বাড়ির কাছে ধর্ষিতাকে ক্ষুর দিয়ে আক্রমণ

প্রায় তিন মাস আগে তিলজলার বাসিন্দা এক তরুণী কিড স্ট্রিটের একটি পার্লারে গণধর্ষণের শিকার হন বলে অভিযোগ। ঘটনায় পুলিশ চার জনকে গ্রেফতার করলেও মূল অভিযুক্ত সীমা পরভিন এখনও অধরা। এ বার ওই তরুণীকে ক্ষুর দিয়ে আঘাত করার অভিযোগ উঠল তিন অজ্ঞাতপরিচয়ের বিরুদ্ধে

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ জানুয়ারি ২০১৯ ০২:১৩
Share:

—প্রতীকী ছবি।

ধর্ষিতা মহিলার উপরে নির্যাতন আর থামছে না!

Advertisement

প্রায় তিন মাস আগে তিলজলার বাসিন্দা এক তরুণী কিড স্ট্রিটের একটি পার্লারে গণধর্ষণের শিকার হন বলে অভিযোগ। ঘটনায় পুলিশ চার জনকে গ্রেফতার করলেও মূল অভিযুক্ত সীমা পরভিন এখনও অধরা। এ বার ওই তরুণীকে ক্ষুর দিয়ে আঘাত করার অভিযোগ উঠল তিন অজ্ঞাতপরিচয়ের বিরুদ্ধে। নির্যাতিতার অভিযোগ, শনিবার রাতে অফিস থেকে ফেরার সময়ে তাঁর বাড়ির কাছাকাছি ঘটনাটি ঘটে। আতঙ্কিত তরুণীকে রাতেই ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে তিলজলা থানার পুলিশ।

মামলা তুলে নেওয়ার জন্য তাঁকে লাগাতার হুমকি দেওয়া হচ্ছে বলে পুলিশের কাছে আগেই একাধিক বার জানিয়েছিলেন ওই তরুণী। তিনি জানান, দিন দুই আগে মোটরবাইকে আসা দুই অজ্ঞাতপরিচয় যুবক তাঁকে ধাক্কা মারে। হেলমেট পরে থাকা মোটরবাইক চালক ও আরোহী তাঁকে মামলা তুলে নেওয়ার জন্য চাপ দেয় বলেও অভিযোগ করেছিলেন তিনি। ওই ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই শনিবার রাত ন’টা নাগাদ বাড়ির কাছাকাছি আক্রান্ত হন ওই তরুণী। রবিবার তিনি বলেন, ‘‘প্রায় তিন মাস কাটতে চললেও পুলিশ আর এক অভিযুক্তকে এখনও ধরতে পারল না। বাড়িতে বৃদ্ধা মা ও বাচ্চা মেয়েকে নিয়ে থাকি। যা পরিস্থিতি, তাতে ওঁদের নিয়ে স্বাভাবিক ভাবে বেঁচে থাকাই মুশকিল হয়ে পড়ছে।’’ তাঁর আর্জি, ‘‘পুলিশকে আমার এখন একটাই অনুরোধ, মূল অভিযুক্তকে অবিলম্বে গ্রেফতার করুন।’’

Advertisement

শনিবার রাতে ঠিক কী হয়েছিল?

নির্যাতিতা মহিলার কথায়, ‘‘রাত ৯টা নাগাদ পার্ক স্ট্রিটের অফিস থেকে বাড়ি ফিরছিলাম। বাড়ির কাছাকাছি আসতেই বোরখা পরা তিন জন আমার দিকে এগিয়ে আসে। কিছু বুঝে ওঠার আগেই ওদের মধ্যে এক জন আমার ডান হাতে ক্ষুর দিয়ে আঘাত করে নিমেষে চম্পট দেয়। আমি চিৎকার করায় আশপাশের লোকজন ছুটে আসেন। কিন্তু ততক্ষণে তিন জনই পালিয়েছে।’’ বাসিন্দারা জানান, ওই তরুণীর ডান হাত থেকে ফিনকি দিয়ে রক্ত বেরোচ্ছিল। তাঁরাই তাঁকে উদ্ধার করে ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন। পরে তিলজলা থানায় খবর দেওয়া হলে পুলিশ এসে ওই তরুণীর বয়ান নেয়।

পুলিশ সূত্রের খবর, তিলজলা থানা এলাকার বাসিন্দা বছর বাইশের ওই তরুণীর অভিযোগ, রিনা নামে তাঁর পরিচিত এক মহিলা গত ২৪ অক্টোবর তাঁকে ভাল কাজ পাইয়ে দেওয়ার নাম করে কিড স্ট্রিটের একটি পার্লারে নিয়ে যায়। সে দিনই গুড্ডু ও শাকিল নামে দুই যুবক পার্লারের ভিতরে নিয়ে গিয়ে তাঁকে ধর্ষণ করে। ঘটনার সময়ে সেখানে উপস্থিত ছিল সীমা ও পার্লারের মালিক নগেন্দ্র। তারা মোবাইলে ধর্ষণের ভিডিয়ো তোলে। ওই তরুণীর আরও অভিযোগ, ধর্ষণের পরে তাঁকে হুমকি দেওয়া হয়, পার্ক স্ট্রিট থানায় নালিশ জানাতে গেলে ওই ভিডিয়ো সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দেওয়া হবে।

তরুণী পুলিশকে জানিয়েছেন, গত ২৬ অক্টোবর ফের রিনা তাঁকে ফোন করে এবং কাজে যাওয়ার জন্য চাপ দেয়। কাজে না গেলে তাঁর শিশুকন্যাকে মেরে ফেলারও হুমকি দেয়। বাধ্য হয়ে তিনি কিড স্ট্রিটের পার্লারে গেলে আবার তাঁকে ভিডিয়ো ফাঁস করার ভয় দেখিয়ে গণধর্ষণ করা হয় বলে অভিযোগ। তার পরের চার দিনও তাঁকে ভয় দেখিয়ে পার্লারে নিয়ে গিয়ে একাধিক বার ধর্ষণ করা হয়েছে বলে অভিযোগে জানিয়েছেন তরুণী। এর পরে ভয়ে ও আতঙ্কে নির্যাতিতা ওই পার্লারে যাওয়া বন্ধ করে দেন।

তার পরেও অত্যাচার বন্ধ হয়নি। গত ১৮ নভেম্বর রিনা তাঁকে ফোন করে ভয় দেখাতে শুরু করে। সীমা তাঁর বাড়ি গিয়েও চড়াও হয়। আতঙ্কে ওই তরুণী চার দিন ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ও শিয়ালদহ স্টেশনে রাত কাটান। শেষমেশ বাড়ি ফিরে ২৩ নভেম্বর তিলজলা থানায় পাঁচ জনের বিরুদ্ধে গণধর্ষণের অভিযোগ দায়ের করেন।

তিলজলা থানার পুলিশ চার জনকে গ্রেফতার করলেও সীমা এখনও ফেরার। তিন মাস পেরোতে চললেও তাকে কেন গ্রেফতার করা যাচ্ছে না? পুলিশের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘মহিলা শনিবার রাতে আক্রান্ত হয়েছেন। আমরা অভিযোগ পেয়েছি। সীমার খোঁজে তল্লাশি চলছে।’’ যদিও কলকাতা পুলিশের ডিসি (দক্ষিণ-পূর্ব) কল্যাণ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ঘটনাটি আমি জানি না। খোঁজ নিয়ে দেখতে হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন