বৃষ্টিতে মাটি হয়ে গেল উৎসব মরসুম

কালীপুজোতেও খলনায়ক হল সেই বৃষ্টিই। তার উপরে উত্তর থেকে দক্ষিণ একাধিক রাস্তায় জমা জল দুর্ভোগে ফেলল দর্শনার্থীদের। যে সব পরিবারে ভাইফোঁটার আয়োজন করা হয়েছিল শুক্রবার, প্রতিপদ তিথিতে, ভোগান্তি হল সেই অনুষ্ঠানেও।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২১ অক্টোবর ২০১৭ ০১:৫২
Share:

অঝোর: মুষলধারে বৃষ্টিতে আবছায়া পথ। শুক্রবার, ই এম বাইপাসে। ছবি: দেশকল্যাণ চৌধুরী।

জলে গেল কালীপুজোর উৎসবও।

Advertisement

দুর্গাপুজোর আগে বৃষ্টির পূর্বাভাস ছিলই। ফলে অষ্টমী-নবমী দু’দিনই মণ্ডপমুখী শহরবাসীকে ভালই ভুগিয়েছিল বৃষ্টি।

এ বার কালীপুজোতেও খলনায়ক হল সেই বৃষ্টিই। তার উপরে উত্তর থেকে দক্ষিণ একাধিক রাস্তায় জমা জল দুর্ভোগে ফেলল দর্শনার্থীদের। যে সব পরিবারে ভাইফোঁটার আয়োজন করা হয়েছিল শুক্রবার, প্রতিপদ তিথিতে, ভোগান্তি হল সেই অনুষ্ঠানেও।

Advertisement

বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই শহরের বেশ কিছু জায়গায় আকাশের মুখ ভার ছিল। আবার কোথাও কোথাও দুয়েক পশলা বৃষ্টিও হয়েছিল। কিন্তু সন্ধ্যাতেই যে আলোর উৎসব ভেস্তে যাওয়ার আশঙ্কা সত্যি হবে, তা অনেকেই ভাবেননি।

উত্তর কলকাতার ঠনঠনিয়া কালীবাড়িতে এক হাতে পুজোর থালা আর অন্য হাতে ছাতা নিয়ে লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন গিরিশ পার্কের সৌমিতা রায়। জানালেন, প্রতি বছরই পুজো দিতে লম্বা লাইনে দাঁড়াতে হয়। কিন্তু এ বারে বৃষ্টির সঙ্গে ঝোড়া হাওয়ায় ছাতা দিয়েও মাথা বাঁচানো যাচ্ছে না।

অনেকে‌ আবার নতুন পোশাক পরে ঠাকুর দেখতে যাবেন বলে তৈরি হয়েছিলেন। কিন্তু বৃষ্টির সঙ্গে ঝো়ড়ো হাওয়ায় আর বেরোনো হয়নি। পাড়ার প্যান্ডেলেই বসে সময় কাটিয়েছেন। তবে এ বার কালীপুজোর রাতে সকলেরই মুখ ভার হয়েছে প্রদীপ জ্বালাতে বা ফানুস ওড়াতে না-পারায়। দক্ষিণ কলকাতার বাসিন্দা, বছর ছয়েকের খুদে আকাশ চক্রবর্তী সকাল থেকে পরিকল্পনা করেছিল দিদির সঙ্গে ফানুস ওড়াবে বলে। কিন্তু ঝোড়ো হাওয়া আর বৃষ্টি তাতে জল ঢেলে দেওয়ায় সন্ধ্যা থেকেই কাঁদো কাঁদো মুখে ঘরের কোণে বসেছিল সে।

আলোর রোশনাইয়ের উৎসবে ছোট-বড় সকলের মুখই এ ভাবে ভার হয়েছিল বৃহস্পতিবার। অনেকে ভেবেছিলেন পরের দিন অর্থাৎ শুক্রবার বৃষ্টি কমলে বেরোবেন। কিন্তু শুক্রবার সকাল থেকে ফের শুরু হয় প্রবল বৃষ্টি। তাই ঠনঠনিয়া থেকে
লেক শহরের বিভিন্ন কালীবাড়িতে বৃষ্টিতে ভিজেই ঠাকুর দর্শন করেছেন বেশির ভাগ মানুষ। রাস্তাতেও জল জমছে। ফলে পুজো উদ্যোক্তারাও সমস্যায় পড়েছেন।

বৃষ্টি এবং তার সঙ্গে ঝোড়ো হাওয়ায় বারাসত-মধ্যমগ্রামে কালীপুজোর ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। কোনও পুজোর মণ্ডপ ভেঙে পড়েছে, কোথাও ভেঙেছে গেট। বাদু রোডে একটি ওভারহেড গেট ভেঙে পড়ায় আহত হয়েছেন এক জন।

বৃহস্পতিবার রাত থেকে শুক্রবার পর্যন্ত পুরসভার হিসেব অনুযায়ী, বেলগাছিয়া, উল্টোডাঙা, মানিকতলা, যোধপুর, বালিগঞ্জ, চেতলা এলাকায় ভারি বৃষ্টিপাত হয়েছে। তার জেরে মহাত্মা গাঁধী রোড, আমহার্স্ট স্ট্রিট, গড়িয়া, বেহালা, শীলপাড়া, সখের বাজার এলাকায় হাঁটু সমান জল জমেছে।

উৎসবের দিনেও ভোগান্তি পিছু ছাড়েনি শহরবাসীর। এক দিকে উৎসবের মরসুমে রাস্তায় গাড়ির সংখ্যা কম। অন্য দিকে, জল জমার জেরে রাস্তায় বেরোনো গাড়িগুলির গতিও শ্লথ। তাই নাজেহাল হতে হচ্ছে দর্শনার্থী থেকে অফিসযাত্রী সকলকেই। ছাতা মাথায় কালীর দর্শন করতে এসে ঠিকমতো বাস বা গাড়ি না মেলায়, বাড়ি ফেরার চিন্তায় কপালে ভাঁজ পড়েছে অনেকের।

শনিবার ভাইফোঁটার দিনও কি নিম্নচাপের ভ্রূকুটি থাকবে, সেই আশঙ্কাতেই ভুগছে শহরবাসী।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন