ধরা পড়েও অভিযুক্তের জামিন, প্রশ্নে পুলিশ

বছর দুয়েক আগে পুলিশ পিটিয়েও এলাকায় বহাল তবিয়তেই ছিল সে। পুলিশ দাবি করেছিল, সন্ধান মিলছে না বলে তাকে গ্রেফতার করা যাচ্ছে না। মঙ্গলবার রাতে কেষ্টপুরের জগৎপুর এলাকায় একটি মারামারির ঘটনায় তাকে ধরলেও বুধবার বারাসত আদালতে জামিন পেল সে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১২ নভেম্বর ২০১৫ ০৩:১৮
Share:

বছর দুয়েক আগে পুলিশ পিটিয়েও এলাকায় বহাল তবিয়তেই ছিল সে। পুলিশ দাবি করেছিল, সন্ধান মিলছে না বলে তাকে গ্রেফতার করা যাচ্ছে না। মঙ্গলবার রাতে কেষ্টপুরের জগৎপুর এলাকায় একটি মারামারির ঘটনায় তাকে ধরলেও বুধবার বারাসত আদালতে জামিন পেল সে। অভিযুক্তের নাম রঞ্জিত বিশ্বাস। কেষ্টপুর, বাগুইআটি এলাকার ‘ত্রাস’ রঞ্জিত এলাকায় ব্যস্ত বাপি আর বুলেট বাপি নামেই পরিচিত।

Advertisement

বাপির বিরুদ্ধে প্রথমে অস্ত্র আইনে জামিনযোগ্য ধারায় মামলা করেছিল পুলিশ। তবে আদালত সূত্রে খবর, তার কাছে কোনও আগ্নেয়াস্ত্র পাওয়া যায়নি বলে এ দিন আদালতে জানায় বাগুইআটি থানার পুলিশ।

স্থানীয় সূত্রে খবর, এক সময়ে দমদম পার্কের এক সিপিএম নেতার ঘনিষ্ঠ ব্যস্ত বাপি ২০১১ সালে রাজনৈতিক পালাবদলের পরেই তৃণমূলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়ায়। বাগুইআটির যুব তৃণমূল নেতা বিশ্বজিৎ বিশ্বাসের (বাবাই) ডান হাত হয়ে ওঠে সে। অভিযোগ, সেই যুবনেতার ছত্রচ্ছায়ায় তোলাবাজি-সহ নানা দুষ্কর্মের অন্যতম চাঁই হয়ে ওঠে বাপি। ইদানীং হেলাবটতলায় রড-সিমেন্টের ব্যবসাও শুরু করেছে সে। স্থানীয় সূত্রে খবর, পুরভোটের দিন কৈখালির ৭ নম্বর ওয়ার্ডে বুথ দখলের চেষ্টা করতে গিয়ে কংগ্রেস সমর্থকদের হাতে মারও খেয়েছিল বাপি।

Advertisement

যদিও বিশ্বজিৎবাবুর দাবি, ‘‘অনেকেই যোগাযোগ রাখে। তবে আমি কারও অন্যায় কাজে প্রশ্রয় দিই না। আমরা চাই আইন আইনের পথে চলুক। বাপি কেন জামিন পেয়েছে, তা পুলিশ বলতে পারবে।’’

পুলিশ জানায়, কালীপুজোর রাতে জগৎপুরের একটি বাড়িতে হামলা চালায় কয়েক জন। মত্ত অবস্থায় তারা বাড়ির মালিক সুরজিৎ হালদার ও তাঁর স্ত্রীকে মারধরও করে বলে অভিযোগ। সুরজিৎবাবু বলেন, ‘‘কয়েক জন আমার বাড়িতে ইট ছুড়ছিল। প্রতিবাদ করায় তারা চড়াও হয়ে আমাদের মারধর করে। আমার মাথায় রিভলভারের বাট দিয়ে মারা হয়। বাঁচাতে এসে প্রতিবেশীরাও মার খান। রাতেই বাগুইআটি থানায় এফআইআর করি।’’ স্থানীয়েরা জানান, বাপি ধরা পড়লেও বাকিরা পালায়। বিধাননগর কমিশনারেটের গোয়েন্দাপ্রধান কঙ্করপ্রসাদ বারুই বলেন, ‘‘অভিযোগ ছিল রিভলবারের বাট দিয়ে মারা হয়েছে। তাই অস্ত্র আইনে মামলা হয়েছিল। তবে অস্ত্র না মেলায় আদালতে মামলা দাঁড়ায়নি।’’

পুলিশ জানায়, ২০১৩ সালে স্থানীয় বিধায়ক তথা রাজ্যের মন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসুর বাড়ি থেকে তাঁর রক্ষীর বন্দুক খোয়া যায়। সেই ঘটনায় এক সন্দেহভাজনকে ধরতে জগৎপুরে যান বিধাননগর কমিশনারেটের গোয়েন্দারা। অভিযোগ, সন্দেহভাজনকে ধরার পরে বাপি ও তার দল গোয়েন্দা দফতরের কনস্টেবলদের মারধর করে ওই সন্দেহভাজনকে ছিনিয়ে নিয়ে যায়। প্রহৃত এক কনস্টেবল বাপিদের বিরুদ্ধে এফআইআর করেন। কিন্তু সেই মামলা বিধাননগর কমিশনারেটেই কার্যত হিমঘরে চলে গিয়েছে বলে জানায় পুলিশ।

এই ঘটনায় বিতর্ক তৈরি হয়েছে পুলিশ মহলেই। পুলিশ আধিকারিকদের একাংশের প্রশ্ন, কেন বাপির বিরুদ্ধে পুলিশ পেটানোর পুরনো মামলা ফের চালু করল না বাগুইআটি থানা? উত্তরে গোয়েন্দা প্রধান মন্তব্য করতে চাননি। বিধাননগরের কমিশনার জাভেদ শামিম বলেন, ‘‘থানা পর্যায়ের ঘটনা আমার কাছে আসে না। আমি জানি না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন