলেও কামরায় ঠাসাঠাসি ভিড় চোখে পড়েছে। উপচে পড়া ভিড়কেই কার্যত বিপদের কারণ বলে মনে করছেন মেট্রোর কর্মীদের একাংশ। সফরের সময়ে মাস্ক পরা নিয়ে মেট্রোয় কড়াকড়ি বাড়লেও যাত্রীদের একাংশের এখনও বেপরোয়া মনোভাব রয়েছে বলেই অভিযোগ।

Advertisement

শিয়ালদহে পূর্ব রেলের অধীনস্থ বি আর সিংহ হাসপাতালেও রোগীর সংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। সেখানেও শয্যার সঙ্কট দেখা দিতে শুরু করেছে। খুব তাড়াতাড়ি সংক্রমণের হার নিয়ন্ত্রণের মধ্যে আনতে না পারলে ভেন্টিলেটর, অক্সিজেন-সহ চিকিৎসার নানাবিধ অত্যাবশ্যকীয় সামগ্রীরও আকাল দেখা দেবে বলে আশঙ্কা করছেন রেল কর্তৃপক্ষ। গার্ডেনরিচে দক্ষিণ-পূর্ব রেলেও পরিস্থিতি উদ্বেগ বাড়াচ্ছে। সপ্তাহখানেকের মধ্যে সেখানেও করোনা রোগীর সংখ্যা অনেকটাই বেড়ে গিয়েছে।

পরিস্থিতি সামাল দিতে দক্ষিণ-পূর্ব রেল কর্তৃপক্ষ সম্প্রতি কর্মীদের হাজিরা ৫০ শতাংশ পর্যন্ত বজায় রেখে কাজ চালানোর নির্দেশ জারি করেছেন। রোটেশন পদ্ধতি কাজে লাগিয়ে কর্মী এবং
আধিকারিকদের অফিসে হাজিরা কমানোর কথা বলা হয়েছে। যে সব কর্মী বা আধিকারিকের পরিবারের সদস্য আক্রান্ত, তাঁদেরও বাড়ি থেকে কাজ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সংক্রমণের মাত্রা বাড়তে থাকায় কলকাতা মেট্রো এবং পূর্ব রেলেও হাজিরা কমানোর দাবি
তুলেছে কর্মী সংগঠনগুলি। ট্রেনের সংখ্যা না কমিয়ে ট্র্যাফিক বিভাগের কর্মীদের কাজের সময় পরিবর্তিত করে এক সঙ্গে অনেক কর্মীর কাছাকাছি আসার পরিস্থিতি এড়ানোর দাবিও উঠেছে। এ দিকে দক্ষিণেশ্বর পর্যন্ত মেট্রোর পরিষেবা সম্প্রসারিত হওয়ায় কর্মীদের উপরে কাজের চাপ বেড়েছে। তাঁদের হাজিরা কমাতে গেলে স্টেশন বন্ধ রাখতে হবে। এই অবস্থায় স্টেশন-কর্মীদের স্বার্থে কলকাতা মেট্রোর প্রগতিশীল শ্রমিক কর্মচারী
ইউনিয়ন ফের ই-পাস চালুর দাবি জানিয়েছে। ওই ইউনিয়নের এক নেতা বলেন, ‘‘সংক্রমণ ঠেকাতে অবিলম্বে ব্যবস্থা না নিলে পরিষেবা ভেঙে পড়তে পারে। আমরা কর্তৃপক্ষের কাছে উপযুক্ত পদক্ষেপ করার দাবি করেছি।’’

ইস্টার্ন রেলওয়ে মেন্স ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক অমিত ঘোষ বলেন, ‘‘করোনার প্রথম ঢেউয়ের কারণে অনেক
রেলকর্মীকে হারাতে হয়েছে। এ বার সংক্রমণ ঠেকাতে উপযুক্ত ব্যবস্থা না নিলে পরিস্থিতি ভয়াবহ হবে। এর জন্য কর্মীদের উপস্থিতি কমানো জরুরি।’’ তবে, ট্রেনের সংখ্যা কমানোর পক্ষপাতী নন রেলকর্তারা। তাঁদের মতে, ট্রেনের সংখ্যা কমলে যাত্রীদের মধ্যে অস্থিরতা দেখা দিতে পারে। তাতে ভিড় নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে সমস্যা হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন